সুমন করাতি হুগলি: ২০৯ বছর আগে তন্ত্রসাধনা ও ষটচক্রভেদ তত্ত্বের ভিত্তিতে বাঁশবেড়িয়ায় গড়ে উঠেছিল হংসেশ্বরী মন্দির। ক্রমেই দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব থেকে শুরু করে বহু সাধক মায়ের টানে এখানে ছুটে এসেছেন যুগে যুগে। বর্তমানে ৭০ ফুট উচ্চতার ছ’তলা মন্দির। এখানে পুজো পাঠ হয় তন্ত্রমতে। ছাগ বলির পাশাপাশি দেওয়া হত মোষ বলিও। তবে এবার ছেদ পড়তে চলেছে ২০৯ বছর ধরে চলে আসা বলিপ্রথায়। এবছর থেকে বলিপ্রথা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুজোর দায়িত্বে থাকা রাজ পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন-রাজ্য সরকারের আরেক মানবিক প্রকল্প, ৮০ মৎস্যজীবীকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড
মা হংসেশ্বরী ভক্তদের কাছে সাক্ষাৎ বিপত্তারিণী। বাঁশবেড়িয়া রাজ পরিবারের সদস্যদের আদি বাড়ি ছিল বর্ধমানের পাটুলিতে। পূর্বপুরুষ রামেশ্বর দেবরায় ৩৬০টি পরিবার নিয়ে পাটুলি থেকে তৎকালীন বংশবাটি এলাকায় উঠে আসেন। তারপর এলাকায় ভয়ানক বর্গি হানা শুরু হয়। রাজা রামেশ্বর বর্গিদের আক্রমণ থেকে রাজবাড়িকে রক্ষা করতে একটি দুর্গ গড়েন। দুর্গের চারপাশে খনন করা হয় পরিখা। কাঁটাগাছ ও বাঁশ দিয়ে দুর্ভেদ্য দেওয়াল তৈরি করা হয়েছিল দুর্গের চারপাশে।
আরও পড়ুন-আমেরিকা, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে উরস উৎসবে সম্প্রীতির বার্তা মন্ত্রীর
এছাড়াও সিংহদুয়ারে চূড়া-সহ দুর্গের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয়েছিল কামান। ১৭৯৯ সালে ধর্মপ্রাণ রাজা নৃসিংহদেব রায় দুর্গের মধ্যেই মা হংসেশ্বরীর মন্দির তৈরি শুরু করেন। ১৮০২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর মন্দির তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাজার মন্দির তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন তাঁর স্ত্রী রানি শঙ্করী। ১৮১৪ সালে সম্পন্ন হয় মন্দির তৈরির কাজ।
আরও পড়ুন-এগিয়েও হার মোহনবাগানের
এখন এই মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। মন্দিরের ১৩টি চূড়া, ত্রিতলে কষ্টিপাথরের ১২টি শিবলিঙ্গ, গর্ভগৃহে পাথরের বেদির উপর খোদিত সহস্রদল ও অষ্টদল পদ্ম। তার উপরেই শায়িত মহাদেব। তাঁর হৃদয় থেকে উত্থিত পদ্মাসনে অধিষ্ঠান মা হংসেশ্বরীর। এখানে মন্দিরের গর্ভগৃহকে ধরা হয় মূলাধার। এই মূলাধারে সহজ সরল পথের উপর রয়েছে অষ্টদল পদ্ম। তন্ত্রমতে মানবদেহের পাঁচটি নারীর মতো এই মন্দিরে রয়েছে পাঁচটি সিঁড়ি। কথিত আছে, যেকোনও একটি সিঁড়ি ধরে কিছুটা উঠলেই গোলকধাঁধায় হারিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন-বিজেপির জনধন দুর্নীতি, ভুয়ো ১০ কোটি অ্যাকাউন্টে ৪০ হাজার কোটি
সারা বছর এই মন্দিরে হংসেশ্বরী মাকে দক্ষিণা কালী রূপে পূজা করা হয়। কিন্তু কালীপুজোর দিন মাকে তন্ত্রমতে পুজো করা হয় এখানে। পুজোর সময় মা হংসেশ্বরীকে পরানো হয় ফুলের রাজবেশ। কালীপুজোর দিন সন্ধে থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত মা এই রূপে বিরাজ করেন। পুজোয় মায়ের ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, নানা ব্যঞ্জন, পায়েস, পাপড় ও চাটনি।