প্রতিবেদন : নির্বাচন জিততে মরিয়া বিজেপি নির্লজ্জ-বেহায়ার মতো এবার গায়ের জোরে নির্বাচন কমিশন (ECI) দখল করে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করতেও পিছপা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দমতো তাঁরই মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রীকে বসানো হবে। এই গোটা বিষয়টিকে পাকাপোক্ত করার জন্য রীতিমতো বিল এনে আইনে পরিণত করতে চাইছে বিজেপি সরকার। আসলে নির্বাচন কমিশনে ইয়েসম্যান চান প্রধানমন্ত্রী। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়, কমিশনের (ECI) মাথায় এমন কাউকে বসানো হবে যিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো কাজ করবেন। বিজেপির এজেন্ডা মতো দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমস্ত স্তরে নজরদারি করবেন। আর কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দুরমুশ করার সফল পরিকল্পনা করবেন। নিজের পছন্দের লোককে বসাতে হবে। বিতর্কিত বিলটি হল ‘দ্য চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনার্স (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশন অফ সার্ভিসেস অ্যান্ড টার্ম অফ অফিস) বিল, ২০২৩।
গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনারের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের একচ্ছত্র অধিকার থাকতে পারে না। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁর রায়ে বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনার হলেন ভোটের রেফারি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত প্যানেল নির্বাচন কমিশনার ও সহ-নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গোটা প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে। গোটা দেশ জুড়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে। কিন্তু আদালতের এই রায়কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ক্ষমতা দখলের জন্য একেবারে বিল এনে বিষয়টি পাকাপোক্ত করতে চাইছে বিজেপি। এই বিল এনে প্রধান বিচারপতিকে প্যানেল থেকে বাদ দিয়ে তাঁর জায়গায় একজন মন্ত্রীকে সদস্য করা হচ্ছে। আর প্যানেলের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই বিল আনার উদ্দেশ্য কী এবং কেন। এমনিতেই গোটা দেশ জুড়ে নির্বাচনের সময় বিশেষ করে অবিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে নিজেদের ইচ্ছেমতো অফিসার বদলি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিজেপি। এবার সরাসরি এই ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকের মাধ্যমে যা খুশি তাই করার লাইসেন্স পেতে চাইছে বিজেপি সরকার। রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহলের মতে, এই বিল পাশ হয়ে এলে এবং তার কোনও প্রতিবাদ না হলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর এই ঘটনা চূড়ান্ত আঘাত হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলবে। এর ফল ভুগতে হবে ১৪০ কোটির মানুষের দেশকে। তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার বলেন, এই বিল গত ৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তাকে উপেক্ষা করে নিজেদের সুবিধামতো করে নেওয়া হচ্ছে। অথচ নির্বাচন কমিশনার ও তাঁর সহযোগীদের গোটা বডিটাই নিরপেক্ষ হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীই সবটা নিয়ন্ত্রণ করবেন। আর যাই হোক তাতে নিরপেক্ষতা বলে কিছু থাকবে না।
এই মুহূর্তে বিজেপি সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। মণিপুর, হরিয়ানার ঘটনা-সহ আকাশ-ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, বেরোজগারি, ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে তিতিবিরক্ত দেশবাসী। একাধিক নির্বাচনে বিজেপির শক্তিক্ষয় হচ্ছে। কর্নাটক, হিমাচলপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং অবশ্যই বাংলায় বিজেপি জোর ধাক্কা খেয়েছে। সামনেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। যা নিয়ে প্রবল চাপে বিজেপি। মোদি-ম্যাজিক ফিকে হয়েছে বহুদিন আগেই। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ব্র্যান্ডিং করেও খুব একটা লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে সব দিক থেকে সুরক্ষিত থাকতে একেবারে নির্বাচন কমিশনকেই পুরোপুরি নিজেদের দখলে এনে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ করে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীরা। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দেশ জোড়া ক্ষোভের সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর। জনপ্রিয়তা হারিয়েছে মোদি সরকার। শুধুমাত্র এজেন্সির ভয় দেখানো যে রাজনীতি মোদি-শাহ আমদানি করেছেন তার থেকে এটা স্পষ্ট, ভয় পেয়েছে বিজেপি। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো ইন্ডিয়া জোট এখন নতুন আতঙ্ক প্রধানমন্ত্রীর। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভেঙে যাওয়া এনডিএ-কে ফিরিয়ে আনতে শরিকদের হাতে-পায়ে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি। তাতেও চিঁড়ে খুব একটা ভিজছে না। একবার যদি নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তবে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকেও রিমোট কন্ট্রোলের মতো পিছন থেকে চালানো হবে। নির্বাচনে জিততে তাই নির্বাচন কমিশনারের প্যানেলকেই টার্গেট করেছে মোদি-শাহ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অপসারণের জন্য বিল আনা প্রমাণ করে বিজেপির অচ্ছে দিন আর নেই।
নির্বাচন কমিশন দখলে বাদ প্রধান বিচারপতি!
কেন্দ্রের তুঘলকি সিদ্ধান্ত, লোকসভায় পেশ বিল