বাসুদেব ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি: এখানে দেবী তপ্ত কাঞ্চণবর্ণা। নরবলির গল্পও এখন অতীত। চাল-কলায় গড়া মানব আকৃতিকেই এখন বলি দেওয়া হয় রীতি মেনে। দই-কাদা খেলে সূচনা হয় রাজবাড়ির পুজোর প্রস্তুতি। দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় শূন্যে গুলি ছোঁড়া হয় রাইফেল থেকে। এটাই জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির প্রাচীন ঐতিহ্য। জন্মাষ্টমীর পরদিন রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপে কাঠামো পুজা দিয়েই শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর। আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির সূচনা বলতে, কাঠামোপুজো, নন্দোৎসব এবং কাদাখেলার।
আরও পড়ুন-পাইলট সঙ্কট, বাতিল ৬০০ উড়ান, আদালতের দ্বারস্থ আকাসা এয়ার
জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজার ইতিহাসে নরবলির তথ্য পাওয়া যায়। তবে সে সবই এখন অতীত। এখন চাল-কলা দিয়ে মানব আকৃতি তৈরি করে বলি দেওয়া হয়। এই বছর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ৫১৩ বছরে পদার্পণ করবে। রাজপরিবারের কুলপুরোহিত শিবু ঘোষাল জানান, জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী জন্মাষ্টমীর পরদিন কাঠামো পুজো হয়। প্রতিবছর নিরঞ্জনের পর প্রতিমার মূল কাঠামোকে জল থেকে তুলে রাজবাড়ির মণ্ডপে রেখে দেওয়া হয়। সেই কাঠামোকেই পুজো করা হয়। কাঠামোপুজোর পর নন্দোৎসব এবং দধিকাদা খেলা হয়। কাদা খেলার মাটি দিয়েই প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয় সেদিনই। সবটাই শোনা কথা। বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের দুর্গাপুজোর ইতিহাসে নরবলির কথা শোনা যায়।
আরও পড়ুন-কাল শিল্প ও প্রবাসী সম্মেলনের প্রস্তুতি চরমে
রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শিষ্য সিংহ ৫০০ বছর আগে জঙ্গলে শিকারে গিয়ে দেবীর পুজো করার জন্য নরবলির কথা ভাবেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। এক সঙ্গীকেই বলি দিয়ে সেই রক্ত দিয়েই দুর্গার পুজো করা হল। সেই থেকে প্রতিমার গায়ের রং তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা। সেই দিনও আর নেই, হারিয়ে গিয়েছে সেই কাহিনিও। বৈকুণ্ঠপুর রায়কত রাজ এস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা শিষ্য সিংহ নরবলি দিয়ে মৃন্ময়ী মা ভগবতীর পুজার সুচনা করেছিলেন। শিষ্য সিংহের ভাই বিশ্ব সিংহ ছিলেন কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাইতো বংশপরম্পরায় বৈকুণ্ঠপুর রাজ পরিবারের দেবী দুর্গার গায়ের রং আজও তপ্তকাঞ্চনবর্ণা।