প্রতিবেদন : মোদি জমানায় ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা লাগাতার নেতিবাচক রিপোর্ট দিচ্ছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক সেই রিপোর্ট অস্বীকার করছে। অথচ সাংবাদিকের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা এই সময়ে বারবার ঘটছে এদেশে। দেশদ্রোহের মামলা থেকে হেনস্থা, বাদ নেই কিছুই। আর এবার প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিকের পুরস্কার বাতিলের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অপছন্দের প্রতিবেদন প্রকাশ করায় কাশ্মীরি সাংবাদিক সাফিনা নবি সম্প্রতি চূড়ান্ত বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
আরও পড়ুন-দুর্গাপুজোর মুখেই শুরু করম উৎসবের
অশান্ত কাশ্মীরের বাস্তবধর্মী প্রতিবেদন তুলে ধরেছিলেন সাফিনা। সাড়ে তিন দশক ধরে সন্ত্রাস-উপদ্রুত কাশ্মীরে নিখোঁজ তরুণদের পরিবার নিয়ে তৈরি করেছিলেন আখ্যান। গবেষণাধর্মী সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘স্ক্রোল’-এ। শিরোনাম ছিল: ‘হাউ কাশ্মীরস হাফ উইডো’জ আর ডিনায়েড দেয়ার বেসিক প্রপার্টি রাইটস’। হাজার হাজার নিখোঁজ কাশ্মীরি পুরুষের স্ত্রীদের তিনি ‘হাফ উইডো’ বা ‘আধা বিধবা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, কীভাবে তাঁরা জীবনযাপনের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেই কাহিনি। কেন এই পরিস্থিতি হল? তা ছিল তাঁর গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য।
আরও পড়ুন-প্রতি গ্রামকে সজল গ্রাম করবে উত্তর দিনাজপুর
দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরি নারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন হাসিনা। সেইসব নারী, নিখোঁজ পুরুষদের সেই হতভাগ্য স্ত্রীরা জানেন না তাঁদের স্বামী বেঁচে আছেন কি নেই। জানেন না, তাঁরা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কি না। কেউ কেউ আবার বুঝতে পারেন না, এমন পরিস্থিতিতে পুনর্বিবাহ করা আইনের চোখে সম্ভব কি না। নতুন সংসার শুরু করা উচিত হবে কি না, তা নিয়েও ভুগতে থাকেন দ্বন্দ্বে। সাফিনার প্রতিবেদন ছিল এই ‘আধা বিধবা’দের সামাজিক ও মানসিক দুরবস্থা নিয়ে। এই গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনের জন্য তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন। সাফিনাকে পুরস্কার দিয়েছিল পুণের মহারাষ্ট্র ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-ওয়ার্ল্ড পিস ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম স্কুল। গত মঙ্গলবার সেই পুরস্কার নিতে তাঁর পুণে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ সোমবার তাঁকে ফোন করে জানানো হয়, আসার দরকার নেই। পুরস্কারটি বাতিল করা হয়েছে। বিস্মিত সাফিনা কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, প্রবল রাজনৈতিক চাপ। বলা হয়, ওই পুরস্কারের জন্য তাঁকে মনোনীত করায় রাজনৈতিকভাবে তাঁরা প্রবল সমস্যায় পড়েছেন। তাই পুণে সফর করা তাঁর পক্ষে উচিত হবে না।
আরও পড়ুন-বিরাট দাপটে চারে চার ভারতের
সাফিনা নবিকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফোন ও ই-মেইল মারফত সেই খবর তাঁকে জানানো হয়েছিল। অভিনন্দিতও করা হয়েছিল। কিন্তু পুরস্কার বাতিলের খবর জানানো হয় ফোনে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ই-মেইল মারফত তাঁকে জানাতে অস্বীকার করে বলে সংবাদমাধ্যমে সাফিনা জানান। পুরস্কার বাছাই করেছিল সাত সদস্যের জুরি বোর্ড। তাতে তিনজন জুরি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের, বাকি চারজন বাইরের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার পুণে সংস্করণের আবাসিক সম্পাদক সুনন্দ মেহতা, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার কার্টুনিস্ট সন্দীপ আধওয়ারু, বেনেট ইউনিভার্সিটি মিডিয়া স্কুলের প্রধান সঞ্জীব রত্ন সিং ও সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এম কে ভেনু। তিন জুরি সদস্য পুরস্কার দিতে পুণেতে উপস্থিতও হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ওই খবর জানার পর অনুষ্ঠানে যাননি।
এ বিষয়ে দ্য ওয়্যার সম্পাদক এম কে বেণু নিজের সংবাদমাধ্যমে বলেন, খবরটি শোনার পর তিনি, সুনন্দ ও সন্দীপ ঠিক করেন, অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে তাঁরা নিজেদের প্রতিবাদ জানাবেন। কাশ্মীরি সাংবাদিকদের এক ধরনের সেন্সরশিপ ও হয়রানি সহ্য করতে হচ্ছে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক ও বিবেকবর্জিত। বোঝাই যায়, মোদি-রাজত্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্র কী!