একটা নির্দিষ্ট খাবারের প্রোটিনের বিরুদ্ধে যখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে তখন ধরে নিতে হবে সেই খাবারে আমাদের অ্যালার্জি আছে। সাধারণত খাবার খাওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, রক্তে অ্যান্টিবডি, হিস্টামিন সহ কিছু কেমিক্যাল বেড়ে যায় এবং শুরু হয় ‘ফুড অ্যালার্জি’। অনেক খাবারেই অনেকের অ্যালার্জি থাকে। তবে কোনও খাবার পেটে সইছে না মানেই অ্যালার্জি নয়। খাবার সহ্য না হওয়ার অর্থ হল সেই খাবারটা হজম হতে না চাওয়া। আমাদের শরীরে একটি নির্দিষ্ট এনজাইমের ঘাটতির ফলে বেশ কিছু খাবার হজম হতে সমস্যা হয়। সেই খাবার অল্প করে খেলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু বেশি মাত্রায় সেটা খেলেই বিপদ হয়। এরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। তবে অ্যালার্জির ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণে খেলেই রিঅ্যাকশন হতে শুরু করে।
কী করে বুঝবেন কোনটা অ্যালার্জি, কোনটা সহ্য হয় না
রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় কোন কোন খাবারে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে। তবে নিজেও একটু খেয়াল রাখলেই বুঝতে পারবেন। দেখতে হবে কোন খাবার খেলে বারবার সমস্যা হচ্ছে। খাবারটি খাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে বমি ভাব, পেটব্যথা, গায়ে লাল চাকা বা ফুসকুড়ির মতো র্যাশ, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি শুরু হলে বুঝবেন অ্যালার্জি। দু’সপ্তাহ টানা খাতায় লিখে রাখলেই বুঝে যাবেন।
আরও পড়ুন-‘ডাকলে সবাইকে পাব তো’ দুর্গাপুজোর অনুদান বাড়িয়ে ৭০ হাজার করলেন মুখ্যমন্ত্রী
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স
দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য হজম না হওয়ার যে সমস্যা তার বিজ্ঞানসম্মত নাম ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এনজাইমের অভাবে দুধ পেটে গিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটায়। ল্যাকটেজ নামক উৎসেচকের অভাবে ল্যাকটোজ অর্থাৎ দুগ্ধ শর্করা হজম হয় না। দুধ খেলেই তাই বদহজম হয়ে যায়। একেই বলে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এই অসুখে যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁদের দুধের জিনিস খেলেই পেট ফাঁপা থেকে শুরু করে ডায়েরিয়া, গ্যাস ইত্যাদি জটিলতা হয়।
আরও পড়ুন-‘আমাদের বাড়িতে রোজই অত্যাচার করছে’ কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর
দু’ধরনের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হয়। একটা জন্মগত ত্রুটির জন্য, অপরটা সেকেন্ডারি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। দ্বিতীয়টাই বেশি হয়। এক্ষেত্রে পেটে সংক্রমণ হলে ল্যাকটেজ উৎসেচক তৈরি হয় না। দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে ল্যাকটেজ ক্ষরণকারী কোষগুলোর মৃত্যু হয়। ফলে ল্যাকটেজের অভাবে দুধ খেলে বদহজম, বমি লেগেই থাকে।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় হঠাৎই অসুস্থ মলয় ঘটক, কী হয়েছে তাঁর?
গ্লুটেন সেনসিটিভিটি
গ্লুটেন এক ধরনের প্রোটিন যেটা মূলত গম, রাই, বার্লি ইত্যাদিতে থাকে। এগুলোয় এক ধরনের আঠালো পদার্থ থাকে যা খাবারটিকে বেক করার সময় ফেঁপে উঠতে সাহায্য করে, সেটাই গ্লুটেন। মূলত রুটি, পাউরুটি, পাস্তা, কেক, চিপস, সস, বিয়ার এই সব খাবারে গ্লুটেন থাকে। গ্লুটেনে দু’ধরনের আমিষ থাকে। গ্লুটেন এবং গ্লিয়াডিন। বেশিরভাগ মানুষ গ্লুটেন সহ্য করতে পারলেও গ্লিয়াডিন সহ্য করতে পারে না। সিলিয়াক রোগ একধরনের অটোইমিউন ডিজিজ। এই রোগ থাকলে গ্লুটেন যুক্ত খাবার তাঁদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আস্তরণের ক্ষতি করে। ফলে খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ ব্যাহত হয়। এছাড়া অনেকেরই গ্লুটেন নিয়ে এমনই সংবেদনশীলতা থাকে। সেই সেনসিটিভিটি থেকে সিলিয়াক রোগের উপসর্গও দেখা যেতে পারে। গ্লুটেন অ্যালার্জি থাকলে শুরুতে পেটের তলদেশে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনও ডায়েরিয়া, চুলকানি, মাথার যন্ত্রণা, ক্লান্তি, জয়েন্ট পেন, অ্যাংজাইটি, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তারপর বেশি বাড়লে ইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম হয়ে যায়।
