সুমন করাতি হুগলি: ৫০০ বছরের পুজো। রীতি এবং প্রথা বলতে যা বোঝায় তাও কিছুটা স্বতন্ত্র। হুগলির খানাকুল সেনহাটির মিত্রবাড়ির পুজোর মূল আকর্ষণ কিন্তু এটাই। ষষ্ঠীর দিন বাড়ির কুলদেবতা রঘুনাথ জিউকে তাঁর আপন গৃহ থেকে নিয়ে আসা হয় দুর্গাদালানে। পুজোর চারটে দিন তাঁর অধিষ্ঠান এখানেই। তারপরে দশমীতে তাঁকে রথে চাপিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আপন গৃহে। একে বলা হয় অকাল রথযাত্রা। রথের রশিতে টান দেন পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন-গঙ্গাজলঘাটি জুড়ে পড়ল চোর, চরিত্রহীন পোস্টার, বিজেপি সাংসদকে নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন
এই বাড়িতে পুজো হয় জলঘড়িতে সময় মেপে। সন্ধিপুজোও হয় জলঘড়ির সময় অনুযায়ীই। তখন যেহেতু আধুনিক ঘড়ির চল ছিল না, সেইকারণে ভরসা বলতে ওই ঘড়িই। উপহার হিসেবে এসেছিল বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকেই। জানালেন, মিত্রপরিবারের সদস্য কুমারকৃষ্ণ মিত্র। লক্ষণীয়, মিত্রদের জমিদারি তখন ছিল বর্ধমানের মহারাজার অধীনে। বলা যেতে পারে সেনরাজাদের সমসাময়িক। এই মিত্রদের পুজো নিয়ে বাজারে প্রচলিত আছে আরও কাহিনি। সন্ধিপুজোর সময় নাকি আকাশের বুকে উড়ে বেড়ায় দু’টি শঙ্খচিল। দশমীতে মায়ের বিসর্জনের আগে নয়, এই বাড়িতে বিবাহিত মহিলারা সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন সন্ধিপুজোতে। সেই সিঁদুরই সারাবছর ধরে সিঁথিতে পরেন পরিবারের বধূরা।
আরও পড়ুন-বিশ্বকাপের আগে মুরলীর ছবির ট্রেলর লঞ্চ
দশমীর দিন মিত্রবাড়ির দুর্গাপ্রতিমাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজহাটি বাজারে মা বিশালাক্ষী মন্দিরে। এখানেই মিলন হয় দুই দেবীর। এরপর বিসর্জনের পালা। আগে তালপাতার পুঁথিতে দুর্গা নাম লেখা হত। এখন অবশ্য তা হয় না, লেখা হয় কাগজে। আসলে সময়ের হাত ধরে বদলে গিয়েছে অনেককিছুই। নহবতে শোনা যায় না আর সানাইয়ের সুর। এখন শুধুই ঢাকের আওয়াজ। কামান দাগাও এখন ইতিহাস। তবে অষ্টমী, নবমীতে ছাগবলির রীতি এখনও অব্যাহত।