আজন্ম বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। বাবা বৃন্দাবন মাহাতো ছিলেন সক্রিয় কংগ্রেস কর্মী। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেও রাজনৈতিক পরিসর। শ্বশুর কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি, চাকলতোড় অঞ্চলের প্রধান এবং পুরুলিয়া ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন। স্বামী তৃণমূল কর্মী। নিজে পরপর তিনবার জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যা। এবার সভাধিপতি। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো উন্নয়নকেই মানবিক ধর্ম বলে মনে করেন।
আরও পড়ুন-শ্রীহরিকোটা থেকে সূর্যের দিকে পা বাড়াল আদিত্য L1, টুইটবার্তায় শুভেচ্ছা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের
পুরুলিয়ার মতো রুখা জেলায় গ্রাম থেকেই উঠে আসা আপনার। গ্রামের মূল সমস্যাগুলি বোঝেন। কী ভাবছেন সমস্যগুলি নিয়ে?
উঃ আমার বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি দুটোই গ্রামে। দুই পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে দেখেছি মানুষ কোনও না কোনও সমস্যার কথা বলেন। নিজেও ভুক্তভোগী। তাই জেলায় সমস্যাগুলিকে পর্যায়ক্রমে দেখে সমাধানের চেষ্টা করব।
আরও পড়ুন-পুষ্টির ঘাটতিতে আসে নানা রোগ
জেলায় কোন সমস্যাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চান?
উঃ অবশ্যই পানীয় জল। মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক চেষ্টায় জাইকা প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল দেওয়ার কাজ চলছে। যেখানে সমস্যা আছে, উৎস খুঁজে জল পৌঁছে দিতে হবে।
অন্য কোন কোন বিষয়গুলিকে খুব গুরুত্ব দেবেন?
উঃ আমাদের জেলায় কাজের অভাব থাকায় পরিযায়ী শ্রমিক বেশি। মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের ডেটাবেস তৈরি করেছেন। আমার মনে হয়, জেলায় কৃষিক্ষেত্রেই বিপুল কর্মসংস্থান সম্ভব। জেলায় মাটির সৃষ্টি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এছাড়া এখানে সবজি সংরক্ষণে জোর দিতে হবে। শীতকালে এখানে প্রচুর টম্যাটো, ধনেপাতা ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। বাজারে দাম না মেলায় চাষিরা সবজি ফেলে দিতে বাধ্য হন। স্বনির্ভর দলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এইসব সবজি শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হলে সারা বছর ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া মহিলাদের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দিলেও লাভ হবে। উদ্যানপালন, মৎস্যচাষেও সম্ভাবনা প্রচুর। কৃষকদের বিকল্প চাষে উৎসাহী করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির জল ধরে সেচের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন-জাতিগত হিংসা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মণিপুরে বেড়ে চলছে মৃত্যু
এমনিতে গরিব জেলা পুরুলিয়া। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবেতেই পিছিয়ে। সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কী ভাবছেন?
উঃ সত্যিই জেলায় সমস্যা রয়েছে। আমি নিজে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তাই জানি, শিশু ও প্রসূতিদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য কতটা জরুরি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তাই পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। তবে জেলায় বহু কেন্দ্রের ঘর নেই, জমির সমস্যা রয়েছে। যতটা সম্ভব মেটাতে হবে। স্কুলগুলিতে পড়াশোনার মান বাড়াতে হবে। বেসরকারি স্কুলের দিকে ঝুঁকছেন মানুষ। এই প্রবণতা কেন, ভাবতে হবে। জেলায় স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। জেলায় সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ছি। পথশ্রী, রাস্তাশ্রী প্রকল্পে প্রচুর রাস্তা হয়েছে। ছোট ছোট জোড়বাঁধ হয়েছে। ফলে পরিকাঠামো তৈরি আছে। কাজে লাগাতে হবে।
আরও পড়ুন-শ্যামা
আপনি নিজে উচ্চশিক্ষিতা। এমএ করেছেন। জেলায় নারীশিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু বাল্যবিবাহ এখনও হচ্ছে। এই সমস্যা দূর করা কি সম্ভব?
উঃ বাল্যবিবাহ একটি সমস্যা অবশ্যই। তবে রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে মেয়েরা পড়াশোনায় সহায়তা পায়। তাই নারীশিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষা যত বাড়বে, নাবালিকা বিবাহ তত কমবে। এটাই নিয়ম।
পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী কিছু জীবিকামুখী শিল্প আছে। যেমন লাক্ষা বা তসর। সেগুলির উন্নয়নে কিছু ভাববেন?
উঃ এই দুটোর সঙ্গে কৃষি, বলতে পারেন উদ্যানপালন যুক্ত। লাক্ষা হয় পলাশ, কুসুম ও কুল গাছে। জঙ্গলে এইসব গাছ প্রচুর লাগাতে হবে। গ্রামের মানুষদের লাক্ষা চাষের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তসর চাষ হয় অর্জন, তুঁত প্রভৃতি গাছে। এখানেই একই কথা প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় পাশ হল সংশোধনী বিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পত্তিকর নয়
এর আগে পরপর দু’বার জেলা পরিষদের সদস্যা ছিলেন। দলের সিনিয়রদের কাজ দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কতটা সহায়ক হচ্ছে?
উঃ আমাদের মানভূমে পারিবারিক শিক্ষাই হল বয়োজ্যেষ্ঠদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা। জেলা পরিষদে আমরা বিপুল জয় পেয়েছি। সবাই একটি পরিবারের মতো কাজ করব।
একেবারে সাধারণ গৃহবধূ, সাধারণ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে সভাধিপতি। কোথাও কি অস্বস্তি হচ্ছে?
উঃ দল দায়িত্ব দিয়েছে, এটাই বড় কথা। পদ নিয়ে ভেবে লাভ নেই। তাই বাড়তি চাপ নেই। কাজ তো সবাই মিলে করব।
এবার পরিবারকে সামাল দেবেন কীভাবে?
উঃ একটা পরিবার সামলাতাম, এবার ২৫ হাজার পরিবারের কথা ভাবছি। সংসার করতে মেয়েদের সমস্যা হয় না। তাছাড়া স্বামী, তিন মেয়ে পাশে তো আছেই। আর আছে দলের কর্মীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের আদর্শ। তাঁর পথ ধরেই সংসার সামলে জেলা সামাল দিতে পারব।