টিকা নিয়েও জুমলা!

Must read

১০০ কোটি ডোজ দেওয়ার গর্বে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নাকি আরও প্রসারিত! কিন্তু এই প্রচারের ঢাকের আওয়াজ কোন কোন সত্য ঢাকতে চাইছে? মিথ্যের মুখোশ ছিঁড়ে সত্য উদ্ঘাটনে সাংসদ ডঃ শান্তনু সেন

আরও পড়ুন-মান্না দের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য

দেশে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়ে গেল। নয়া মাইলস্টোন। দশদিকে অহর্নিশ প্রচারের ঢক্কনিনাদ। জুমলা সরকারের আরও একটা জুমলা কীর্তি।
এই ঢাক পেটানোর আয়োজনে আড়াল করা হচ্ছে একাধিক দুঃখজনক সত্য।
আমরা কিন্তু ভুলিনি এপ্রিল ২০২১ থেকে জুন ২০২১-এর মধ্যে এই টিকা নিয়ে কতরকমের নাটক করেছে মোদি সরকার। দামে বৈষম্য। বণ্টনে বৈষম্য। এই দুটি বিষয়ে বৈষম্যের পাঁচিল তুলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সমন্বয়কে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছিল এই মোদি সরকার।
আমরা ভুলিনি, বড় বড় শহরগুলোর বাইরে, মফস্বলে ও গ্রামাঞ্চলে টিকাকরনের মতো পরিকাঠামো বেসরকারি সংস্থাগুলোর ছিল না। অথচ, বাস্তব সত্যকে অস্বীকারের তাগিদে এই মোদি সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রের কাঁধেই ওইসব এলাকায় টিকা দেওয়ার দায় চাপিয়ে দিয়েছিল। পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে টিকা কেনার তাবৎ দায়িত্ব আপন স্কন্ধে তুলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামতে হয় কেন্দ্রকেই।
আমরা ভুলিনি, কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার জন্যই গত জানুয়ারি মাসে দুটো ভ্যাকসিনের অনুমোদন নিয়ে মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। আর তারই জেরে মানুষ কিছুদিনের জন্য হলেও টিকা নেওয়ার ব্যাপারে উদাসীনতা, বা বলা ভাল, অনীহা দেখিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন-মান্না দের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য

