দেশের শিক্ষার মান তলানিতে নিয়ে যেতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক কার্যকলাপ বাস্তবায়িত করে চলেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)। গত মাসে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম থেকে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনের তত্ত্ব বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এনসিইআরটি। এবার দশম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম থেকে পর্যায় সারণি বা পিরিয়ডিক টেবিলের অধ্যায়টাও বাদ যাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানী ও শিক্ষকরা।
পর্যায় সারণির মতো বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং ইতিহাসে গণতন্ত্র সম্পর্কে অধ্যায় মুছে ফেলা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় সিদ্ধান্ত। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটা এভাবেই শেষ করে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকার। এটা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র শামা মহম্মদ বলেছেন, দেশের পড়ুয়ারা আর বিবর্তনবাদ, পর্যায় সারণি, শক্তির উৎস এবং পরিবেশের ভারসাম্য সম্পর্কে জানতে পারবে না। পড়ুয়াদের পক্ষে এটা চরম ক্ষতি। নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি ভারতকে পুরনো প্রস্তর যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চালাচ্ছে।
প্রথম দিকে এনসিইআরটি জানিয়েছিল, করোনা মহামারীর কারণে এই অধ্যায়গুলি অস্থায়ীভাবে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে এনসিইআরটি সাময়িক বাদ দেওয়াটা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এনসিইআরটির এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধুমাত্র যে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার শেষ দুই বছরে (বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে) রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করবে তারাই পর্যায় সারণি সম্পর্কে শিখবে। পাশাপাশি ছাত্ররা যদি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসাবে রসায়ন বেছে নেয় এই তাহলে তারা পর্যায় সারণি শিখতে পারবে। উল্লেখ্য, এনসিইআরটি চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের অধ্যায়টি পাকাপাকিভাবে বাদ দিয়েছে। ওই অধ্যায়ে পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি, মানুষের বিবর্তন এবং বংশগতির মতো বিষয়গুলি ছিল।
আরও পড়ুন- ‘লড়াই ছেড়ো না, পাশে আছি’, দিল্লির ‘নন্দলাল সরকার’কে কড়া বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
পর্যায় সারণির মতো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ায় বিজ্ঞানী এবং শিক্ষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, পর্যায় সারণি রসায়ন শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। দশম শ্রেণির সিলেবাস থেকে বিষয়টি বাদ দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় রাসায়নিক নীতিগুলি উপলব্ধি করতে পারবে না। অন্যদিকে, ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব হল জীববিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা। যা শিক্ষার্থীদের পৃথিবীতে প্রাণের আন্তঃসংযোগ এবং বৈচিত্র বুঝতে সাহায্য করে। এই অধ্যায়টি বাদ পড়ায় পড়ুয়ারা জটিল প্রক্রিয়াগুলি বোঝার ক্ষমতা হারাবে।
এনসিইআরটি-র তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছে, পড়ুয়ারা চাইলে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে এই বিষয়গুলি পড়তে পারবে। কিন্তু যে পড়ুয়ারা মাধ্যমিক কিংবা সমতুল কোনও পরীক্ষার পর বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে না, তারা পর্যায় সারণির মতো বিষয় সম্পর্কে কেন জানতে পারবে না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।