প্রতিবেদন : অদ্ভুত কাণ্ড! আগে মেডিক্যালে (Medical) স্নাতকোত্তরে সুযোগ পাওয়া ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। মুখভার করে ফিরে আসতে হত অনেক মেধাবীকেও। আর এবারে? এ যেন উলটপুরাণ। আসন আছে, পড়ুয়া নেই। কিন্তু সবচেয়ে অবাক কাণ্ড, মূলত বেসরকারি মেডিক্যাল (Medical) কলেজগুলো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আসন ভরছে না, তা-ই ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতামান কমিয়ে দাও। শুধু কমানো বললে সব বলা হবে না, যোগ্যতামান ‘শূন্য’ করে দাও। প্রবেশিকায় পাশ না করলেও পড়ার সুযোগ। তাও আবার যে-সে বিষয়ে নয়, ডাক্তারির স্নাতকোত্তরে! আশ্চর্যের বিষয়, এই বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে খোদ কেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এর যৌক্তিকতা নিয়ে। সংশয় দেখা দিয়েছে এইসব মেডিক্যাল কলেজ থেকে যাঁরা পাশ করবেন তাঁদের যোগ্যতা এবং ডাক্তারির মান নিয়েই।
হ্যাঁ, এমন নজিরবিহীন ঘটনাই ঘটে গেল এবার। ডাক্তারির স্নাতকোত্তর এমডি, এমএসে ভর্তির জন্য নিট পিজি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ পার্সেন্টাইল পেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মটা চালু রয়েছে। সংরক্ষিত কোটায় ভর্তির জন্য দরকার কমপক্ষে ৪০ পার্সেন্টাইল। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে দু’দফায় কাউন্সেলিং হয়ে যাওয়ার পরে ডাক্তারি স্নাতকোত্তরে আসন ভরেনি। বিভিন্ন বিভাগের এমডি এবং এমএসে প্রচুর আসন এখনও ফাঁকা, যদিও তার বেশিরভাগই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের।
আরও পড়ুন- স্পেনে ব্যস্ত সফরের মাঝেই সুরুচি সংঘের পুজোর থিম সং লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী
দেশের সব রাজ্যেই প্রায় একই ছবি। সমস্যা সমাধানের জন্য আইএমএ-সহ বেশ কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে কাট অফ মার্কসের পার্সেন্টাইল কিছুটা হলেও কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে আর্জি গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার শুধু যে সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছে তা-ই নয়, এমডি-এমএসে ভর্তির কাট-অফ পার্সেন্টাইল শূন্য করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে মেডিক্যাল কাউন্সেলিং কমিটি (এমসিসি)-কে, যারা ওই প্রবেশিকা পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও এমসিসি’র জারি করা এই সংক্রান্ত ‘বেনজির’ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের সঙ্গে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সমালোচনায় মুখর বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। অভিযোগ, এতে আদতে মেধার সঙ্গে আপস করা হল। স্বাস্থ্যে-শিক্ষা মহলের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণের জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। সেই কারণেই সিলমোহর দিল এই প্রস্তাবে।
দেশের সব চিকিৎসক সংগঠন এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সরব হয়েছেন মেডিক্যাল পড়ুয়ারাও। স্বাস্থ্য মহলের একটা বড় অংশের দাবি, দেশের প্রায় ৪৫ হাজার ডাক্তারি স্নাতকোত্তর আসনের মধ্যে ১৯ হাজারই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের। প্রতি বছরই কিছু আসন ফাঁকা থাকে। পার্সেন্টাইল অফ মার্কস কমানো নতুন নয়। কিন্তু একেবারে শূন্য করে দেওয়া নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, শূন্য পার্সেন্টাইলের অর্থ শূন্য শতাংশ নয়। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, কেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এবারে পকেটে পয়সা থাকলেই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ মিলবে।