আঁচিল হল ছোট নরম, সাধারণত হালকা বা গাঢ় বাদামি বা একটু কালচে রঙের ত্বক-এর দলা বা ছোট্ট লাম্প যা একটি ছোট নলের সাহায্যে ভিতরের ত্বকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
আঁচিল কয়েক মিলিমিটার থেকে ৫ সেমি পর্যন্ত (প্রায় ২ ইঞ্চি) আকারের হতে পারে। এটা সাধারণত ঘাড়ে, বগলে, কুঁচকির চারপাশে বা স্তনের নিচে হয়। অনেক সময় চোখের পাতা, যৌনাঙ্গ বা নিতম্বেও হতে পারে।
দুটি ত্বকের পৃষ্ঠের মধ্যে ঘর্ষণের কারণে আঁচিল হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ওজন রয়েছে বা স্থূলকায় ব্যক্তির মধ্যে বেশি দেখা যায়।
হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও বিশেষত গর্ভাবস্থার তৃতীয় পর্যায়ে আঁচিল হতে পারে।
আরও পড়ুন-বিশ্ব মিটে চানু ওজন তুলবেন না
আঁচিলের ধরন
আঁচিল তিন ধরনের হয়। প্রথমটি হল, ‘ভেরুকা’ বা ‘ওয়ার্ট’। একে ভাইরাল ওয়ার্টও বলে যা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভির কারণে হয়ে থাকে। সেই কারণেই এই ধরনের আঁচিল ছোঁয়াচে। বেশ দ্রুত সংক্রমিত হয়। শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে যায়, এমনকী একজন থেকে অন্যজনেও ছড়াতে পারে। এই ওয়ার্ট চার ধরনের হয়।
সাধারণ ওয়ার্ট: এটা সাধারণত হাতে বা আঙুলে হয়।
প্ল্যান্টার ওয়ার্ট: পায়ের পাতা ও পায়ের নিচে হয়ে থাকে।
জেনিটাল ওয়ার্ট: এটি এক ধরনের যৌনরোগ। অসুরক্ষিত যৌন সংস্রব থেকে এই আঁচিল হয়।
আরও পড়ুন-৯০ মিটারে চোখ নীরজের, এবার সামনে জুরিখ ডায়মন্ড লিগ
ফ্ল্যাট ওয়ার্ট: শরীরে যে অংশে নিয়মিত শেভ করা হয়, সেখানে এই আঁচিল দেখা যায়। সাধারণত মুখে, কপালে, গালে এই আঁচিল হতে পারে।
দ্বিতীয় হল ‘অ্যাক্রোকর্ডন’ বা ‘স্কিনট্যাগ’। পোশাক বা শক্ত কলারে ত্বক ক্রমাগত ঘষা খেয়ে ত্বকের ছোট একটি অংশ ফুলতে শুরু করে। ডাক্তারি পরিভাষায়, ঘর্ষণের ফলে স্থূল বা মাত্রাতিরিক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া ত্বকের এপিডার্মিস স্তরের চারপাশে কোলাজেন প্রোটিন ফাইবার ও রক্তবাহগুলি আলগা ভাবে সজ্জিত হয়ে আঁচিলের সৃষ্টি করে। এটি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর। শরীরে হরমোনের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে এটা হয়। স্কিনট্যাগের তিনটে আকার।
আরও পড়ুন-নয়া মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে ফের নিজের বলে দাবি চিনের, সরব ভারত
১) ছোট আকারের স্কিনট্যাগ
ঘাড়ে ও বাহুমূলে এই ধরনের আঁচিল দেখা যায়। আকারে সাধারণত ১ থেকে ২ মিলিমিটার হয়।
২) মাঝারি আকারের স্কিনট্যাগ
দেহের বিভিন্ন অংশেই এই আঁচিল গজিয়ে উঠতে পারে। আকারে ৫ মিলিমিটার থেকে ২ মিলিমিটারের মধ্যে হয়।
৩) বড় আকারের স্কিনট্যাগ
এই আঁচিলগুলোই পেডাঙ্কল নামক সরু অংশের সাহায্যে ত্বকে লেগে থাকে। মূলত দেহের নিচের অংশে এগুলি দেখা যায়। আকারে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন-জেলাগুলির সব ভালো মিষ্টি এবার ‘মিষ্টান্ন’-তে, ব্যবসায়ীদের জমি দেওয়ার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
তৃতীয় হল জন্মগত আঁচিল, তিল বা মোল। মেলানোসাইট নামের পিগমেন্ট-ফর্মিং কোষের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে ত্বকে মোলের সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত সূর্যালোক ও জিনগত কারণের ফলে মেলানোসাইটের এই বৃদ্ধি দেখা যায়। মোল সাধারণত গাঢ় রঙের হয়। অনেক সময় মোলের রোমকূপ থেকে রোম গজায়। কিছু ক্ষেত্রে মোলাস্কাম কন্টাজিওসাম ভাইরাসের ফলেও মোল হতে পারে। আবার শরীরের কোনও ছোট্ট ব্লাড ভেসেল ফেটে লাল রঙের তিলও দেখা যায়। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে চেরি অ্যাঞ্জিওমা। যদি এই তিল আকারে বাড়তে থাকে এবং রক্তপাত হয়, তাহলে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ, তিল থেকে অনেকের ক্যানসারও হতে পারে।
