অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছে বিজেপি সরকার। অক্টোবরের দুই ও তিন তারিখ দিল্লির কমসূচির পর বিজেপির নেতৃত্ব দিশেহারা। কেন্দীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে অপব্যবহার শুরু করল বিজেপি সরকার। আবার ৩ অক্টোবর অভিষেককে ইডির সমন— এক অভিষেকেই কুপোকাত বিজেপি শিবির।
আরও পড়ুন-আলোকিত তিন
২১ জুলাই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা কর্মসূচির দিন। আর সেই দিনই ইডি ডেকে পাঠানোয় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ইডির নাম উঠে আসছে। এর আগে নবজোয়ার চলার মাঝপথে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ডেকে পাঠায় অভিষেককে। নবজোয়ার কর্মসূচি বন্ধ করে পৌঁছে যান তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে। INDIA সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে যোগ দেওয়ার দিন ইডি ডেকে পাঠায় আবার অভিষেককে। দিল্লিযাত্রা বাতিল করেছিলেন তখন। দিল্লির ধর্নার দিনে আবার ডেকে পাঠানোর ফলে বিজেপির মধ্যে যে আতঙ্কের তৈরি হয়েছে তা স্পষ্ট— ‘ইয়ে ডর, মুঝে আচ্ছা লাগা’—এই ডায়লগ এখন সকল তৃণমূল কর্মীর মুখে মুখে। আসলে যতটা না তদন্ত করার জন্য অভিষেককে ডেকে পাঠানো হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি দিল্লির কর্মসূচিকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-জাতির জনক
বাংলার মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পঞ্চাশ লক্ষ চিঠির মাধ্যমে দিল্লির অফিসে পৌঁছে গেল। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া এবং আবাস যোজনার টাকা না পাওয়ার ফলে বঞ্চনার শিকার বাংলার মানুষ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে—নেতৃত্বে ‘অভিষেক’—সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি সবাইকে দিল্লিতে পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলার ১৬ লক্ষ কৃষকের চোখের জল নিয়ে খেলা করছে বিজেপি সরকার। বিজেপির অচ্ছে দিন মানুষের কাছে খারাপ বার্তা আনবে, তা বোধ হয় কোনওদিন ভাবতে পারেনি। দিল্লির কর্মসূচির সরাসরি সম্প্রচার, জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয়ের সামনে এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করানো হচ্ছে। এ-ছাড়া রাজ্যের সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা-সহ বিশেষত যেসব গ্রামীণ রাস্তা কিংবা আবাস যোজনায় বঞ্চিত মানুষের একত্রিত করে দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। যাত্রার প্রাপকদের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব দু-হাজার মানুষকে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ ট্রেন ভাড়া করার পর তা বাতিল করা হয়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়ে ব্লক বুক করার পর তা বাতিল করে দেওয়ায় রেলমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের চর্চা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন-অলিগলি কুমোরটুলি
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মাধ্যমে সোশ্যাল অডিট করা হয়েছে সারা দেশের গ্রামোন্নয়নকে সামনে রেখে। সোশ্যাল অডিটে সাফল্যের দিক থেকে প্রথম পাঁচে পশ্চিমবঙ্গ— তবে কেন আর্থিক বঞ্চনা? কেন আটকে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা?— উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন মোদি সরকার। গোটা দেশে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ২৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নানা প্রকল্পের রিপোর্টের সোশ্যাল অডিট করা হয়েছে— এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ১৫ হাজার ৬১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সোশ্যাল অডিট হয়েছে— সংখ্যার নিরিখে চতুর্থ স্থানে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লির জাতীয় সম্মেলনে প্রশংসিত হয়েছে আমাদের বাংলা। আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে সরকারি সম্মেলনে সোশ্যাল অডিটের রিপোর্ট তুলে ধরা হয় সব রাজ্যের উপস্থিতিতে— সেখানে বাংলার পারফরমেন্সের সুখ্যাতি করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তারা।
