প্রতিবেদন : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC Agitation) আন্দোলনের চাপে পড়ে এবার ঐক্য বৈঠকের প্রস্তাব পাঠালেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে দূত পাঠাচ্ছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। আজ, শনিবার দলের বার্তা নিয়ে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার দার্জিলিং যাবেন। দিল্লি থেকে আজই দার্জিলিংয়ে পৌঁছচ্ছেন রাজ্যপালও। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দার্জিলিং রাজভবনে তৃণমূলের দূত সদস্যদের মুখোমুখি হবেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজভবনের ধরনা মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করে অভিষেক বলেন, আমরা রাজ্যপাল পদটিকে সম্মান করি তাই তাঁর পাঠানো প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ৭০০ কিলোমিটার দূরে দূত পাঠাচ্ছি। কিন্তু ৩০ জনের মূল ডেলিগেশন টিম কলকাতায় রাজভবনে যাবে আমার নেতৃত্বে। সঙ্গে পঞ্চাশ লক্ষ চিঠি। এরপরই অভিষেকের হুঁশিয়ারি, রাজ্যপাল যদি মনে করেন তিনি আমাদের সঙ্গে এখানে দেখা করবেন না, এদিক-ওদিক করে বাইরে থাকবেন, তবে আমিও বলে রাখছি, যতদিন না তিনি রাজভবনে আমাদের মূল ডেলিগেশন টিমের সঙ্গে দেখা করছেন ততদিন আমরা এখানে ধরনা চালিয়ে যাব। তাঁর সংযোজন, রাজ্যপাল যদি ভেবে থাকেন এভাবে লুকোচুরি খেলে দুর্গাপুজো পার করে দেবেন, ভুল করছেন! পুজোর সময়ও আমি এখানেই ধরনা মঞ্চে বসে থাকব। সপ্তমী-অষ্টমীতেও একাই বসে থাকব। কাউকে এখানে আসতে হবে না। শুধু এই লড়াইয়ে পাশে থাকবেন। যতদিন না বঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি ততদিন আমিও হাসব না, আপনাদের নতুন জামাকাপড় দিতে না পারলে আমিও নতুন জামাকাপড় পরব না। সাফ কথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। বৃহস্পতিবার থেকেই অভিষেক ধরনা মঞ্চে রয়েছেন। শুক্রবার দিনভর মঞ্চে গান-বক্তৃতা সহ নানা কর্মসূচি হয়েছে। সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল ও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, রাজ্যপাল যদি দুটি ব্যাখ্যা আমাদের দিয়ে দেন তবে আমরা ধরনা তুলে নেব। ১. কুড়ি লক্ষ মানুষকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করিয়েছে কি না? ২. যদি কাজ করিয়ে থাকে তবে কোন আইনে দু’বছর ধরে তাদের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র?
রাজ্যপাল যেভাবে অকারণে শিলিগুড়ি-দিল্লি-কেরল-শিলিগুড়ি-দিল্লি যাতায়াত করছেন তা তুলে ধরে অভিষেক বলেন, আমাদের যাতে ফেস করতে না হয় তাই এসব অকারণ ছুটোছুটি করছেন। দিল্লিতে তাঁর হয়তো কোনও কাজই নেই। কী করতে গিয়েছেন তিনি দিল্লিতে? বাংলার বকেয়া নিয়ে কথা বলতে! নাকি নির্দেশ নিতে? প্রশ্ন অভিষেকের।
আরও পড়ুন- সিকিমকে টাকা বাংলা বঞ্চিতই, ২৪ কোটি বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
রাজভবন-ধরনার দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই জমজমাট (TMC Agitation) রাজভবন-চত্বর। সকাল থেকে দুপুর হতে না হতেই জনস্রোত রাজভবন-চত্বরে। বৃহস্পতিবার সেই যে মোহরকুঞ্জ থেকে জনসমুদ্র-সমান মিছিল নিয়ে রাজভবনের ধরনা মঞ্চে এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠায় বসে রয়েছেন সেখানেই। এদিন সকাল ১১টা থেকে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লির পর কলকাতার রাজভবনের ধরনাতেও উপচে পড়া ভিড়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পণ করেছেন যতদিন না রাজ্যপাল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করছেন, ততদিন রাজভবনের বাইরে ধরনা-অবস্থান-বিক্ষোভ চলবে। শুক্রবারও সকাল থেকেই ধরনা মঞ্চে হাজির ডেরেক ও’ব্রায়েন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ডাঃ শান্তনু সেন, সমীর চক্রবর্তী, কুণাল ঘোষ, জহর সরকার, অলোক দাস, দোলা সেন-সহ সিনিয়র লিডাররা। একে একে মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা, বীরবাহা হাঁসদার মতো তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব। গলা মেলালেন সমীর চক্রবর্তীও। বিকেলে বক্তব্য রাখেন কুণালও। বক্তৃতার ফাঁকে তৃণমূলের জয়ী ব্যান্ড-এর নতুন সদস্যরা গান-আবৃত্তিতে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন। যত বেলা গড়িয়েছে ক্রমশ ভিড় বেড়েছে। ছাত্র-যুবদের পাশাপাশি ধরনা স্থলে এসে যোগ দিয়েছেন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। শুধু ধরনা মঞ্চ বা সামনের রাস্তা নয়, গোটা রাজভবন চত্বর জুড়েই ভিড়। দলে দলে এসে পৌঁছচ্ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। এর মাঝেই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এসে যাওয়ায় ধরনা মঞ্চেই তা ঘোষণা করলেন সুদীপ বন্দোপাধ্যায়। এভাবেই দুপুরেই জনস্রোতে পরিণত হল ধরনাস্থল। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে তা পরিণত হলো জনপ্লাবনে।