আলোকিত তিন

আসছে পুজো। প্রকাশিত হয়েছে ‘ছড়াপত্র সুসাথী’, ‘কিশোর দুনিয়া’, ‘দীপশিখা’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা (Durga puja edition)। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, সম্পাদকরা প্রকাশ করেছেন ভালবেসে। পত্রিকাগুলোর উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ছোটদের ছড়া পত্রিকা ‘ছড়াপত্র সুসাথী’। মেদিনীপুর শহর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ৩৯ বছর ধরে। প্রদীপ দেব বর্মনের সম্পাদনায়। বেরিয়েছে শারদ সংখ্যা। ছড়ার পত্রিকা। তবে শুধুমাত্র পাতাজুড়ে ছড়ার পাহাড় সাজানো হয়নি। রয়েছে নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ।
গল্প লিখেছেন রোহিণী ধর্মপাল। শিরোনাম ‘বাজখাঁই’। রাজা-রানি-মন্ত্রী-সান্ত্রীদের নিয়ে লেখা। জমজমাট। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও আনন্দ দেবে।

আরও পড়ুন-জাতির জনক

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। রবীন্দ্র-সুহৃদ। নানা বিপরীতধর্মী শিল্প মাধ্যমের কুশলী-কোলাজ মানুষটি। তাঁকে নিয়ে গদ্য ‘বিচিত্র প্রতিভাধর শিল্পী’ উপহার দিয়েছেন বিনোদ মণ্ডল। প্রতিভাধর মানুষটিকে চিনতে সাহায্য করে এই লেখা।
আছে ক্রোড়পত্র। বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে উত্থানপদ বিজলী, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, রূপক চট্টরাজ, সুনির্মল চক্রবর্তী, কালিদাস ভদ্র, তপনকুমার দাসের উপর। এঁদের একগুচ্ছ ছড়ার পাশাপাশি প্রকাশ করা হয়েছে এঁদের নিয়ে নানাজনের লেখা, সংক্ষিপ্ত জীবনী, খবরাখবর এবং বেশকিছু ছবি। অংশটি খুবই আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান। এই সময়ের পাঠকদের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ-গবেষকদেরও কাজে লাগতে পারে।
ছড়া বিভাগ মাতিয়ে দিয়েছেন নবীন এবং প্রবীণ কবিরা। পবিত্র সরকারের ছড়ার শিরোনাম ‘পছন্দসই লোক’। শুরুটা এইরকম ‘নোংরা বেড়াল উঠোনে দেখলে/ চোখ বুঝি কর পিটপিট তুমি?/ চৌকাঠে জোরে মাথাটা ঠেকলে/ দু-ঘণ্টা করো খিটখিট তুমি?’

আরও পড়ুন-থিয়েটার ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যেগকে কুর্নিশ ব্রাত্যর

বেশ মজার। রয়েছে চমৎকার অন্ত্যমিলের ব্যবহার।
এ-ছাড়াও আনন্দ দেয় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীতি মুখোপাধ্যায়, আনসার উল হক, হাননান আহসান, দীপ মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস বসু, দেবব্রত দত্ত, সুখেন্দু মজুমদার, আরণ্যক বসু, নির্মলেন্দু শাখারু, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, তরুণকুমার সরখেল, মৃণালকান্তি দাশ প্রমুখের ছড়া। বাকি ছড়াগুলোও দারুণ। মনের পাতায় দোলা দিয়ে যায়।
প্রয়াত শিশুসাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়েছে। আছে তাঁকে নিয়ে সম্পাদকের একটি লেখা। সব মিলিয়ে অনবদ্য একটি সংখ্যা। প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ শিল্পী গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাজের প্রশংসা করতেই হয়। দাম ৫০ টাকা।
ছোটদের নতুন স্বাদের পত্রিকা ‘কিশোর দুনিয়া’। প্রকাশিত হচ্ছে ২২ বছর ধরে। বেরিয়েছে শারদ সংখ্যা। তাপস মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। রকমারি লেখার সমাহার। বিশেষ রচনায় ‘যুগপুরুষ রাজা রামমোহন রায়’কে নিয়ে লিখেছেন সুনির্মল চক্রবর্তী। সমুদ্র বসুর লেখার শিরোনাম ‘কাগজের উৎস সন্ধানে’। এ-ছাড়াও আছে অরুণাভ মিশ্র, আবির গুপ্ত, প্রণবকুমার পাল, মহুয়া ভট্টাচার্য গোস্বামী এবং সম্পাদকের লেখা।
উপন্যাস লিখেছেন তপনকুমার দাস। শিরোনাম ‘মুঠো ফোন এবং বিশ্ব’। কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছেন যদুনাথ এবং তাঁর পরিবার। হুড়মুড়িয়ে ঢুকেছে আরও কিছু চরিত্র। আধুনিক যুগে মুঠো ফোন কতটা অপরিহার্য, দেখিয়েছে এই ছোট্ট উপন্যাস। চলনে গতি আছে। কোথাও হোঁচট খেতে হয় না। পড়তে ভাল লাগে।

