সুখেন্দুশেখর রায়: দু’দিনের ১৮তম জি-২০ সম্মেলন আজ শুরু হচ্ছে নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের নবনির্মিত ‘ভারত মণ্ডপম’-এ (Bharat mandapam)। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি অতিথি/প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এসেছেন, আলোচনায় যোগ দিয়েছেন। আজ ও কাল এই গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানেরা শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিগত আদানপ্রদানের বিষয়ে সহযোগিতার কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলে কূটনীতিক মহলের ধারণা। যদিও রাশিয়া ও চিনের রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগ দিচ্ছেন না। সম্মেলনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশি বিনিয়োগ ও আর্থিক বৃদ্ধির নিরিখে ভারতকে বিশ্বগুরু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে চলেছেন। সরকার দাবি করেছে, এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধি ছিল ৭.৮%। কিন্তু এই দাবিকে নস্যাৎ করে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অধ্যাপক অশোক মোদি। তাঁর মতে, এই বৃদ্ধির হার বিভ্রান্তিকর। কারণ, বৃদ্ধির হার কষতে গেলে আয় ও ব্যয় দুইয়ের ভিত্তিতে করাই নিয়ম। ভারত সরকার খরচের বিষয়টি হিসেবে দেখায়নি। ফলে বৃদ্ধির হার বড়জোর ৪.৫%, কোনওমতেই ৭.৮% নয়। বিরোধীরাও অশোক মোদির বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, দেশে তীব্র আর্থিক অনৈক্য, বেকারত্ব বাড়ছেই, বেসরকারি বিনিয়োগে আশংকাজনক ঘাটতি। দেশের এই অবস্থার প্রেক্ষিতে শুরু হল জি-২০ সম্মেলন। এই রাজসূয় যজ্ঞের খরচ কত? আপাতত প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা। ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা কত? দেড় লক্ষ কোটি টাকা। তবু প্রাচুর্য ও বৈভব তো দেখাতেই হবে। তাই রাস্তার ধারের গরিবদের সব বস্তি ঢেকে দেওয়া হয়েছে এমনভাবে যেন বিদেশিদের নজরে না আসে। এরপর নবতম সংযোজন হল, বিদেশি প্রতিনিধিদের খাবার পরিবেশন করা হবে সোনা ও রুপোর বাসনে। এমনকী সোনা-রুপোর থালায় আঁকা থাকবে ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভ। ধিক্কার! বিদেশিরা আমাদের জাতীয় প্রতীককে এঁটো করবেন, আর আমাদের সরকারি কর্তারা তা উপভোগ করবেন! বিদেশের যাবতীয় সম্মেলনে এমন করাটাই কি নিয়ম? যেভাবে জাতীয় প্রতীক থালাগুলিতে আঁকা হয়েছে তা জাতীয় প্রতীক মর্যাদা রক্ষা সংক্রান্ত চলতি আইনের পরিপন্থী। বিষয়টি তার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ ভারত-ভারত বলে চিৎকার শুরু করে দেওয়া লোকগুলো কি দেশের মর্যাদার প্রতীককেও রেহাই দেবে না?