আমেদাবাদ, ১৪ অক্টোবর : ধুন্ধুমার পাকিস্তান ম্যাচ দেখবেন বলে যাঁরা রবিবার গুছিয়ে বসেছিলেন, তাঁরা হতাশ হলেন। তবে এই হতাশার মধ্যে প্রাপ্তি রোহিত শর্মা। লোকে বলে তিনি বিগ ম্যাচ প্লেয়ার। ঠিকই বলে। এর থেকে বড় ম্যাচ আর কোনটা? ২০২৩ বিশ্বকাপের সবথেকে বেশি হাইপ ওঠা ম্যাচ ছিল রবিবাসরীয় আমেদাবাদে। তাতে ৬ ছক্কায় রংমশাল জ্বালিয়ে দিলেন হিটম্যান। এরপর ভারত জিতবে এতে আর আশ্চর্য কী। ১৯.৩ ওভার বাকি রেখে ভারত জিতল ৭ উইকেটে।
রোহিত অবশ্য ভারতকে (India-Pakistan) জিতিয়ে ফিরতে পারেননি। যে কাজটা বোলারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে করে দিলেন শ্রেয়স আইয়ার (৫৩ নট আউট)। কিন্তু রোহিতের ৬৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংস ভারতের জয়ের ভিত তৈরি করে গিয়েছিল। ৬টি ছয়, ৬টি চার। শাহিন দ্বিতীয় স্পেলে এসে রোহিতকে ফেরালেন। সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দুরে থাকা হিটম্যান কিছুটা ক্যাজুয়াল শট খেলে নিজের উইকেট দিয়ে গেলেন। ততক্ষণে অবশ্য ২২ গজে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন শ্রেয়স। চার মাস ক্রিকেটের বাইরে থেকে বিশ্বকাপে ফিরে রান করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। শ্রেয়স সেটাই করলেন। তাঁর পাশে ১৯ নট আউট থাকলেন রাহুল।
ছোট টার্গেট দেখতে ছোট হলেও এতে অনেক বিপদ আছে। দুম করে কখন পরপর উইকেট চলে যাবে, বোঝা যায় না। পাকিস্তান একটা সময় ছিল ১৫৫-২। সেখান থেকে ১৯১ অল আউট। ৩৬ রানে তারা ৮ উইকেট হারিয়েছে। রোহিতরা যখন ১৯২ রান মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে এলেন, সেটাই সবার মাথায় ঘুরছে। তারমধ্যে আবার শুভমন (১৬) যখন ফিরে গেলেন, ভারতের রান ২৩। তখন ২.৫ ওভার। কপাল ভাল রোহিত উল্টোদিকে ছিলেন। বৃহস্পতিবার পুণেতে পরের ম্যাচে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলবে।
ইয়ন মর্গ্যান বিশ্বকাপ শুরুর আগে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, রোহিত এবার ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হবেন। কথাটা কিন্তু মিলতে বসেছে। আফগানিস্তান ম্যাচে ৮৪ বলে ১৩১ রান করেছিলেন ভারত অধিনায়ক। রবিবার করলেন ৮৬ রান। নাসিম শাহ না থাকায় একটু চাপ নিয়ে শুরু করেছিল পাকিস্তান। শাহিন আফ্রিদি প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে দিলেন ৩২ রান। উইকেট অবশ্য একটা পেলেন বিরাটের (১৬)। শাদাবের হাতে ধরা পড়েছেন কিং কোহলি। পরে রোহিতেরও। কিন্তু তিনি ছাড়া শুধু হাসান আলি উইকেট পেলেন। বাকি থাকলেন নওয়াজ, শাদাব, রউফরা। তাঁদের সবার ভাঁড়ার শূন্য।
আরও পড়ুন- রোনাল্ডোর দাপটে মূলপর্বে পর্তুগাল
প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানের (India-Pakistan) রান ছিল ৪৯/১। শফিককে (২০) ক্রস সিম ডেলিভারিতে সিরাজ তুলে নিলেও পাকিস্তানের শুরুটা তবু খারাপ হয়নি। ৪১ রানে শফিকের উইকেট পড়েছে। উল্টোদিকে ইনজামামের ভাইপো ইমাম মোটামুটি দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। আর একটা জিনিসও ততক্ষণে স্পষ্ট। আমেদাবাদের স্লো উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই। শক্ত, ঘাসহীন ২২ গজ। তাতে জায়গায় বল রেখে যাওয়া আর মাথা খাটিয়ে বল করা, এর বাইরে কারও কিছু করার ছিল না। তবে সেটা করেই পরে পাকিস্তানকে ৪২.৫ ওভারে ১৯১ রানে অল আউট করে দেন ভারতীয় বোলাররা।
রোহিত যখন টস করতে নামলেন, গোটা স্টেডিয়াম নীলে নীল হয়ে উঠেছে। বড় মাঠ। এত মানুষ। সবমিলিয়ে ভারত-পাক ম্যাচের দারুণ আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রোহিত অবশ্য টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে দিলেন। হয়তো মাথায় এটাই ছিল যে, বাইশ গজে যেটুকু সতেজতা আছে, সেটা নিজের বোলারদের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু সিরাজের উইকেট ছাড়া শুরুতে রোহিতের প্রাপ্তির ভাঁড়ারে আর কিছু জমা পড়েনি। এখানে অবশ্য শামিকে ফের বাইরেই থাকতে হল। আর বুমরা-সিরাজের সঙ্গে থার্ড সিমার হিসাবে যিনি বল করতে এলেন, সেই হার্দিক ফেরালেন ইমামকে (৩৬)। পাকিস্তান তখন ৭৩/২।
এখন থেকে পাক ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন অধিনায়ক বাবর (৫০) আর রিজওয়ান (৪৯)। দুজনের পার্টনারশিপে উঠেছে ৮২ রান। কিন্তু বাবর দলের ১৫৫ রানে সিরাজকে উইকেট দিয়ে যাওয়ার পর পাক ইনিংস আর দাঁড়াতে পারেনি। পরপর উইকেট চলে গেল এরপর। এতে একটা জিনিস স্পষ্ট হল যে, পাক ব্যাটিংয়ে বাবর আর রিজওয়ান ছাড়া চাপ নেওয়ার কেউ নেই। বাবর সিরাজের বলে বোল্ড হয়েছেন। রিজওয়ান বোল্ড হলেন বুমরার বলে। পরের দিকে আর কোনও ব্যাটার রান পাননি।
শাকিল ৬, ইফতিকার ৪, শাদাব ২, নওয়াজ ৪, হাসান ১২, রউফ ২ রান করেছেন। শাহিন নট আউট থেকে যান ২ রানে। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে পাঁচজন এদিন দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। এঁরা হলেন, বুমরা, সিরাজ, হার্দিক, কুলদীপ ও জাদেজা। শামির বদলে যিনি এখন প্রথম এগারোয় থাকছেন সেই শার্দূলকে দিয়ে মোটে ২ ওভার বল করান রোহিত। তিনি দিয়েছেন ১২ রান। এমন এক ফোর্থ সিমারের বদলে জেনুইন সিমার শামি অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন বলে ধারণা অনেকের।