লাফান, ঝাঁপান, জগৎ কাঁপান
শীতের মরশুমে উত্তাপ ছড়াবেন দুঁদে গোয়েন্দা। ফেলুদা নন। সোনাদা নন। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সিও নন। ইনি দীপক চট্টোপাধ্যায়। তবে মজার ব্যাপার, এই গোয়েন্দা চরিত্রে দেখা যাবে আগের তিন চরিত্রের অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়কে। ছবির নাম ‘বাদামী হায়নার কবলে’ (Badami Hyenar Kobole)। একটা সময় পাঠ্য বইয়ের মধ্যে লুকানো থাকত শ্রীস্বপনকুমারের রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের বই। তাঁর সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র দীপক চট্টোপাধ্যায়। ঘায়েল করেন দুর্ধর্ষ খলনায়কদের। সমাধান করেন জটিল সমস্যার। লাফান, ঝাঁপান, জগৎ কাঁপান। শুধুমাত্র পড়া নয়, তাঁকে ঘিরে লেখা গল্পগুলো পাঠকরা গিলতেন। রোমাঞ্চিত হতেন। অনেকের শৈশব-কৈশোরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন তিনি। শ্রীস্বপনকুমারের গোয়েন্দা দীপক চট্টোপাধ্যায় এতদিন বন্দি ছিলেন বইয়ের পাতায়। এই প্রথম অবতীর্ণ হবেন বড় পর্দায়। ছবিটি পরিচালনা করছেন দেবালয় ভট্টাচার্য। কথা হল তাঁর সঙ্গে। জানালেন, ‘‘শ্রীস্বপনকুমারকে বেছে নেওয়ার কারণ, তিনি আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ ছিলেন। বেশিরভাগ পাঠক তাঁর লেখা লুকিয়ে পড়তেন। বহু মানুষ বাড়িতে সাজিয়ে রাখতেন বিখ্যাতদের রচনাবলি, অথচ পড়তেন শ্রীস্বপনকুমার। তাঁকে কেউ সেভাবে স্বীকৃতি দেননি। এটা দুঃখের।’’
রুচিশীল গোয়েন্দাদের উপস্থিতি ক্লান্তিকর
এখন তো প্রচুর গোয়েন্দা। দীপক চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়োজন পড়ল কেন? দেবালয় জানালেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে, এখনকার শিক্ষিত রুচিশীল গোয়েন্দাদের প্রতিপত্তি বড় বেশি। তাঁদের উপস্থিতি ক্লান্তিকর, একঘেয়ে হয়ে গেছে। সেখানে শ্রীস্বপনকুমারের গোয়েন্দা দীপক চট্টোপাধ্যায় একটু অন্যরকম হাওয়া বইয়ে দিতে পারেন। যদিও আমি শ্রীস্বপনকুমারের কোনও নির্দিষ্ট গল্প নিইনি। ওঁর ভাবনাটা নিয়েছি। রেখেছি ওঁর কল্পনার জগৎ, স্বপ্নের জগৎ, রহস্যময় জগৎটা। যেটা লার্জার দেন লাইফ। সেটা এই সময় ফিরে এলে কী হয়, দেখাতে চেয়েছি। আমার মনে হয় এইরকম একজন পাল্প রাইটারকে স্বীকৃতি দেওয়াটাও দরকার ছিল। সেটা বাংলা সিনেমার মধ্যে দিয়ে হলে মন্দ কী?’’
নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা
দীপক চট্টোপাধ্যায় চরিত্রে আবির চট্টোপাধ্যায় কেন? পরিচালক জানালেন, ‘‘রুচিশীল সমাজের গোয়েন্দাদের প্রতিভূ আবির চট্টোপাধ্যায়। তিনি এর আগে ফেলুদা, ব্যোমকেশ, সোনাদা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পর্দায় গোয়েন্দা বা সত্যান্বেষী হিসেবে উদঘাটন করেছেন বহু রহস্য। তাঁকে নির্বাচন করার এটা একটা কারণ। তবে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে আবির বোধহয় কিছুটা ক্লান্ত। হয়তো তিনিও চাইছিলেন নতুন কিছু করতে। তাই গোয়েন্দা দীপক চট্টোপাধ্যায় চরিত্রের প্রস্তাব পেতেই রাজি হয়ে যান। কারণ এই গোয়েন্দা অন্যদের থেকে আলাদা। দারুণ কাজ করেছেন আবির। নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।’’
মুখোমুখি স্রষ্টা ও সৃষ্টি
ছবিতে লেখক শ্রীস্বপনকুমারের চরিত্র রাখা হয়েছে। এই চরিত্রে অভিনয় করছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বসবেন তাঁর সৃষ্ট গোয়েন্দা দীপক চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি। শোনা যাবে দু’জনের কথোপকথন। পরিচালক বলেন, ‘‘ছবিতে শ্রীস্বপনকুমারের চরিত্রটা খুব ইন্টারেস্টিং। এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁর অনেক কিছু বলার আছে। সেই কারণেই তাঁকে গল্পের মধ্যে রাখা। ছবিতে দেখা যাবে, লেখক এবং তাঁর সৃষ্ট চরিত্র এই সময়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। চেষ্টা করছেন নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার।’’.