আরও পড়ুন-ডেঙ্গি বৈঠকে এবার কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

বড় গল্প ‘ডোডো পাখির খোঁজে’ লিখেছেন কৌশিক ঘোষ। সাহেব এই গল্পের কেন্দ্রে। তার হাত ধরে ঘুরে আসা যায় ডুয়ার্সের জঙ্গলে। দেখা যায় ঘটনার ঘনঘটা।
আছে কয়েকটি ছোটগল্প। বিশেষভাবে মন ছুঁয়ে যায় চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের ‘লোকটা’, সুকুমার রুজের ‘ঠাকুরমা ফিরে এলেন’, সিদ্ধার্থ সিংহর ‘ঝিলম গাছের তলা’, সমর পালের ‘ভলভো বাসে ভূতের সঙ্গে’, চন্দন আচার্যর ‘আমার মা’।
ছন্দ-ছড়ার ঢেউ তুলেছেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, শৈলেনকুমার দত্ত, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, স্বপনকুমার রায়, নির্মল করণ, জগদীশ মণ্ডল, বসন্ত পরামাণিক, জুলি লাহিড়ী প্রমুখ।
দুটি চমৎকার বেড়ানোর লেখা উপহার দিয়েছেন সমীর কুমার ঘোষ এবং অপূর্বরতন মিত্র। সবমিলিয়ে জমজমাট একটি সংখ্যা। পাতায় পাতায় রয়েছে শংকর বসাকের অলংকরণ। দাম ১৫০ টাকা।

আরও পড়ুন-দুর্যোগ : সতর্কতার সঙ্গে কাজের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘দীপশিখা’। ২৭ বছর ধরে। প্রদীপকুমার সামন্তর সম্পাদনায়। বেরিয়েছে শারদ সংখ্যা। সমৃদ্ধ হয়েছে নানা বিষয়ের লেখায়। আছে কয়েকটি ছোটগল্প। ভাল লাগল গুরুস্বরূপ মুখোপাধ্যায়ের ‘মাতৃসদন’। একটি ছোট্ট পরিবারকে ঘিরে দানা বেঁধেছে কাহিনি। সমাজকে শিক্ষা দেয়। এ-ছাড়াও ভাল লাগল প্রবীর জানার ‘অভিনয়’, রণজিৎ সরকারের ‘গন্তব্য’, অলোককুমার প্রামাণিকের ‘কুহেলিকা’ গল্পগুলো।
প্রবন্ধ লিখেছেন প্রদীপকুমার পাল, বটুকৃষ্ণ হালদার। কাশীনাথ সাহার রম্যরচনাটি মনকাড়া। ভ্রমণ কাহিনি উপহার দিয়েছেন রাধারমণ গাঙ্গুলি। এ-ছাড়াও আছে একগুচ্ছ কবিতা এবং ছড়া। যদিও সবগুলো মানোর্ত্তীর্ণ নয়। নির্বাচন আরেকটু আঁটসাট হওয়া উচিত ছিল। তবে, সবমিলিয়ে আন্তরিক আয়োজন। পাতায় পাতায় ছবি এঁকেছেন ব্রজেশ ভাণ্ডারী।

Latest article