খুঁটিপুজোয় ঢাকে কাঠি, মেক্সিকোর দুর্গোৎসবে চিরাচরিত বাঙালিয়ানা

Must read

ইশিতা মাইতি, গুয়াদালাহারা (মেক্সিকো): শারদপ্রাতে সব যেন একই থেকে যায় এই প্রবাসেও। সেই সকাল সকাল উলুধ্বনি। শঙ্খ। মন্ত্রোচ্চারণ। নামাবলি গায়ে পুরোহিত খুঁটিপুজো করছেন। দেখে মনে হবেই না এই ছবি বাংলা বা ভারতের কোনও এলাকার নয়, লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে উত্তরের প্রজাতন্ত্র মেক্সিকোর (Mexico- Durga Puja) গুয়াদালাহারায়। এবার খুঁটিপুজোর মধ্যে দিয়েই হয়েছে আমাদের এই প্রবাসী পুজোর সূচনা।
গুয়াদালাহারা দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোগে এটিই শহরের একমাত্র দুর্গাপুজো (Mexico- Durga Puja)। তবে এই পুজোর বিশেষত্ব হল এখানে বাঙালিদের পাশাপাশি মেক্সিকানদের সমান উপস্থিতি। পুজোর আয়োজন থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সর্বত্র তাঁরা দুর্গাপুজোয় মেতে থাকেন। অন্য ভাষা-সংস্কৃতির উৎসবকেও সাদরে আপন করে নেন। প্রবাসে পুজো হয় উইকএন্ডে। এবার আমাদের পুজো রবিবার ২২ অক্টোবর। এখানের আকাশে শরতের মেঘের উপস্থিতি না থাকলেও পুজোর সময় চারপাশের আয়োজন ঘিরে হয়ে ওঠে যেন একটুকরো বাংলা। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে এখানকার দুর্গাপুজো। মেক্সিকান শিল্পীর হাতেই তৈরি আমাদের সেরামিকের দুর্গাপ্রতিমা। ২০১৭ সালে প্রতিমার একটি ছবি এঁকে মেক্সিকান শিল্পীদের দেওয়া হয়। সেরামিক শিল্পীরা নিখুঁত হাতে তৈরি করেন সেই প্রতিমা। ওই প্রতিমার বিসর্জন হয় না। তিনি রয়েছেন এক প্রবাসী বাঙালি পরিবারে। সেখানে হয় নিত্যসেবা।

আরও পড়ুন- বিবর্তনে দুর্গা

এবারের পুজোয় ডাকের সাজে সেজে উঠবে আমাদের প্রতিমা। সপ্তাহের শেষে ল্যাপটপ বন্ধ করে এখন একটাই কাজ, পুজোর প্রস্তুতি। কোথাও যেন কোনও খুঁত না থাকে। গুয়াদালাহারা দুর্গাপুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা হলেন উৎসব দাস। কলকাতার বেহালার বাসিন্দা। আমাদের প্রত্যেককে উদ্যোগ নিয়ে একত্রিত করা ওর মূল কাজ। তারপর একসঙ্গে পুজোর কাজ তো আছেই। সকলে মিলে আলপনা দেওয়া, মণ্ডপ সাজানো, ভোগের মেনু ঠিক করা, ঠিক যেন বাড়ির পুজো মনে হয়। পুজোর ক’টা দিন নিজের বাড়ি, কলকাতার দমদমের পাড়ার পুজো খুব মনে পড়ে। কিন্তু কাজের সূত্রে এই প্রবাসেও আমরা পুজোটা উপভোগ করি। এবার আমাদের প্রতিমা সেজে উঠবেন ডাকের সাজে। সাজ এসেছে কলকাতা থেকে। এখন দিনরাত এক করে চলছে প্রতিমা আর মণ্ডপ সাজানোর কাজ— সাদা ফুল, সাদা চাঁদমালা এবং আঞ্চলিক মৃৎশিল্পীদের ভাস্কর্য দিয়ে। পুজো কমিটির সদস্য ইপ্সিতা, সৌরভ, অনিন্দিতা, ইন্দ্রনীল, উৎসব আর আমি এখন পুজোর কাজে চূড়ান্ত ব্যস্ত। প্রতিবারের মতো এবারেও অঞ্জলি দেবেন প্রচুর প্রবাসী বাঙালি। দুপুরে হবে খিচুড়ি ভোগ বিতরণ। আর থাকছে নানা অনুষ্ঠান। সন্ধেয় ব্যান্ডের গান। মেক্সিকান এবং ভারতীয় শিল্পীরা গলা মেলাবেন। এককথায় মেস্কিকোয় স্প্যানিশ আর বাংলা সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় উমার আগমনে। দুর্গাপুজো এখন বিশ্বজনীন।

Latest article