আরও পড়ুন-থিয়েটার ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যেগকে কুর্নিশ ব্রাত্যর
রাজ্যের ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না মোদি সরকার— বকেয়ার পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। গোটা দেশে আবস যোজনায় টার্গেট ২ কোটি ৯৫ লক্ষ বাড়ি—বরাদ্দ ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এই পর্যন্ত ২ কোটি ৫৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩৪টি বাড়ি তৈরি হয়েছে বাংলায়। এক্ষেত্রে টার্গেট ৪৫ লক্ষ ৭০ হাজার ৫২টি বাড়ি। মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী ৩৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৮৪টি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্পে বাংলাকে ৬০ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। তার মধ্যে ৩১ হাজার ৭৯৭ কোটি হাতে পেয়েছে রাজ্য অথচ কেন্দ্রই বলছে ৪১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা খরচের কথা। অর্থাৎ ১০ হাজার ৫১ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোষাগার থেকে ফলে রাজ্যের বকেয়া এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। বকেয়ার ইস্যুতে বাংলার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হতে চাইছে না কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ভুয়ো জব কার্ডের তালিকায় উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থাকলেও তাদের টাকা কিন্তু আটকে থাকছে না। পশ্চিমবঙ্গ ভুয়ো জব কার্ডের তালিকায় শেষের দিকে রয়েছে অথচ টাকায় ফাঁকি দিল কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ ভুয়ো জব কার্ড তালিকায় দেশের প্রথম উত্তরপ্রদেশের টাকা দিয়ে দেওয়া হল বিজেপি-শাসিত রাজ্য বলে। ডাবল ইঞ্জিনের সরকার বিজেপি সরকার বলেই উত্তরপ্রদেশ ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যার নিরিখে সবার আগে থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পায় উত্তরপ্রদেশ টাকা? গুজরাট কীভাবে টাকা পায়? মধ্যপ্রদেশ কীভাবে টাকা পায়? কেন বঞ্চিত হয় আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার বারো, তেরো কোটি মানুষের কাছে প্রশ্ন রাখতে চায় তৃণমূল নেতৃত্ব। দিল্লির বুকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পৌঁছে দিতে চায় সেই ঝড়কে— আর এই আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছে বিজেপির সরকার এবং বিজেপি দল।
আরও পড়ুন-ইস্টবেঙ্গলের জয়ে নায়ক ক্লেটন
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আট বছরে নব্বইবার বিদেশ সফর করেছেন। খরচের পরিমাণ বারো হাজার কোটি টাকা। মোদির বিশেষ বিমান কেনার জন্য খরচ আট হাজার পাঁচশো কোটি টাকা এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। মোদি নিজেকে ঈশ্বরের বরপুত্র হিসেবে ঘোষণা করছেন—মোদি-মন্দির তৈরি করা হবে নাকি দেশে? ইলেকট্রোর্যাল বন্ডে যে টাকা বিজেপি দল গত আট বছরে পেয়েছে তা সব রাজনৈতিক দলকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বিনিময়ে বড় বড় কোম্পানিকে ঋণ মকুব করে দিতে হয়েছে মোদি সরকারকে। কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে অন্য পথে বিজেপির ফান্ডে তার ভাগ চলে যাচ্ছে। তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। দেশের সরকারের টাকায় রামমন্দির তৈরি হতে পারে, ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সংসদভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এমনকী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে সংসদভবন যাওয়ার জন্য মাটির নিচে রাস্তা তৈরিতে খরচ করা হয়। অথচ গরিব মানুষের হকের ১০০ দিনের কাজের পাওনা কিংবা আবাস যোজনার টাকা না দেওয়ার ফল ভুগতে হবে এই বিজেপি সরকারকে। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে ঠিক হবে মহাত্মা গান্ধী না নাথুরাম গডসের স্বর বাজবে দেশের কোনায় কোনায়।