মুম্বই, ২ নভেম্বর : মুম্বই আর কলম্বোর মাঝে কয়েক হাজার মাইল। মিল বলতে দুটোই সমুদ্রপারের শহর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই শহরের আর এক মিল খুঁজে পাওয়া গেল। যখন শামি-বুমরা-সিরাজের গতিতে কাঁপছে শ্রীলঙ্কা। দেড় মাসের ব্যাবধানে দুই শহরে পেসের আগুনে ছারখার হল একদা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আরও পড়ুন-ইডেন ম্যাচে টিকিটের হাহাকার, বোর্ডের ঘাড়ে দায় চাপালেন সৌরভ
মনে হল এশিয়া কাপ ফাইনালের হাইলাইটস। কলম্বোয় ১২ রানে অর্ধেক ইনিংস গুটিয়েছিল শ্রীলঙ্কার। এখানে ১৪ রানে ৫ উইকেট। কলম্বোয় সিরাজে বিধ্বস্ত হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ১৫.২ ওভারে ৫০। মুম্বইয়ে ভারতীয় পেসের সম্মিলিত শক্তির কাছে সামান্য ভাল, ১৯.৪ ওভারে ৫৫। বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন রান কানাডার, ৩৬। অল্পের জন্য রক্ষা পেল। সর্ববৃহৎ জয় অস্ট্রেলিয়ার, ৩০৫। সেটাও বেঁচে গেল। তবে ৩০২ রানের মহাজয়ে ভারত শীর্ষেই। এবার সাতে সাত। নিশ্চিত হল সেমিফাইনাল। রোহিতদের পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। বাভুমাদের বিরুদ্ধে ইডেনে আটে আট হয় কি না সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের উদাসীনতার আরেক নজির, বড় বিপদের সম্ভাবনা
কলম্বোয় সুইং করেছে। সিরাজ ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। ওয়াংখেড়েতে জুজু ছিল ন। ভারত সাড়ে তিনশো করাতেই পরিষ্কার। সন্ধ্যার দিকে আরব সাগর থেকে যে বাতাস বয়, তাতে বল মুভ করে। মেরিনা বিচের পাশে চিপকেও এটা হয়। কিন্তু এখানে এমনিই কেঁপে গেলেন সিংহলিরা। সিরাজ-আতঙ্ক কাটেনি! এবার যুক্ত হল শামি-কাঁটা। ১৮ রানে ৫ উইকেট। বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে ১৪ উইকেট। ওয়াংখেড়েতে শামিই শেষপর্যন্ত ম্যান অফ দ্য ম্যাচ।
প্রথম বলে নিশঙ্কাকে (০) তুলে নিয়েছিলেন বুমরা। সিরাজ একই কাজ করলেন করুণারত্নেকে (০) ফেরত পাঠিয়ে। কুশল মেন্ডিস (১) ও সাদিরা সমরবিক্রমের (০) উইকেটও ভাগাভাগি করে নিলেন এই দুই সিমার। তারপর আসালাঙ্কা (১) আর হেমন্তকে পরপর দু’বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে চলে এলেন মহম্মদ শামি। হয়নি। তবে টেল এন্ডারদের ঘুরে দাঁড়ানোও হয়নি। হলে এভাবে ইনিংস শেষ হয় না। শামির পাশে ১৬ রানে ২ উইকেট সিরাজের। এক উইকেট বুমরা ও জাদেজার।
আরও পড়ুন-কালনা হাসপাতালে চালু হল রোগীর আত্মীয়দের বিশ্রামাগার
ওয়াংখেড়েতে বিরাট যখন টস করতে নামলেন, নিশ্চয়ই প্রচুর আবেগ ভিড় করেছিল মাথায়। ১২ বছর আগে এই শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে উড়িয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। বর্তমান অধিনায়ক তখন কয়েক মাইল দূরের বাড়িতে। সেই দলে বিরাটের মতো তাঁর জায়গা হয়নি। কিন্তু এতদিন অপেক্ষার পর ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপ ম্যাচে নেমে রোহিত (৪) ফিরলেন দ্বিতীয় বলে। মাদুশঙ্কাকে প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছিলেন। পরের বলে বোল্ড। বাঁ হাতি পেসারের বলটা ব্যাটের আউট সাইড এজ পার করে স্ট্যাম্প উপড়ে দিয়েছে। ম্যাচের সেটা প্রথম ওভার।
