ছোটদের ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র ‘ছোটদের আলোলিকা’। ইন্দ্রাণী সরকারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মেদিনীপুর শহর থেকে। বেরিয়েছে শারদ সংখ্যা। প্রচ্ছদ বিষয় ‘পুতুল : ছোটদের বেড়ে ওঠার সাথী’। বিষয়টি আকর্ষণীয়। ছোটবেলায় পুতুল খেলেননি, এমন মানুষ নেই। পুতুলের উৎস সন্ধান করেছেন সোমা মুখোপাধ্যায়, ‘পুতুল এলো কোথা থেকে’ লেখায়। তাঁর মতে, ‘এর আবির্ভাব হয়েছে যাদুবিদ্যার হাত ধরে। এমনটি বিশ্বাস করা হয়। গুহাবাসী মানুষের জীবন থেকে এর সূচনা।’ পরবর্তী অংশে কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলার লোকনাট্যের অন্তর্গত পুতুলনাচ। হারিয়ে যেতে বসেছিল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পুতুল নাচ নিয়ে আছে দুটি চমৎকার লেখা, তুহিনকুমার চন্দের ‘পুতুল পুতুল’ এবং ড. আশিসকুমার নন্দীর ‘বাংলার পুতুল ও পুতুল নাচ’। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে আধুনিক সাহিত্য, বিভিন্ন সময় ধরা পড়েছে পুতুল-প্রসঙ্গ। পুতুল নিয়ে বিভিন্ন সময় কবিতা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকুমার রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র। লেখা হয়েছে গল্প, নাটক। বিষয়টি নিয়ে প্রাণবন্ত একটি গদ্য বুনেছেন রাতুল ঘোষ। এ-ছাড়াও পুতুল নিয়ে নানা স্বাদের রচনা উপহার দিয়েছেন মহুয়া ভট্টাচার্য গোস্বামী, অনুরূপ পাঠক, রাকেশ দেব সিং, দেবদুলাল কুণ্ডু, সিদ্ধার্থ সিংহ, সমুদ্র বসু, সঞ্জীব মিত্র, ড. শুভ জোয়ারদার, ড. প্রদীপ সরদার, মন্দিরা ভট্টাচার্য, সুনীল আদক, ঈশ্বর মিত্র, কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ সাঁতরা। আছে পুতুল নিয়ে কয়েকটি ছড়া-কবিতা— আনসার উল হক, স্বপনকুমার বিজলী, বিকাশচন্দ্র দাস প্রমুখের কলমে।
আরও পড়ুন-মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্বের সমস্যা মিটে গেল বুঝি?
আছে অন্যান্য লেখাও। স্মরণ করা হয়েছে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় এবং অবি সরকারকে। সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’-এর শতবর্ষ নিয়ে মনোগ্রাহী গদ্য উপহার দিয়েছেন পীযূষকান্তি সরকার।
পাঠক-পাঠিকাদের গল্পের দেশে নিয়ে গেছেন অনন্যা দাশ, অমিতাভ পাল, উত্থানপদ বিজলী, কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সঞ্জয় কর্মকার, অর্থিতা মণ্ডল প্রমুখ। গল্পগুলো মন ছুঁয়ে যায়।
বিস্মৃতপ্রায় কয়েকজন শিশু-সাহিত্যিকের উপর আলোকপাত করেছেন উজ্জ্বল সিদ্ধান্ত। পুরোনো ছড়ার পাতা বিভাগে ছাপা হয়েছে নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, সুকুমার রায়, প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ছড়া। হারিয়ে যাওয়া ছড়াও সযত্নে স্থান পেয়েছে। ছড়ার মেলায় শোর তুলেছেন পবিত্র সরকার, শ্যামলকান্তি দাশ, রূপক চট্টরাজ, সুখেন্দু মজুমদার, চন্দন নাথ, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপলকুমার ধাড়া, মেধস ঋষি বন্দ্যোপাধ্যায়, অপূর্বকুমার কুণ্ডু, হাননান আহসান প্রমুখ। প্রতিটি ছড়াই মনে দোলা দিয়ে যায়। সবমিলিয়ে জমজমাট আয়োজন। প্রচ্ছদশিল্পী গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিবাজি পণ্ডিত। দাম ১০০ টাকা।
আরও পড়ুন-পিতৃপক্ষের অন্তিমক্ষণে একদিনের জন্য পুজো নেন উমা
মেদিনীপুর শহর থেকে প্রকাশিত হয় ‘ছোটদের নয়ন’। বিদ্যুৎ পালের সম্পাদনায়। বেরিয়েছে শরৎ সংখ্যা। নানা বিষয়ের লেখায় সমৃদ্ধ। শুরুতেই ছোটদের ছড়া-কবিতা। প্রবহনীল দাস, সায়নদীপ পাণ্ডা, সৌরীশ কুণ্ডু, অমর্ত্য ঘোষ, দিব্যশ্রী কুণ্ডু, সমাদৃতা চক্রবর্তী, চিরাগ সেন, দেবাঙ্গনা কুণ্ডুর লেখা। আছে কয়েকটি গল্প এবং নিবন্ধ। হাত কাঁচা, তবে লেখা পাকা। প্রত্যেকের মধ্যেই সম্ভাবনা আছে। চর্চা চালিয়ে যেতে হবে।
এর পরেই আছে মানবীদের কলমে ছড়া, কবিতা, লিমেরিক, প্রবন্ধ, গল্প। বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয়েছে এই সময়ের দেবীদের, যাঁরা সংসার সামলানোর পাশাপাশি নীরবে সাহিত্য চর্চা করছেন।
সাধারণ বিভাগ শুরু হয়েছে ছড়া-কবিতা দিয়ে। লিখেছেন দীপ মুখোপাধ্যায়, প্রভাত মিশ্র, শ্যামলকান্তি দাশ, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রতিটি লেখায় লেগে রয়েছে শরতের ঝলমলে রোদ্দুর, শিউলির সুবাস।
আরও পড়ুন-শ্রীলঙ্কার বন্দরে চিনা গুপ্তচর জাহাজ
আছে কয়েকটি মন ভাল-করা গল্প। ইন্দ্রনীল কুলভির লেখার শিরোনাম ‘ছোটকু পুলিস’। পুলিশ হতে চায়, এমন একটি ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে লেখা। সেখ মনিরুল ইসলামের ‘বানরের গণনা’ গল্পে চরিত্ররা সবাই বন্যপ্রাণী। লেখাটি মজার। মুখোশ খুলেছে গণৎকারের। গল্পের ছলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা। অমর সাহার ‘চন্দ্রাভিযান’ গল্পটি খাসা। ছোট্ট অন্তুকে ঘিরে দানা বেঁধেছে কাহিনি। এ-ছাড়াও ভাল লাগে সুচন্দ্রনাথ দাসের ‘পরিবর্তন’, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘যেমন খুশি আঁকো’, মুকুল মাইতির ‘হোস্টেলের দিনগুলো’ বিকাশ পণ্ডিতের ‘ফুলের সই’ গল্পগুলো।
তাপস মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ, বিপ্লব মাজী, মোনালিসার শৈশবের কথা, কৌশিক শীলের জানা-অজানা, তারাশঙ্কর চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ বসুর খেলা আর খেলা লেখাগুলো সংখ্যাটিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। এ-ছাড়াও আছে সংবাদের টুকিটাকি, চুটকির ফোয়ারা, ছোটদের আঁকা। সব মিলিয়ে আন্তরিক আয়োজন। প্রচ্ছদশিল্পী সুমন্ত সাহা। দাম ১০ টাকা।