অনেকের জন্মগত তিল ও আঁচিল থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় সেগুলি আকারে ছোট হয়ে যায়। যদি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারে বাড়তে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন-জাতীয় শিক্ষানীতি এবার কোপ পড়ল মেডিক্যাল শিক্ষায়
সেবোরিক কেরাটোসিস
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে মুখে, পিঠে, ঘাড়ে ও বুকে যে খসখসে বড় আকারের ফোলা ভাব দেখা যায় তাকে বলে সেবোরিক কেরাটোসিস। এটি একেবারেই ছোঁয়াচে বা ক্যানসারাস নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত বয়স বাড়ার কারণে ও জিনগত কারণে এগুলির উৎপত্তি। অনেক সময় এগুলিতে অস্বস্তিকর চুলকানি দেখা যায়।
কী কারণে আঁচিল হয়
আঁচিল নারী-পুরুষ উভয়ের যেকোনও বয়সেই হতে পারে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁচিল হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত বংশগত কারণে ত্বকে আঁচিল দেখা দেয়।
এছাড়াও যাঁদের ওজন খুব বেশি বা স্থুলকায়, তাঁদের খুব আঁচিল হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
আরও পড়ুন-৩৭০ ধারা খারিজ নিয়ে মত জানানোয় বরখাস্ত অধ্যাপক, অসন্তোষ জানাল সুপ্রিম কোর্ট
যাদের বংশে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আছে তাদের ত্বকে আঁচিল ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংস্রবের মাধ্যমে অপরজনের হতে পারে।
যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনকারী রোগীর ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
আঁচিল চেনার উপায়
প্রাথমিক অবস্থায় আঁচিল ত্বকের রঙের ছোট ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে আকারে বড়, অমসৃণ ও শক্ত হতে থাকে। তখন রং বদল ঘটে।
সাধারণত আঁচিলে কোনও ব্যথা থাকে না।
চুলকানিও হয় না আঁচিলে। তবে যৌনাঙ্গের আঁচিলে চুলকানি হতে পারে।
এগুলি মসৃণ বা কুঁচকানো হতে পারে ।
আঙুরের সাইজ থেকে শুরু করে খুব ছোট আকারেরও আঁচিল।
আরও পড়ুন-পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আজ বৈঠক
আঁচিল ক্যানসারাসও হয়
আঁচিল ক্যানসারাস হতে পারে তাই আঁচিল হলে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। আঁচিলের রং, আকৃতি এবং আকারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত ক্যানসারযুক্ত আঁচিলগুলি মেলানোমা নামে পরিচিত।
সময়মতো ধরা পড়লে এর চিকিৎসা করা যায়। তাই সময়ে সময়ে ত্বক পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষ করে এর থেকে যন্ত্রণা, চুলকানি কিংবা রক্তপাত হলে হতে পারে সেটা ক্যানসারের লক্ষণ।
ক্যানসারযুক্ত আঁচিল হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে কারণ সূর্যের অতিবেগুনি বিকিরণের মাঝে অত্যধিক এক্সপোজার বিপজ্জনক। এছাড়া এটি এড়াতে হাত-পা ঢাকা পোশাক পরতে হবে, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন-ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলে ১৫ কোটি গাছ বসেছে, বনমহোৎসবে মুখ্যমন্ত্রী
চিকিৎসা
অনেকেই বাড়িতে নানা পদ্ধতিতে আঁচিলের চিকিৎসা করে থাকেন তবে চিকিৎসকদের মতে, এগুলো করা একেবারেই উচিত নয়। এর ফলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত অ্যান্টি ভাইরাল ক্রিম ও ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা হয় ওয়ার্টের। আঁচিল সারিয়ে তোলার জন্য রয়েছে লেজ়ার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সার্জারি ও ক্রায়োসার্জারি। এছাড়া হোমিওপ্যথিতে আঁচিলের খুব ভাল চিকিৎসা রয়েছে। থুজা, কস্টিকাম, নাইট্রিক অ্যাসিড দারুণ কাজ করে। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। তবে আঁচিল হওয়া রুখতে সানস্ক্রিন, ছাতা ছাড়া রোদে বেরোনো উচিত নয়।