চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: ভুল করলেন, শুধরেও নিলেন। খলনায়ক হতে হতেও নায়ক বনে গেলেন জেসন কামিন্স। বিশ্বকাপারের জোড়া গোলে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মাজিয়া স্পোর্টস ক্লাবকে ২-১ গোলে হারাল মোহনবাগান। সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল তারা। পরপর দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষেই থাকল সবুজ-মেরুন।
আরও পড়ুন-নিরামিষ খেয়েই প্রতিমা গড়তে বসেন মৃৎশিল্পী
যুবভারতীতে গান্ধীজয়ন্তীর দিন রাতে প্রায় ৩০ হাজার দর্শকের সামনে অতি চালাকিতে পয়েন্ট হারাতে বসেছিল মোহনবাগান। অথচ ম্যাচের শুরু থেকে দাপট দেখিয়ে ২৮ মিনিটেই গোল পেয়ে গিয়েছিল দল। হুগো বুমোসের পাস থেকে অনবদ্য গ্রাউন্ডারে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন কামিন্স। কিন্তু ছবিটা বদলে যায় বিরতির আগেই। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে ডাগ আউটের সামনে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা জলের বোতলে সজোরে লাথি মারলেন জুয়ান ফেরান্দো। ক্ষোভে ফুঁসছিলেন মোহনবাগান কোচ। কারণ, ততক্ষণে কামিন্স, দিমিত্রি পেত্রাতোসদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শো-অফে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে দল।
ম্যাচের সময় তখন ৪০ মিনিট। পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। আর্মান্দো সাদিকু বল বসান। এগিয়ে আসেন কামিন্স। পেনাল্টি তিনি ভাল মারেন। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল বুমোস, কামিন্স ও দিমিত্রির মধ্যে জরুরি আলোচনা। তবে কি পেনাল্টি মারা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা? বুমোস বল চাইলেও তাঁকে দিলেন না কামিন্স। বল বসিয়ে নিজেই মারতে গেলেন। কিন্তু গ্যালারিকে অবাক করে গোলে শট না নিয়ে পাস বাড়ালেন স্বদেশি দিমিত্রিকে। পিছন থেকে দৌড়ে শট নিতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন দিমিত্রি। বল ক্লিয়ার করে দিলেন মাজিয়ার ডিফেন্ডার সেবাস্তিয়ান। লিওনেল মেসি একবার পেনাল্টিতে লুইস সুয়ারেজকে দিয়ে এভাবে গোল করিয়েছিলেন। মেসিভক্ত কামিন্স হয়তো তেমনটাই করতে চেয়েছিলেন।
পেনাল্টি থেকে গোলটা হয়ে গেলে মাজিয়া আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত না। ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে মোহনবাগান। এই ঘটনার মিনিট পাঁচেক পর বিরতির আগেই গোলশোধ করে দেয় মালদ্বীপের ক্লাব। প্রতিআক্রমণে গিয়ে বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে অনবদ্য গোল করেন মাজিয়ার জাপানি মিডফিল্ডার তোমোকি ওয়াডা। গোলরক্ষক বিশাল কাইথের কাছে কোনও সুযোগ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই কামিন্স-দিমিত্রি জুটির পেনাল্টি নষ্ট নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায় সবুজ-মেরুন শিবির।
আরও পড়ুন-কুলটির যৌনকর্মীদের পুজোর থিম আমাদেরই মাটি আমাদেরই মুখ
পেনাল্টি নষ্ট, অফকালার থাকার কারণেই হয়তো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দিমিত্রিকে তুলে সাহাল আব্দুল সামাদকে নামিয়ে দেন জুয়ান। পরিবর্ত হিসেবে নামান মনবীর সিং, শুভাশিস বোসকেও। জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে জুয়ানের দল। একের পর এক অনবদ্য মুভ তুলে আনে মোহনবাগান। কিন্তু গোলের নিচে প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়েছিলেন মাজিয়া গোলরক্ষক হোসেন শেরিফ। অজস্র গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সাদিকু, কামিন্স, লিস্টন কোলাসো, মনবীররা। ম্যাচে মোহনবাগানের দশটি গোলমুখী শটের মধ্যে সাতটিই সেভ করেছেন মাজিয়া গোলরক্ষক। অবশেষে সমর্থকদের স্বস্তি দিয়ে সংযুক্ত সময়ের তিন মিনিটে সেই কামিন্সই জয়সূচক গোলটি করেন। গোলের পাস ছিল সাহালের।
আরও পড়ুন-আজ অভিষেকের নেতৃত্বে দিল্লিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
ম্যাচ শেষে দেখা গেল কামিন্স ও পেত্রাতোস আলাদা করে কথা বলছেন। তবে কি সেই পেনাল্টি নিয়েই? তাঁদের জন্যই যে সহজ ম্যাচ কঠিন হয়ে গিয়েছিল! ম্যাচের পর পেনাল্টি মিস নিয়ে মোহনবাগান কোচ জুয়ান বললেন, ‘‘মাঠে ওরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমার মনে হয় না, দ্বিতীয়বার ওরা এমনটা করবে।’’