জাতিগত হিংসা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মণিপুরে বেড়ে চলছে মৃত্যু

Must read

মৌনতার প্রতিবাদে
জাতিগত হিংসায় জর্জরিত মণিপুর। অকালে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের, অসংখ্য মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পালিয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, বাড়িঘর জ্বলছে, পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণ। তার পরেও কেন্দ্র ও রাজ্যের নির্লজ্জ বিজেপি সরকার হাত গুটিয়ে বসে। প্রধানমন্ত্রী দুনিয়ার সব বিষয়ে মতামত দেন, বিরোধীদের আক্রমণ করেন, কিন্তু শান্তি ফেরাতে ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য মণিপুরে একবারও পা পড়েনি তাঁর। মানুষের ক্ষোভ কতদূর, এই ছবিটিই তার প্রমাণ। মণিপুরের এক দোকানি তাঁর দোকানের পাশে মোদির নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘোষণা করে পোস্টার সেঁটেছেন। ‘৫৬ ইঞ্চির ছাতিওলা’ মোদি মণিপুর নিয়ে নীরব কেন, সেটাই প্রশ্ন।

প্রতিবেদন: সংসদের বাদল অধিবেশনে মণিপুর (Manipur Violence) নিয়ে বিরোধীরা লাগাতার সুর চড়ানোর পর উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য সাময়িকভাবে শান্ত ছিল। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হল না। বিজেপি-শাসিত এই রাজ্যে নতুন করে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘর্ষে গত ৭২ ঘণ্টায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত ২০। চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুরের মতো অশান্ত জেলাগুলিতে নতুন করে নিরাপত্তা, নজরদারি বাড়ানো হলেও হিংসায় রাশ টানা এখনও সম্ভব হয়নি। শুক্রবার সকালেও ফের সশস্ত্র মেইতেই এবং কুকিদের গুলির লড়াইয়ের খবর মিলেছে। তার আগে দুই জেলার সীমানাবর্তী খৈরেন্টক এলাকায় মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর গুলির লড়াই বাধে। তাতে দু’জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরাও হামলায় যোগ দিয়েছিল। এরপর থেকেই বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিংসার খবর আসতে শুরু করেছে। চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর সীমানায় কেন্দ্রীয় বাহিনী টহলদারি চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তবে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার চূড়াচাঁদপুর জেলার চিংফেই এবং খৌসাবুং থেকে গুলির লড়াইয়ের খবর আসে। ওই দুই এলাকা থেকে প্রাণভয়ে বেশ কিছু গ্রামবাসী পালিয়ে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং স্বীকার করেছেন, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। তাঁর বক্তব্য, আমরা সব সম্প্রদায়ের কাছে শান্তির আবেদন জানাচ্ছি। হিংসা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য পুলিশের তরফে বিশেষ ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক ঘন্টায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রিয় জনজাতি গীতিকার এলএস মাংবোই।

গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই উগ্র হিংসায় (Manipur Violence) মদতের পিছনে কেন্দ্র ও রাজ্য বিজেপির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। মণিপুরে সংখ্যালঘু কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষ অভিযোগ করছেন, রাষ্ট্রশক্তির মদতে ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় নির্বিচারে তাঁদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে।

Latest article