প্রতিবেদন : আধার পরিচয়পত্র নিয়ে দেশবাসীর আতঙ্ক দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সরকারি পরিষেবা-সহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আধারের পরিচয়পত্রকে বাধ্যতামূলক করেছে মোদি সরকার, অথচ এর সুরক্ষা নিয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয়দের আধার পরিচয়পত্র নিয়ে এবার বিস্ফোরক দাবি করেছে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিজ। সম্প্রতি মুডিজের রিপোর্টে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলে বায়োমেট্রিক সিস্টেম ও গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-আজও রাজরীতি মেনেই হয় পাহাড়ের প্রথম দুর্গাপুজো
আন্তর্জাতিক এই সংস্থার রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বেশিরভাগ সময়ে আধার কার্ডে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা যায়। পাশাপাশি অত্যন্ত গরম এলাকায় এই কার্ডের কার্যকারিতা কার্যত ‘জিরো’। একইসঙ্গে আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেও বিস্তর সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মুডিজ। সংস্থার অভিযোগ, ব্যক্তিগত ও কর্মক্ষেত্রে বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পরিচয়পত্র। অথচ সেখানেই বিস্তর জালিয়াতির আশঙ্কা ও অভিযোগ। ফিঙ্গার প্রিন্ট, ওটিপি সব ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
আরও পড়ুন-সাইবার অপরাধ দমনে নেতৃত্ব দিতে সিআইডিতে নতুন পদ, সিবিআই নয়, সিআইডিতে আস্থা হাইকোর্টের
এর জেরেই একাধিক গোপন তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। অন্যের আধারের তথ্য নিয়ে গোপনে একাধিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ সামনে আসছে। প্রতারিত হচ্ছেন বহু মানুষ। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থার এই রিপোর্ট সামনে আসতেই বিপাকে পড়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, আধারকে বাধ্যতামূলক করে আখেরে দেশবাসীর সমস্ত তথ্য হাতিয়ে নিতে চাইছেন মোদি। কিন্তু আধার নিয়ে জালিয়াতি ও কারচুপির একাধিক ঘটনাই বুঝিয়ে দিচ্ছে এর সুরক্ষা কতটা অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন-পাথরপ্রতিমায় আরও নতুন ৪টি জেটির শিলান্যাস করলেন মন্ত্রী
আধারের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিজ ইনভেস্টরসের দাবি, অনেক সময় আধারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা পাওয়া যায় না এবং বায়োমেট্রিক তথ্যও সবসময় নির্ভরযোগ্য হয় না। এ-ছাড়া তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক। সম্প্রতি মনরেগার কাজে আধারের মাধ্যমে মজুরি মেটানোর নির্দেশিকা জারি করেছে মোদি সরকার। এই অবস্থায় মুডিজের রিপোর্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মুডিজের দাবি, অনেক সময় আধারের তথ্য যাচাইয়ের সমস্যা হয় এবং বায়োমেট্রিক তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। মুডিজ জানিয়েছে, আধার পরিচালনা করে ইউআইডিএআই। দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের পরিষেবা পৌঁছে দিতে আধার বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র। অনেক সময় পরিষেবা পাওয়া যায় না আধারে সমস্যার কারণে।
আরও পড়ুন-রাজা রামমোহনের মামাবাড়ির পুজো ৬০০ পেরোল
গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা রিপোর্টে মুডিজ আধারকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিজিটাল পরিচয়পত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেইসঙ্গে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আধারে তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বহু গলদ ধরা পড়েছে। মুডিজের দাবি, যেহেতু আধারে মানুষের অনেক স্পর্শকাতর এবং ব্যক্তিগত তথ্য থাকে, ফলে সেখানে তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। মুডিজের প্রস্তাব, শুধুমাত্র ইউআইডিএআইয়ের উপর ক্ষমতা না দিয়ে আধারের কর্তৃত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে ব্যক্তিগত তথ্যের নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা আরও আঁটোসাঁটো হবে।
আরও পড়ুন-দালালচক্রের পর্দাফাঁস ধৃত ৪
এদিকে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, এবার থেকে আধার নম্বর ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে ভোটার কার্ড। বর্তমানে ভোটার রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম ৬ এবং ৬বি-তে আধার নম্বরের তথ্য দিতে হয়। এই নিয়মে বদল এনে নতুন ফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে কমিশনের তরফে একথা জানানো হয়।