অলোক সরকার: কেউ দাঁতের ডাক্তার, কেউ আইনজীবী। কেউ স্টকিস্ট, কেউ ব্যাঙ্কার। একসময় এটাই ছিল নেদারল্যান্ডস দল (Netherlands-Bangladesh)। উইকেন্ডে বড়জোর শখের ক্রিকেট পাড়ার মাঠে।
বিবর্তনের হাত ধরে বিক্রমজিৎরা এখন পেশাদার। সারা বছর খেলেন। ফল চোখের সামনে। নেদারল্যান্ডস দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। শনিবাসরীয় রাতে বাংলাদেশকেও ওড়াল ৮৭ রানে। দুটোই অঘটন এই বিশ্বকাপে। এতে দুটো জিনিস স্পষ্ট। তারা ৪ পয়েন্ট পেল। বাংলাদেশ পাঁচ ম্যাচে হেরে অঙ্কে ভেসে থাকলেও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আর এক ম্যাচ জিতলেই তারা দৌড়ের বাইরে চলে যাবে।
শাকিব (৫) যখন আউট হলেন, এক বাংলাদেশি সাংবাদিক অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন, শেষ! সত্যিই তাই। বাংলাদেশ তার আগে তিন উইকেট হারিয়েছে। এটা চতুর্থ। মিকারেনের গায়ের উপর আসা বল থেকে ব্যাট সরাতে পারেননি শাকিব। ৬৩/৪ থেকে পাঁচ বলে স্কোর হয়ে গেল ৬৯/৫। মেহেদি (০) গেলেন খাতা না খুলে। ২৩০ তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে ৩ উইকেট আগেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপে তিন সেঞ্চুরির মালিক। পাঁচ উইকেট চলে যাওয়ার পর তাঁর আর মুশফিকুরের (১) উপর দায়িত্ব পড়েছিল। কিন্তু মুশফিকুর মিকারেনের অফ কাটারে বিধ্বস্ত তো হলেনই, বাংলাদেশকেও দাঁড় করিয়ে দিলেন ৭০/৬-এ। অতঃপর যেটুকু আশা ছিল সেটা মাহমুদুল্লাহকে (২০) ঘিরে। তিনি আগের ম্যাচের ব্যাটিং করতে পারেননি। ফলে ৪২.২ ওভারে বাংলাদেশ (Netherlands-Bangladesh) শেষ হয়ে গেল ১৪২ রানে। মিকারেন ৭.২ ওভারে ২৩ রানে নিলেন ৪ উইকেট।
বিশ্বকাপের অবশ্য মাহাত্ম্য আছে। এখানে একটা গমগমে ব্যাপার থাকে। চাপা টেনশনও। দুপুরে চোখে পড়ল বাঁশের ব্যারিকেডের ভেতরে হনহনিয়ে হাঁটছেন লোকজন। ইডেন যত কাছে, মাঠের জনতার আওয়াজ যত জোরে, ততই হাঁটার জোর বাড়ছে। এক বাংলাদেশি সঙ্গীকে বলছিলেন, জোরে হাঁট। টস মিস করা যাবে না!
বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে শহরের আগ্রহ ছিল না। কলকাতা এখন হন্যে হয়ে আছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিটের জন্য। তার আগে এই ম্যাচ। ৩১ তারিখ পাকিস্তান ম্যাচও রয়েছে। কিন্তু শনিবারের ইডেন জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভিড় বুঝিয়ে দিল, ফুল ফুটলে গন্ধ ছড়াবে, বিশ্বকাপ এলে মানুষ জাগবে। প্রেসবক্সে আইসিসির প্রতিনিধি ঘোষণা করলেন, সন্ধ্যা সাতটায় পনেরো হাজার লোক ছিল এই মাঠে।
স্কট এডওয়ার্ডস নির্ঘাৎ পকেটে কপাল নিয়ে নেমেছিলেন। না হলে ০ আর ১২ রানে ক্যাচ দিয়ে শুধু বেঁচে যাননি, ৬৮ রানও করে গেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই এডওয়ার্ডস বুক চিতিয়ে জিতিয়েছিলেন। শনিবারও সেই কাজ করলেন। শুরুতে বিক্রমজিৎ সিং (৩) ও ম্যাক্স ওদাউদ (০) পরপর ফিরে যাওয়ার পর তিনি একদিক আগলে রাখলেন। তাই নেদারল্যান্ডস ২২৯-এ গেল। না হলে এতদূর আসাই হত ন।
এই উইকেটে ভাল ক্যারি আছে। অফ দ্যা পিচ ভাল বল এল। মুস্তাফিজুর এটাকেই কাজে লাগিয়ে ১০ ওভারে ২/৩৬। নেদারল্যান্ডসের ইনিংসে একটাই পার্টনারশিপ হয়েছে। ১০৭-এ ৫ উইকেট চলে যাওয়ার পর ৬৮ রানের। এডওয়ার্ডস আর এঙ্গেলব্রেখট (৩৫) মিলে এই রান করে দলকে দু’শোর ওপারে নিয়ে গেলেন। এটাই পরে ম্যাচে মহাপার্থক্য গড়ে দিয়ে গেল।
আরও পড়ুন- রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বাজিমাত অস্ট্রেলিয়ার