আরও পড়ুন- অগণতান্ত্রিক-অনৈতিক-অসাংবিধানিক, অভিযুক্ত আদানির চ্যানেলের ফুটেজই কিনা প্রামাণ্য তথ্য!
ফেস্টিভ্যালের জন্য নয়
‘এসভিএফ’-এর ‘হইচই স্টুডিওজ’ এই প্রথম কোনও সিনেমা প্রযোজনা করছে। কীভাবে সূচনা হয়েছে এই যাত্রার? দেবালয় জানালেন, ‘‘অনেকদিন ধরেই ‘হইচই স্টুডিওজ’ ছবি প্রযোজনা করার কথা ভাবছিল। চাইছিল শুরুতেই অন্যরকম কাজ করতে। ‘হইচই স্টুডিওজ’-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। একসঙ্গে বহু কাজ করেছি। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ সহ কয়েকটি। ছবিটা নিয়ে যখন ভাবনাচিন্তা শুরু করি, তখন জানতে পারি, এইরকম ছবি বাংলায় আগে হয়নি। প্রোজেক্টটা কীভাবে করব, দর্শকরা কীভাবে নেবেন, ছবির ভবিষ্যৎ কী ইত্যাদি নিয়ে ভাবছিলাম। কারণ আমার ছবি তো ফেস্টিভ্যালের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্য। তার উপর বাংলা ছবির মার্কেট খুবই সংকুচিত। তাই নানারকম ভাবনাচিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রোজেক্টটাও খুব ডিফিকাল্ট। নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে শেষ করতে হত। তখন আমাদের সাহস দেয় ‘হইচই স্টুডিওজ’। চ্যালেঞ্জটা নেয়। তারপর শুরু হয় কাজ। শুটিং হয়েছে গরমে। মে-জুন মাসে। অগাস্টেও কিছু শ্যুট হয়েছে। পুরো কাজটাই হয়েছে কলকাতায়। আমরা ছবিতে কলকাতাটাকে একটু অন্যভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছি। শ্রীস্বপনকুমারের চোখ দিয়ে।’’
দেখা দিয়েছে উন্মাদনা
পুজোর আগেই মুক্তি পেয়েছে টিজার। দেখা দিয়েছে উন্মাদনা। দর্শকরা মুখিয়ে ছবিটার জন্য। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন গৌতম হালদার, শ্রুতি দাস, প্রতীক দত্ত, লোকনাথ দে, শাঁওলি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ক্যামেরা রম্যদীপ সাহার, সম্পাদনা করেছেন সংলাপ ভৌমিক, সুরারোপ করেছেন অমিত চট্টোপাধ্যায়। ছবিটা নিয়ে আশাবাদী দেবালয়। বললেন, ‘‘পুরোপুরি এই সময়ের ছবি। ভাষাও এই সময়ের। আমাদের টার্গেট অডিয়েন্স মূলত নতুন প্রজন্ম। তবে যাঁরা শ্রীস্বপনকুমার পড়েছেন, তাঁরাও সিনেমাহলে আসবেন। আশা করি সবার ভাল লাগবে।’’
দীপাবলি উৎসবের পর থেকেই অস্তিত্ব জানান দেবে শীত। একে একে মুক্তি পাবে বেশকিছু ছবি। সেই দৌড়ে রয়েছে ‘বাদামী হায়নার কবলে’ (Badami Hyenar Kobole)। তবে এই বছর নয়। ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী বছর। জানুয়ারিতে। বড় পর্দার নতুন গোয়েন্দাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত দর্শকরা।