প্রতিবেদন : মণিপুরে অশান্তির আগুন নেভার কোনও ইঙ্গিত নেই। উত্তর-পূর্বের বিজেপি শাসিত এই পাহাড়ি রাজ্য কার্যত জঙ্গি ও দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। রবিবার রাজ্য জুড়ে একতা দিবস পালন করার কথা থাকলেও রাজ্যের একাধিক জেলায় হিংসাত্মক ঘটনার খবর মিলেছে। চূড়াচাঁদপুর জেলা-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গুলি চালানো ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গিয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হয়েছেন এক সেনা জওয়ান। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে অশান্তির খবর মিলেছে ইম্ফল পশ্চিম এবং কাংপোকপি জেলা থেকেও।
আরও পড়ুন-আবার জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব
রবিবার রাতে সবচেয়ে বেশি হিংসার খবর মিলেছে ইম্ফল পশ্চিম জেলার চিংমাং গ্রাম থেকে। এই গ্রামেই টহলদারি জওয়ানদের লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জওয়ানকে লেইমাখং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে দুষ্কৃতীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। সেনাবাহিনী যখন আগুন নেভানোর কাজ চালাচ্ছিল সে সময় তাদের উপর গুলি চলে। পাশাপাশি কাংপোকপি জেলার একটি অঞ্চলে দুটি সরকারি ভবনেও আগুন লাগিয়ে দেয় কুকি জঙ্গিরা। অন্যদিকে কুকি অধ্যুষিত হেংজাং গ্রামেও রবিবার মধ্যরাতে বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগানোর খবর মিলেছে।
আরও পড়ুন-মাননীয় রাজ্যপাল কি গোঘাটের এই ঘটনা দেখতে পাচ্ছেন, মনোনয়ন তুলতে তৃণমূলপ্রার্থীকে মার
দেড় মাস ধরে চলা হিংসায় মণিপুরে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ। গৃহহীন হয়েছেন ৫৪ হাজারেরও বেশি। মণিপুরে মৃত্যু মিছিল এখনও অব্যাহত। দেশের প্রাক্তন এক সেনাকর্তা মণিপুরের পরিস্থিতিকে সিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ রাজ্যে শান্তি ফেরাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল মণিপুরে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে যুযুধান দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি মোদি সরকার। সামান্য কারণে অবিজেপি রাজ্যগুলিতে হামেশাই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে থাকে মোদি সরকার। অথচ মণিপুরে দেড় মাস ধরে চলা হিংসাত্মক ঘটনার পরেও এখনও পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হয়নি।
আরও পড়ুন-বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বোমা ফেটে আহত ৫ শিশু
উত্তর-পূর্বের এই পাহাড়ি রাজ্যে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা জাতিদাঙ্গা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বা তার প্রধান নরেন্দ্র মোদি একটি কথাও বলছেন না। মণিপুরে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে ডবল ইঞ্জিন সরকার একটি ছোট্ট রাজ্যের পরিস্থিতি সামাল দিতেও ব্যর্থ। এবার কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিল গেরুয়া দলের পথ প্রদর্শক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। সংঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে বলেছেন, দেড় মাস ধরে মণিপুরের যে হিংসা চলছে তা খুবই উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাকে আরও সক্রিয় হতে হবে। সরকারের উচিত এ-ধরনের হিংসা বন্ধ করতে অবিলম্বে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া। সংঘ পরিবারের এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবেই মোদি সরকারের রক্তচাপ বাড়াবে।