কাছেই আরব সাগর। এই উইকেটে কিছুটা আর্দ্রতা সবসময় থাকে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে মাদুশঙ্কা রোহিতের উইকেট নিয়ে গেলেন। বৃহস্পতিবার টস জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তারা আগে ভারতকে ব্যাট করতে দেয়। শুধু ভেজাভাব নয়, রাতের দিকে এখানে প্রচুর শিশিরও পড়ে। তখন বোলারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হয়। কুশল মেন্ডিস সম্ভবত সেটাও মাথায় রেখেছিলেন। কিন্তু দিলশান মাদুশঙ্কা যেটা করলেন, সিংহলি বোলারদের মধ্যে বাকিরা সেটা পারেননি। তাই সাড়ে তিনশো করে ফেলেছে ভারত। গোটা কয়েক ক্যাচও ফসকে গেল এই সময়ে। চামিরা বিরাটের ক্যাচ ফেলেছেন। এরপর যেটা হল, বিরাট আর শুভমন ধীরে ধীরে দলকে শক্ত জমির উপর নিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন-গভীররাতে প্রকাশ চিকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ধৃত অভিযুক্ত ৬ বিজেপি-দুষ্কৃতী
এই দু’জনের জুটিতে উঠেছে ১৮৯ রান। ৩০ ওভারের মাথায় সেই মাদুশঙ্কা যখন শুভমনকে (৯২) তুলে নেন, ভারতের রান ১৯৩। ৯২ বলে এই রান পাঞ্জাব ব্যাটারের। এগারোটি চার, দুটি ছক্কা। ১০০ স্ট্রাইক রেট নিয়ে শুভমন ফিরে গিয়ে নিশ্চিত সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন। তবে এখানেই থামেনি সিংহলি স্পিডস্টারের কেরামতি। এবার তিনি ফেরান বিরাটকেও। মাত্র ৩ রানের মধ্যে এই ঘটনা। এই উইকেটে বল থমকে আসার একটা ব্যাপার ছিল প্রথম থেকে। বিরাটের বেলায় সেটা হয়েছে। মাদুশঙ্কা স্লোয়ার দিয়েছিলেন। বিরাট হাল্কা পুশে কমিটেড হয়েছিলেন। লোপ্পা ক্যাচ গেল মিড অফে পাথুম নিশঙ্কার হাতে।
আরও পড়ুন-সোফার মধ্যে কোবরা, আতঙ্কে পরিবার
আগেরদিন এই মাঠের শচীন তেন্ডুলকর স্ট্যান্ডে লিটল মাস্টারের মূর্তি বসেছে। এদিন বিরাট যখন ব্যাট করছিলেন, বারবার শচীনের নাম উঠে এল। এখানে সেঞ্চুরি করতে পারলে বিরাট একদিনের ম্যাচে শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরিকে ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু সেটা হয়নি। এই বিশ্বকাপে একটা সেঞ্চুরি ইতিমধ্যেই করেছেন বিরাট। তবে হাতছাড়া হল আরও দুটি। ৯৪ বলে ৮৮ রান করেছেন বিরাট। এগারোটি চার। ইনিংসের শুরুতে তাঁর ক্যাচ পড়লেও বিরাট কিন্তু আরও পতন আটকেছেন। তিনি একটা দিক আগলে রেখে এগিয়ে দিয়েছিলেন শুভমনকে।
ভারত অবশ্য এরপরও ৩৫৭-৮ করল। আর সেটা শ্রেয়স আইয়ারের (৮২) জন্য। রাহুল (২১) চামিরার স্লোয়ারে ঠকে যান। সূর্য (১২) শিকার হলেন মাদুশঙ্কার। সিংহলি বোলারদের মধ্যে সবথেকে সফল তিনি ৮০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। শ্রেয়সকে এই ম্যাচের আগে শর্ট বলে প্র্যাকটিস করিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। সেটা যে কাজে লেগেছে বোঝা গেল তাঁর ৫৬ বলের ইনিংসে। তিনটি চার, ছ’টি ছক্কা। শেষদিকে ২৪ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও করে গিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজাও। সাড়ে তিনশো উঠে এল এই ব্যাটারদের দাপটেই।