একসময় ছিল লালদুর্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে সেই পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে সবুজের সামিয়ানা। জেলার ১৬ বিধানসভাই তৃণমূলের দখলে। তাই সার্বিকভাবে এবং আক্ষরিক অর্থে উন্নয়নও ক্রমবর্ধমান। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জেলার উন্নয়নের খতিয়ান।
সামাজিক প্রকল্প : জেলার ১২ লাখের উপর মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছেন। কৃষকবন্ধু প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন ৫,৫১,৪২৯ জন কৃষক। খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধে মিলছে ৪৭,৫৭,৭২৩ জনের। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত রয়েছে ১৪,৯৪,৭৯৯ জনের। কন্যাশ্রী প্রকল্পে বর্তমান অর্থবর্ষে ৮৭,৯৩৬ জনকে অর্থসাহায্য করা হয়েছে। ২০২০-২১-এ করা হয়েছে ১,৩৫,০৮৫, ও ২০২১-২২-এ ১,২৮,১৬৯ জনকে। রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন ৫৯,৮৫১ জন। ঐক্যশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ১৯,৯৪,০০০। বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মহিলারা বাড়তি রোজগার করছেন।
আরও পড়ুন-উন্নয়নে নজর কাড়ছে জলপাইগুড়ি জেলা
পানীয় জল : জেলার সর্বত্র ‘জলজীবন মিশন’ প্রকল্পে ২০২৪ সালের পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য ২৫৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে ইতোমধ্যে ৪ লক্ষ ১০ হাজার পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
রাস্তাঘাট : পথশ্রী ও রাস্তাশ্রী প্রকল্পে জেলা জুড়ে ৮৭২ কিমি রাস্তার কাজ শেষ পর্যায়ে। এই প্রকল্পে মহকুমাপিছু খতিয়ান এরকম— বর্ধমান উত্তরে হয়েছে ১৭২টি রাস্তা। মোট ২৩০ কিমি, যার জন্য খরচ ৭৫ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। বর্ধমান দক্ষিণে ১৪৮টি রাস্তার জন্য খরচ ৯১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। মোট ২৭৪ কিমি রাস্তা। কাটোয়া মহকুমায় ১৪৯ কিমি রাস্তার খরচ ৫৯ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। রাস্তার সংখ্যা ১১২টি। কালনায় হয়েছে ১১৬টি রাস্তা। ২১৫ কিমি রাস্তার খরচ ৯১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। ৩,২৩৩টি গ্রাম সংসদে সংস্কার করা হচ্ছে ৫৪৯টি রাস্তা। খরচ ধরা হয়েছে ৩১৭ কোটি টাকা। এমনকী গ্রামাঞ্চলের অলিগলিও ঢালাই করা হয়েছে। বড় কাজগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কালনার সঙ্গে নদিয়ার শান্তিপুরে যোগাযোগের জন্য ভাগীরথীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য লাগোয়া এলাকায় ৯৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের কাজ সারা।
আরও পড়ুন-খরাক্লিষ্ট পুরুলিয়া জেলা এখন সজল আর গতিময়
ভাঙন রোধে : কেতুগ্রামের বিল্বেশ্বর, কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ, নাদনঘাটের জালুইডাঙায় ভাগীরথীর ভাঙন রোধে কাজ হয়েছে। কাটোয়ার শাঁখাই ঘাট এলাকায় অজয়ের ১২০০ মিটার পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে। খরচ হবে ২,৯৬,৩৬ হাজার টাকা।
পরিকাঠামো : কাটোয়া ২ নং ব্লকের জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজের টাকায় তৈরি হয়েছে শিশুদের বিনোদন পার্ক। কাটোয়ার পলসোনায় তৈরি হয়েছে স্টেডিয়াম। মেমারির বোহার ২ নং পঞ্চায়েতে তৈরি হয়েছে শিশুবান্ধব প্রকল্প। বোহার ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে বড়সড় সাফল্য সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে। পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে। কালনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ভাগীরথীর বিভিন্ন ঘাটে তৈরি হচ্ছে স্থায়ী জেটি। পূর্বস্থলী ১ নং ব্লকে তাঁতের হাট তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন-সুনীলদের দীর্ঘ শিবির নিয়ে বাড়ছে সংশয় এশিয়ান কাপ
কৃষিক্ষেত্রে : শস্যগোলা হিসেবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষের ক্ষেত্রও বাম জমানার তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। জেলায় ৩ লক্ষ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ৫ টন। বোরো চাষ হয় ১ লক্ষ ৭২ হেক্টর জমিতে। গড় উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৬ টন। আলুচাষ হয় ৭২ হাজার হেক্টরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ২৭ টন। এছাড়াও আনাজ ৬২ হাজার হেক্টর, তৈলবীজ ২০ হাজার হেক্টর, সরষে ৩২ হাজার হেক্টর, তিল ২৫ হাজার হেক্টর— চাষের ক্ষেত্র বেড়েছে।