মণীশ কীর্তনিয়া, নন্দীগ্রাম: আজকের ঐতিহাসিক পদযাত্রা বাংলার রাজনীতিতে দিশা দেখাবে। এই পদযাত্রা থেকে যে ধর্মের দূষণ বিজেপি নিয়ে এসেছে তা বিসর্জন দেব। ২০ কিলোমিটার পদযাত্রার শেষের আগে নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া মোড়ে জনসমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বললেন, আজ ট্রেলার দেখালাম, তিন মাস বাদে আবার আসব, তখন সিনেমা দেখাব। তাঁর সংযোজন, এই বছর পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন হবে। সবক’টাতে গো-হারা হারবে, লিখে রাখুন।
আরও পড়ুন-ইডি-সিবিআই তো অনেক হল, ৯ বছরে দেশ কী পেল?
২০০৭ সালে এই নন্দীগ্রাম বাংলার দিশা বদলে দিয়েছিল। কত মানুষ মারা গিয়েছেন। এখনও কত নিখোঁজ। তবুও নন্দীগ্রাম বশ্যতা স্বীকার করেনি। আজ এই পদযাত্রা প্রমাণ করল আগামী দিন বাংলার রাজনীতি দূষণমুক্ত হতে চলেছে। এখানে অশান্তি করা গদ্দারদের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে চলেছে। যাকে দেখছি সে বলছে, গদ্দারদের তাড়াতে হবে। তাড়াব। দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। ভোটের বাক্সে বুঝে নিতে হবে। গদ্দারদের বলব, যদি ক্ষমতা থাকে রাত ৯.১০ বাজে। এখন এই জনসমর্থন নিয়ে এরকম করার। বলা হত নন্দীগ্রামের মাটি অধিকারীদের শক্ত ঘাঁটি। এখন বলি, নন্দীগ্রামের মাটি তৃণমূলের ঘাঁটি। বিজেপি কিছু করলে এখানে তাদের বাড়ি ঘেরাও করুন। ওরা এরপর বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না। বিজেপির মেয়াদ আর একবছর। আগামী দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিতে হবে। বাংলার প্রাপ্য আটকে রেখেছে। দিল্লি যাব। প্রাপ্য ছিনিয়ে আনব। এখান থেকে পঞ্চাশ হাজার মানুষ যাবে। নন্দীগ্রাম গদ্দার-বেইমানদের ভূমি নয়। এই ভূমি দিল্লির কাছে মাথা নত করবে না। এই পদযাত্রা থেকে যে ধর্মের দূষণ বিজেপি নিয়ে এসেছে তা বিসর্জন দেব। গদ্দার ভয় দেখালে এখানে আপনারা ওকে ঘিরে নেবেন। ঘিরে রেখে আমাকে ফোন করবেন। ওর কনভয়ে একটা ছেলে মরে গেল। একবার ফিরে তাকায়নি। আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে গদ্দারদের তাড়াতে হবে। অভিষেক স্লোগান তোলেন, গদ্দার হঠাও- মিরজাফর হঠাও, নন্দীগ্রাম বাঁচাও।
আরও পড়ুন-মোবাইকে হাসপাতালে
বাংলা যেমন নিজের মেয়েকে চায়, তেমনি পূর্ব মেদিনীপুর-নন্দীগ্রামও গদ্দার মুক্ত হতে চায়। পদযাত্রা প্রমাণ করে দিল, কাল নির্বাচন হলে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ারের ২০ কিলোমিটার পদযাত্রায় এই জেলার মানুষ তাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি-উচ্ছ্বাস-ভালবাসা-আবেগ দিয়ে বুঝিয়ে দিল আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে দলবদলু গদ্দারদের কোনও জায়গা নেই। মানুষের স্বার্থবিরোধী বিজেপির কোনও জায়গা নেই। লোডশেডিং করে অন্ধকারে কারচুপি করে জেতা লোডশেডিং বিধায়কের কোনও জায়গা নেই। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে দুপুরের অস্বাভাবিক গরম আর রোদ মাথায় নিয়ে সাড়ে তিনটেয় যখন হাঁটা শুরু করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই চণ্ডীপুরের মানুষ বুঝিয়ে দিলেন পূর্ব মেদিনীপুরে হাওয়া ঘুরে গিয়েছে। সেই প্রবল ভিড়টা চলতে শুরু করল অভিষেকের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে। চণ্ডীপুর ছাড়িয়ে নন্দীগ্রামে মহামিছিল ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে যেন জনসুনামি আছড়ে পড়ল মিছিলে। থমকালেন অভিষেক। মিছিল গুছিয়ে নিতে খানিক সময় দিতেই হল ভিড়ের চাপ সামলাতে। তুমুল স্লোগান উঠছে মুহুর্মুহু, গদ্দার হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও।
আরও পড়ুন-গদ্দারকে জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস
গদ্দার হঠাও পূর্ব মেদিনীপুর বাঁচাও। তার আগে রেয়াপাড়া, যেখানে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আস্তানা গেড়েছিলেন, সেই অঞ্চলের মানুষ এমনিতেই আবেগমথিত নেত্রীর স্মৃতিচারণায়। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও দ্বিগুণ। এরই মাঝে হাঁসছড়া মোড়ে প্রতিবন্ধী শিল্পী পুতুল চিত্রকর অভিষককে কাছে পেয়ে হুইল চেয়ারের আবেদন করলেন। অভিষেক জানালেন, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। নন্দীগ্রামের একটি জায়গায় কাজু কারখানার শ্রমিকরা তাঁদের দাবি-দাওয়া জানালেন। অভিষেক শুনলেন সবটা মন দিয়ে। বললেন, চিন্তা করবেন না।
আরও পড়ুন-নবজোয়ারে অভিনন্দন
দীর্ঘ পদযাত্রা চলছে। আট থেকে আশি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। স্বতঃস্ফূর্ত আওয়াজ উঠছে, জয় বাংলা। একে কী বলবেন! এ হল আগামী নির্বাচনগুলির আগে মানুষের নীরব রায়। পূর্ব মেদিনীপুর নিজের মেয়েকেই চায়। পূর্ব মেদিনীপুর মিরজাফরকে চায় না। পদযাত্রার মধ্যে প্রায়ই থমকাতে হচ্ছে। মানুষের নানা দাবি শুনছেন। সাধ্যমতো সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। নন্দীগ্রাম প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিল কাল ভোট হলে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন-স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স
১০০ দিনের বকেয়া টাকা যতদিনে ফিরবে না ততদিন আন্দলোন থামবে না। তৃণমূলে নবজোয়ার, উন্নয়ন হবে সবার। নবজোয়ারের কর্মসূচিতে ক্রমাগত বেজে চলা এই গানের প্রতিটি শব্দ বাস্তবেও একই রকম সত্যি। বুঝিয়ে দিল নন্দীগ্রাম। ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ক্লান্তিহীন পদযাত্রায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের মন জয় করে নিলেন। পেলেন দ্বীধাহীন অকুণ্ঠ জনসমর্থন। তিনিও কথা দিলেন, আন্দোলনের এই পবিত্র মাটিতে তিনি ফিরে আসবেন বারবার। পদযাত্রা শেষে নন্দীগ্রামের ক্যাম্পে এসে শহীদ পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।