মণীশ কীর্তনিয়া, তমলুক: দুর্নীতিকে তিনি যে একমুর্হূত বরদাস্ত করবেন না তা শুক্রবার আবারও বুঝিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তমলুকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ পাওয়ামাত্র রাতেই তাঁকে সরিয়ে দেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ আসার ১ ঘণ্টার মধ্যে তমলুকের বিডিওর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন পঞ্চায়েত প্রধান মানসী দাস। এই পঞ্চায়েতেরই উপপ্রধান সুকুমার নায়েকের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আসে অভিষেকের কাছে। কড়া ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন-করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৩৩, চলছে উদ্ধারকাজ, ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব
বেশি রাতে গ্রেফতার উপপ্রধান। মানুষের মন জয় করে গণতান্ত্রিকভাবে আগামী নির্বাচনগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বাড়বে বলেই বিশ্বাস অভিষেকের। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিজেপির দিকে যাওয়া ভোট ফিরছে তৃণমূল কংগ্রেসে। শুধু তা-ই নয়, ভোটও বাড়তে চলেছে দলের। এই জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে যে জনসুনামি হয়েছে, বিশেষ করে বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের পদযাত্রায়, তাতে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা তৃণমূল কংগ্রেসকেই চায়। অন্য কোনও বিভেদকামী শক্তিকে নয়। আগামী নির্বাচনে গদ্দারমুক্ত করতে চায় পূর্ব মেদিনীপুর-নন্দীগ্রাম মানুষ।
আরও পড়ুন-১ জুলাই থেকে কলেজে ভর্তি
বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও নন্দীগ্রামের ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে নন্দকুমার-মহিষাদল-ময়নায় রোড শো করেন অভিষেক। রোজকার মতো এদিনও সাধারণ মানুষ তাঁদের নানা অভাব-অভিযোগ জানান। এভাবেই মহিষাদল থেকে ময়নায় আসার পথে পদামপুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরিকপুর গ্রামে (তমলুক ব্লক) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পঞ্চায়েত প্রধান মানসী দাসের নামে অভিযোগ জানান। গ্রামবাসীরা বিশেষ করে মহিলারা অভিযোগ করেন, মানসী দাস গ্রামের মানুষের কথা শোনেন না। দুর্ব্যবহার করেন। কোনও কাজ করেন না। মানুষ তাঁর কাছে কোনও কাজ নিয়ে গেলে তাঁদের ফিরে আসতে হয়। এই খবর জেনে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। জানা গিয়েছে, মানুষের অভিযোগ পাওয়ার পর শুক্রবার রাতেই মানসী দাসকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের কাজ না করলে দল যে কাউকে রেয়াত করবে না এই কড়া পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আরও একবার তা বুঝিয়ে দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন-ডায়ালে মোবাইল
এদিন নন্দীগ্রামের ক্যাম্প থেকে বেরোনোর আগে একান্ত আলাপচারিতায় অভিষেক বলেন, বিজেপির শেষের শুরুটা শুরু হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবারের পদযাত্রায় নন্দীগ্রাম প্রমাণ করে দিয়েছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মানুষের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন হয়নি। মানুষকে ভয় দেখানো হয়েছিল। না হলে ফল অন্যরকম হত। ভোটে কারচুপি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বোঝা গিয়েছে নন্দীগ্রামের মানুষ নিঃশব্দ বিপ্লব করে দিয়েছে। মানুষ কিন্তু এখন আর গদ্দারদের চাইছে না। বিজেপিকে চাইছে না। তা না হলে রাত ১০টার সময় টেঙ্গুয়া মোড়ে লক্ষাধিক মানুষের ওই জনবিস্ফোরণ হয় না।
আরও পড়ুন-বনগাঁয় নবজোয়ার যাত্রার প্রস্তুতি
বৃহস্পতিবারের পদযাত্রায় জনবিস্ফোরণ দেখে উচ্ছ্বসিত নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতেই ফোন করেন অভিষেককে। খবর নেন নন্দীগ্রামের মানুষের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নিয়ে। প্রবল গরমে ২০ কিলোমিটার পদযাত্রার পর তাঁর শরীর কেমন আছে সে-কথাও জিগ্যেস করেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নিয়ে মোট ১৫টি জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচি হল। আর হাতে গোনা কয়েকটি জেলা রয়েছে। নবজোয়ার কর্মসূচি শেষ হবে আগামী ১৬ জুন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হবে জনসভা। শুক্রবার নন্দকুমার-মহিষাদল-ময়নায় রোড শো করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যথারীতি সব ক’টি জায়গাতেই ছিল মানুষের ঢল। রাতে অধিবেশন হয় কোলাঘাটে।