প্রতিবেদন : এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জ্বলছে মণিপুর। দুই জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ঘটছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে দেখেও প্রকৃত ঘটনা এড়াতে তৎপর কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার। চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতায় এই পাহাড়ি রাজ্যে হিংসার আগুন ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে। এখনও পর্যন্ত হিংসার বলি হয়েছেন ৭৫ জন। যদিও বেসরকারি মতে সংখ্যাটা আদতে অনেক বেশি। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা চাপা হচ্ছে। দেশের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ ও সেনাপ্রধান বলছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন-‘এত ভয় কীসের’ মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এরই মধ্যে মঙ্গলবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানান, মণিপুরে শান্তি ফেরানোর আর্জি নিয়ে তিনি সে-রাজ্যে যেতে চেয়েছিলেন। মণিপুরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি সোমবারই চিঠি পাঠান। পাহাড়ি রাজ্যে শান্তি ফেরাতে তিনি সেখানকার শান্তিপ্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চান। এই মুহূর্তে মণিপুরে সেনা মোতায়েন থাকায় রীতি মেনেই তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে তাঁর আর্জির কথা জানিয়ে চিঠি দেন। মঙ্গলবার তৃণমূলনেত্রীর দাবি, তাঁর চিঠির পরই টনক নড়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে তিনি মণিপুরে যাওয়ার সময় পেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, শান্তি ফেরাতে অনেক আগেই অমিত শাহের মণিপুর যাওয়া উচিত ছিল। এতদিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার সময় হল। আমি চিঠি পাঠানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মণিপুর গেলেন। এতদিন কী করছিলেন? তৃণমূলনেত্রীর কটাক্ষ, শাহ ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা তো সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না!
আরও পড়ুন-‘যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে জনতার দরবারে লড়াই হোক’ অধিকারী পরিবারকে নিশানা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এরই মধ্যে মণিপুরের পরিস্থিতি শান্ত করার দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন একদল ক্রীড়াবিদ। মীরাবাই চানু থেকে শুরু করে ১১ জন অলিম্পিক পদক জয়ী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব পদক ফেরানোর হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের সাফ কথা, দ্রুত শান্তি ফেরানোর ব্যবস্থা করা না হলে তাঁরা তাঁদের পদক ফিরিয়ে দেবেন।
বিস্ফোরক সিডিএস ও সেনাপ্রধান: অমিত শাহর সফরের মধ্যেই মণিপুর নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি শান্ত হতে আরও সময় লাগবে। পাল্টা অভিযান করে সেখানে কোনও কাজ হবে না। সিডিএসের এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবেই শাহর অস্বস্তি বাড়াবে। কারণ প্রকৃত পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার। সিডিএসের মতোই প্রায় একই কথা বলেছেন মণিপুরে থাকা সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে। তিনি জানিয়েছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি এখনও অনুকূল নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় ও আলোচনা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন-‘গতকালই আমি নিশ্চিত করেছি আমি যাব’ পাটনায় বিরোধী জোটের বৈঠক প্রসঙ্গে জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক: মণিপুরের মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ায় রাজ্যকে কীভাবে শান্ত করা যায় তার পরিকল্পনা করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পা রেখেছেন ইম্ফলে। রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে তিনি প্রশাসনিক বৈঠক সারেন। শাহ মঙ্গলবার যান উপদ্রুত চূড়াচাঁদপুর জেলায়। সেখানে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
উত্তর-পূর্বের সংস্কৃতি বোঝে না বিজেপি: তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ এবং উত্তর-পূর্বের নেত্রী সুস্মিতা দেব বলেছেন, এর আগে অসম ও মিজোরামের মধ্যে যখন সীমানা নিয়ে সমস্যা হল তখন গুলি চলল। সে সময় উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়নের জন্য তৈরি নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স নামে তৈরি মঞ্চ আদৌ কোনও কাজে আসেনি। শুধুমাত্র ভোট এলেই ওই মঞ্চের সদস্যদের দেখা যায়। উত্তর-পূর্বের ৮ রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে তাদের আদৌ কোনও পরিকল্পনা নেই। উত্তর-পূর্বের যে একটি পৃথক সংস্কৃতি ও পরম্পরা রয়েছে সেটা বিজেপি এবং আরএসএস বোঝে না। সেই কারণে তারা সরকার গড়লেও পরিষেবা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি : মণিপুরে শান্তি ফেরানো-সহ ১২ দফা দাবি জানাতে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল।
সাহায্যের আশ্বাস : এদিন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, মণিপুরে হিংসার বলি প্রতিটি পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। প্রতি পরিবার থেকে একজনকে দেওয়া হবে চাকরি।