প্রতিবেদন : দেশে হিন্দুত্ববাদের ধ্বজা ওড়াতে ফের কোপ শিক্ষাক্ষেত্রে। এবার স্নাতক স্তরের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠক্রম থেকে বাদ পড়তে চলেছে উর্দু কবি মহম্মদ ইকবালের জীবনী। প্রস্তাব দিয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিভাজনের নীতির প্রতিফলন এই সিদ্ধান্তে বেআব্রু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-ঋতুযাপন
উর্দু কবি ইকবালের লেখা ‘সারে জঁহা সে অচ্ছা, হিন্দুস্তা হামারা’ গানটি আজও দেশপ্রেমের জাগরণে জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে সমাদৃত। তাই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে ইকবালের জীবনী বাদ পড়ার প্রস্তাবে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই প্রস্তাবের পিছনে রয়েছে মোদি সরকারের চরম হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা ও শিক্ষাক্ষেত্রে গেরুয়াকরণের চাপ। বিজেপির মদতেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের রিমোট আছে, ইভিএমের বোতাম আছে আপনাদের : অভিষেক
উল্লেখ্য, এর আগে এনসিইআরটি দ্বাদশ শ্রেণির পাঠক্রম থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বাদ দেওয়া হয়েছিল। বাদ গিয়েছিল ডারউইনের মতবাদ। বাদ দেওয়া হয় গান্ধীজির মৃত্যুর ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের যোগসাজশের ঐতিহাসিক তথ্য, নরেন্দ্র মোদির আমলে গুজরাত দাঙ্গা এমনকী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের জীবনীও। হিন্দুবাদীদের বিকৃত ইতিহাসচর্চার ফতোয়া জারির বিরুদ্ধে গোটা দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তার পরেও হেলদোল নেই নির্লজ্জ বিভাজনবাদীদের।
আরও পড়ুন-প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত দিল্লি
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ পেপারে ‘মডার্ন ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল থট’ শিরোনামের অধ্যায়ে রয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় কবি ইকবালের প্রসঙ্গ। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ঠিক হয়, ইকবালের জীবনী ছাত্রছাত্রীদের আর পড়ানো হবে না। বোর্ডের এক সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইকবালকে পাকিস্তানের দার্শনিক পিতা বলা হয়। ভারতভাগের ক্ষেত্রে ইকবালেরও ভূমিকা ছিল। সেই কারণেই ইকবালের জীবনী বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। শুক্রবারের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এরপর সেটি পাঠানো হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের কাছে। আগামী ৯ জুন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিকাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, শুক্রবার কাউন্সিলের বৈঠকে পাঠক্রম পরিবর্তন ও বিভিন্ন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। মহম্মদ ইকবালের জীবনী সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবও আনা হয়েছে। যদিও এরকম খণ্ডিত ইতিহাসচর্চায় আখেরে পড়ুয়াদেরই ক্ষতি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
আরও পড়ুন-মোদির রাজ্যে বেহাল দশা শিক্ষাব্যবস্থার, ১৫৭টি স্কুলে পাশ করল না কেউ
১৮৭৭ সালে অবিভক্ত ভারতের শিয়ালকোটে (বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত) জন্মগ্রহণ করেন উর্দু কবি ইকবাল। দেশভাগের পরেও দুই দেশেই কবি ইকবালের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ ছিল। মূলত উর্দু ভাষায় সাহিত্যচর্চা করলেও ফার্সি ভাষাতেও রয়েছে কবির অসামান্য কিছু সৃষ্টি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ইকবালের প্রশংসা করেছেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে দিয়েছে জাতীয় কবির মর্যাদা। সেই কবির জীবনী বাদ পড়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এই সিদ্ধান্তের জন্য মোদি সরকারের দিকে আঙুল তুলছেন সকলেই। অভিযোগ, কবি ইকবাল মুসলিম সম্প্রদায়ের বলেই তাঁর জীবনী বাদ দিতে চলেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে হিন্দুত্ববাদের ধ্বজা ওড়ানোই একমাত্র লক্ষ্য এই সরকারের।