প্রতিবেদন : জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত মণিপুরে ২২ ও ২৩ জুলাই প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে ৩০১ জন শিশু-সহ ৭১৮ জন নাগরিক অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই অনুপ্রবেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে। প্রশ্ন উঠেছে সীমান্তের নজরদারি নিয়েও। মায়ানমারের ৭১৮ জন বাসিন্দা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে যথাযথ নথিপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করল অসম রাইফেলসের কাছে সেটা জানতে চেয়েছে মণিপুর সরকার।
আরও পড়ুন-নারীনিগ্রহে দেশে এগিয়ে যোগীরাজ্য
অসম রাইফেলস সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরে মায়ানমার সেনা ভারত-মায়ানমার সীমান্তে সেদেশের বিদ্রোহী বাহিনীর গোপন ডেরায় জোরদার বিমান হামলা চালাচ্ছে। সে কারণেই সেখানকার সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুরে ঢুকে পড়ছে। যা মণিপুর জেলা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভেঙ্কটা রবিকিরণ জে মণিপুরের চান্দেল জেলার ডেপুটি কমিশনারকে একটি চিঠিতে জানিয়েছেন, মায়ানমারের খাম্পাতে অভিযানের কারণে, ২২ ও ২৩ জুলাই চান্দেল জেলার নিউ লাজং-এ ৭১৮ জন নতুন শরণার্থী প্রবেশ করেছে। ওই অবৈধ অভিবাসীরা চান্দেল জেলার বনসে, নিউ সামতাল, নিউ লাজং, ইয়াংনোমফাই এবং আইভোমজাংয়ের মতো গ্রামগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে৷
আরও পড়ুন-অধ্যবসায়ের জোরে ভিক্ষুক থেকে সফল মাছ-ব্যবসায়ী
মুখ্যসচিবের চিঠি: মণিপুরের মুখ্যসচিব বিনীত জোশী সোমবার অসম রাইফেলসকে একটি চিঠি দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অসম রাইফেলস যেন কড়া ব্যবস্থা নেয়। ভারত সরকারের বৈধ ভিসা বা ভ্রমণের কাগজপত্র ছাড়া যাতে কেউ ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে বলেছেন তিনি। যেসব ব্যক্তি মণিপুরে ঢুকেছে, তাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ নিতেও বলেছেন।
মণিপুরের কুকিদের সমর্থনে মিজোরামে মিছিল: মঙ্গলবার সকালে মণিপুরের কুকি সম্প্রদায়ের সমর্থনে মিজোরামের হাজার হাজার মানুষ রাজধানী আইজলে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন।
আরও পড়ুন-কৃষিভিত্তিক শিল্পে ২৩০০ কোটি বিনিয়োগ
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি আয়োজিত এই মিছিলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশ নেন। এদিনের এই প্রতিবোধ মিছিল ও সমাবেশকে সমর্থন করে এমএনএফ, জেডপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-সহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা সরকারি কর্মচারীদেরও প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়ার অনুমতিও দিয়েছিলেন।
অল অসম মণিপুরি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের দাবি: অসমের বরাক উপত্যকায় মেইতেই এলাকায় বসবাসকারী মিজোদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল অল অসম মণিপুরী স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-বনবিজ্ঞানী হয়ে নজির গড়লেন কৃষক কন্যা
মণিপুরে আর্চবিশপ অ্যান্ড্রুস থাজথ: এদিকে ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি আর্চবিশপ অ্যান্ড্রুস থাজথ একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে মণিপুরের সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। ওই প্রতিনিধিদলটি সব ধরনের হিংসা, আক্রমণ এবং নৃশংসতার কড়া নিন্দা করেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় এবং নারী ও শিশুদের মতো দুর্বলদের উপর আক্রমণের সমালোচনা করেছে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে বজায় রাখতে, সাংবিধানিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করতে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে।