কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: ওরা প্রত্যেকে কোনও এক বিশেষ পরিস্থিতিতে অপরাধ করে ফেলেছিল। সাজা পেয়েছে যাবজ্জীবন। কিন্তু কারাজীবন বদলে দিয়েছে ওদের। অপরাধ এখন অতীত, ওরা অন্য মানুষ। এক-একজন এক-এক ক্ষেত্রে রীতিমতো দক্ষ। তারই প্রমাণ মিলল বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। কয়েকজন দণ্ডিত গড়ে তুলেছে দুর্গাপ্রতিমা, পুজোও করছে। জেলপুলিশের উদ্যোগে ওই পুজোর থিম ‘সবুজায়ন’। যেখানে গাছেরগুঁড়ি থেকে মা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক প্রকট হচ্ছেন। পরপর তিনবার ‘বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান’ পেয়েছে বহরমপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের এই পুজো।
আরও পড়ুন-দলের স্বার্থে আবার বসতে রাজি : শামি
মূল উদ্যোগ তাপস মণ্ডল, রাজেশ দাস, হাবল শেখ, গোলাম গাউস, বিল্লাল শেখ, নাসিম শেখ, শঙ্কর রায়— প্রত্যেকেই বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিক, অর্থাৎ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। ওরা কেউ প্রতিমা বানাচ্ছে, কেউ মণ্ডপ, কেউ-বা আলোর দায়িত্বে। ওদের কাজ দেখলে কে বলবে পেশাদার নয়। যাঁরাই দেখেন তারিফ করেন। গত ছয় বছর ওরা জেলের মাঠে মণ্ডপ বানায়। ক্লাব সম্পাদক সুতনু মালাকার জানাল, ১৩ জন আবাসিক গত দুমাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা বানিয়েছে। মূল কারিগর তাপস মণ্ডল, বাকিরা সহযোগী। সবুজায়ন ভাবনার তারিফ করেছেন জেলা কারা দফতরের ডিআইজি নবীনকুমার সাহা ও জেলসুপার শুভেন্দুকৃষ্ণ ঘোষ। পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে, গাছপালা নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। তাই ‘সবুজায়ন’কে থিম তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন-চিরঘুমের দেশে বেদী
গাছের গুঁড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন দুর্গা ও অন্য প্রতিমা। মণ্ডপের চারিদিকে নানান গাছের ছবি এঁকে বৃক্ষরোপণের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ডিআইজি নবীনকুমার পুজোর উদ্বোধন করে বলেন, আবাসিকেরা মুক্তি পেয়ে যাতে মূলস্রোতে ফিরতে পারে সেই চেষ্টা করা হয়। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের যাতে ব্যবস্থা করতে পারে সেই সুযোগও করে দেওয়া হয়। এগুলোরই ফলশ্রুতি দুর্গাপ্রতিমা।