আমরা দেখছি, কবে বুস্টার ডোজ পাওয়া যাবে, আদৌ সবাই তা পাবে কি না, কবে থেকে ১৮ বছরের কম বয়সিদের টিকাকরণ শুরু হবে, কীভাবে সেটা করা হবে, এসব করার নীল-নকশা কেমন হবে, এসব নিয়ে কোনও সমীক্ষা গবেষণা করা হয়েছে কি না, এসব নিয়ে কোনও স্পষ্ট জবাব কোথাও নেই। কে যে এসব ব্যাপারের উত্তর দেবে, সেটাও আম-জনতা জানে না। সুতরাং বিভ্রান্তির বলয় ক্রমবর্ধমান।
আমরা ভুলিনি, এই সরকার টিকাদান নিয়ে অযুত বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ১৬ জানুয়রি থেকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল। মার্চ ১-এ বলা হল, ৬০ বছরের ওপরে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। যাঁদের অন্য আনুষঙ্গিক ব্যাধি বা কো-মর্বিডিটি আছে এবং বয়স ৪৫-এর বেশি, তাঁদেরও টিকা দেওয়া হবে। তার পর ১ এপ্রিল থেকে বদলে গেল এই নীতি। বলা হল, ৪৫ বছরের ওপরে সবাইকেই টিকা দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে, ১ মে থেকে সেই নীতি হয়ে দাঁড়াল ১৮ বছরের ওপর সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। দুটো টিকার মধ্যে ব্যবধান কত দিনের হবে, তা নিয়েও নানা সময় নানা কথা ছড়িয়েছে এই মোদি সরকার।
আমরা এখনও শুনছি, ৩১ ডিসেম্বরের মতো সাড়া দেশে টিকাকরণ হয়ে যাবে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত লোককে কীভাবে টিকা দেওয়া হবে? কেউ জানে না।
কোভিড কালে এই সরকার ল্যাজে গোবরে হয়েছে। অথচ তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনও ইচ্ছা, উদ্যোগ, আয়োজন, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। জন সচেতনতা বৃদ্ধির নামে অষ্টারম্ভা, শুধু ছাপান্ন ইঞ্চির অনৃত ভাষণ। মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে সাজান বক্তৃতামালা।
এই ১০০ কোটি নিয়ে জলুসের আড়ালে গোপন করার চেষ্টা চলছে একটা ভয়ানক সত্যের। দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশের পুরো দুটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনও ৬৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক দ্বিতীয় ডোজ পাননি। ৩৬ শতাংশ পাননি প্রথম ডোজটাই।
এই মিথ্যার জৌলুস দিয়ে আড়াল করা যাবে একটা দারুণ সত্য। একটা সত্যিকার সাফল্যের বৃত্তান্ত।
টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানারকম প্রতিবন্ধকতা। অগুনতি বৈষম্যমূলক আচরণ। তাও এই পশ্চিমবঙ্গে, জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক দক্ষতা ও তৎপরতায় ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ কোটি ৮২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮১২ জন রাজ্যবাসী টিকা পেয়েছেন। সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে কেদ্রীয় সরকারের বদান্যতাপ্রাপ্ত বি জে পি শাসিত গুজরাটের চেয়ে বেশি। সেখানে টিকা পেয়েছেন ৬ কোটি ৭৩ লক্ষ মানুষ। অনেক পিছিয়ে বাম শাসিত কেরলও। সেখানে টিকা পেয়েছেন, ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৪ জন। বিহারে সরকারে শাসন ক্ষমতায় ভাগাভাগি করে আছে বি জে পি। সেখানেও টিকাপ্রাপ্তের সংখ্যা ৬ কোটি ৩০ লক্ষের আশেপাশে। হ্যাঁ, উত্তর প্রদেশ বাংলার থেকে এগিয়ে আছে। কারণ, সেখানে সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই, মানুষের জীবনের দাম বুঝে নয়, ভোটের অঙ্ক মেলাতে ঢালাও টিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। ১২কোটি ৮ লক্ষ টিকা সে রাজ্যে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-মান্না দের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য

জি এস টির ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত বাংলা। জন সংখ্যার অনুপাতে টিকা পাঠানোতে সাংঘাতিক বৈষম্য। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুদক্ষ প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে এ রাজ্যের কোভিড চিত্র অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে ভাল। গত সপ্তাহে কোভিড সংক্রমণের হার ছিল মাত্র ২.৪৪ শতাংশ। মিজোরামের মতো ছোট রাজ্যেও ওই সময়ে এই সংক্রমণের হার ছিল ১৩.৬৭ শতাংশ। আর বাম শাসিত কেরলে তা ছিল ১০.৪৩ শতাংশ। বি জে পি শাসিত কর্ণাটকে কোভিডে মারা গিয়েছেন ৩৭হাজার ৯৭৬ জন (১৯ অক্টোবর পর্যন্ত)। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে কোভিডে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মারা গিয়েছেন ১৯হাজার ৭জন।
এইসব তথ্য পরিসংখ্যান একটা কথাই বলছে।
বঞ্চনা কিংবা বদমায়েশি, কোনওকিছু করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জনকল্যাণের ব্রত থেকে বিরত করা যাবে না।
বাংলা ঘরের মেয়ের হাতে নিরাপদে আছে, থাকবেও।
বাংলার মানুষকে মারার সব চক্রান্ত রুখছেন, রুখবেন জননেত্রী। কেউ তাঁকে আটকাতে পারেনি, পারবেও না।

Latest article