আরও পড়ুন-পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী
ক্যাফেইন-এ অ্যালার্জি
ক্যাফেইন একটি তিক্ত রাসায়নিক যা বিভিন্ন ধরনের বেভারেজে পাওয়া যায়। যেমন চা, কফি, সোডা, এনার্জি ড্রিঙ্ক ইত্যাদি। যে কোনও মানুষ ৪০০ গ্রাম ক্যাফেইন অর্থাৎ চার কাপ কফি খেতে পারেন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। ক্যাফেনে যাঁদের হাইপারসেনসিটিভিটি রয়েছে তাঁদের কফি, চা খেলেই অ্যালার্জি, ঘুম কমে যাওয়া, শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়ে যায়। ক্যাফেইনে অ্যালার্জির লক্ষণ হিসেবে হার্টবিট দ্রুত বেড়ে যাওয়া, অ্যাংজাইটি, রেস্টলেসনেস ইত্যাদি দেখা দেয়।
আরও পড়ুন-ফের অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস হিমাচল-উত্তরাখণ্ডে, জারি কমলা সতর্কতা
অ্যামিনস (Amines) ইনটলারেন্স
সাধারণত ফার্মেন্টেশন পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণের সময় সেই খাবার থেকে একধরনের ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয় যেটার মধ্যে অ্যামিনস থাকে। অ্যামিনস বা হিস্টামিন ফুড ইনটলারেন্সের সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত। এটা এমন একটা কেমিক্যাল যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি, হজমশক্তি এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। কিছু কিছু খাবার খেলে কারও চুলকানি শুরু হয়, হাঁচি হতে থাকে, চোখ দিয়ে জল পড়ে। এগুলোই হিস্টামিন ইনটলারেন্সের লক্ষণ। দুটো নির্দিষ্ট এনজাইমের ঘাটতি থেকে হিস্টামিন ইনটলারেন্স হয়। এর অন্যতম লক্ষণ লো প্রেশার, ডায়েরিয়া, পেটে ক্রাম্প ধরা, অ্যাংজাইটি, মাথাব্যথা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে তা হল ফার্মেন্টেড ফুড, ড্রাই ফ্রুটস, সিট্রাস ফল, আভোকাডো, চিজ, ভিনিগার, বাটারমিল্ক, স্মোকড ফিশ ফার্মেন্টেড অ্যালকোহল যেমন ওয়াইন এবং বিয়ার ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-বেনজির কাণ্ড! পাঁজি দেখে অপরাধ মোকাবিলার নির্দেশ, যোগীরাজ্যে গেরুয়াকরণের কুৎসিত নজির
যে খাবার পেটে সহ্য হয় না
অ্যালার্জির বাইরে অনেক খাবারই রয়েছে যা একটু বেশি খেয়ে ফেললেই পেটে সহ্য হয় না। গ্যাস, অম্বল মাথা ব্যথা ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। কী সেগুলো।
বেশি ডাল
রোজ ডাল খাচ্ছেন? তাহলে একটু সাবধান। ডালে যেমন রয়েছে প্রোটিন, মিনারেল, ফাইবারের মতো পুষ্টি তেমনই অতিরিক্ত ডাল খেলেই চাপ। যেমন মটর, বিউলি ও ছোলার ডাল হজম হতে সময় নেয় তাই রান্নার আগে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। মটর ও বিউলি ডালে হিং এবং বেকিং সোডা দিয়ে রান্না করুন, এতে পরিপাক ভাল হবে। যাঁদের হজম শক্তি দুর্বল তাঁদের বিউলি ডাল খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। বাতের ব্যথা বা বদহজমের রোগীর পক্ষে বিউলি ডাল ক্ষতিকর। ছোলার ডাল রান্নার সময় মেথি দিলে গ্যাসট্রিক ধর্মী উপাদান দূর হবে। অড়হর ডাল একঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রেখে সমপরিমাণ মসুর ডাল মিশিয়ে নিন, এতে দ্রুত হজম হবে।
আরও পড়ুন-আজ এএফসি কাপে মোহনবাগান বনাম আবাহনী
বেশি ফাইবার
বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে পেট ফেঁপে যেতে পারে। এমনকী গ্যাস, অম্বল হতে পারে প্রচণ্ড। তাই ফাইবার খেতে হবে একটু রয়ে সয়ে। হোল গ্রেইন, শাক, সবজি, ফল খান— তবে অত্যধিক পরিমাণে নয়। তাতে সমস্যা তৈরি হবে। আর ফাইবার খেলে জল খেতে হবে পরিমাণ মতো।
বাঁধাকপি, ব্রকোলিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। এছাড়া আছে এমন এক বিশেষ ধরনের সুগার যা হজমে সমস্যা তৈরি করে। তাই খুব বেশি না খাওয়াই ভাল। বিনসের ক্ষেত্রেও তাই।