এজেন্সি দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি আর কতদিন?

বিজেপির দুই ভাই, ইডি আর সিবিআই। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো চুরমার করতে এই দুটো অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে। বেশ একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। লিখছেন মইনুল হাসান

Must read

বাংলায় উৎসব এখনও শেষ হয়নি। অসংখ্য মানুষ এই উৎসবের মধ্যে কয়েকটা দিন বিশ্রাম খোঁজেন। আত্মীয়-পরিজন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হন। বাংলায় এবং আমাদের দেশের এটা সংস্কৃতি। কোনও দুর্যোগ দুর্বিপাক নেমে যাতে না আসে তার জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে এই প্রার্থনা আমরা করি। কেন্দ্রীয় অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলির এসব মানার কোনও বালাই নেই। তাদের কাজে কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু যেভাবে তাঁরা কাজ করছেন সেটা আলোচনার ঊর্ধ্বে নয়। মহামান্য আদালত একথা বহুবার বলেছেন। শুধু তাই না, সংস্থাগুলির প্রধান ব্যক্তিকে সবকাজ থেকে রঞ্জিত করা নতুন আধিকারিক নিয়োগ করতে বলেছেন। আদালতেও তাদের কাজের কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি ইডি অথবা সিবিআই (ED- CBI)। দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক এটা আমরা চাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় অনুসন্ধানকারী সংস্থার কাজে যদি মানুষের বা ব্যক্তিবিশেষের বা কোনও কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হয়রানি করা হয় সেটা দেশে সাধারণ বিচার ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করছে এটা বলতে বাধা নেই।

কেন্দ্রীয় সরকার দেশে স্বচ্ছতা আনার নামে একটা যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। এই যুদ্ধের একদিকে আছে শাসকদল আর অন্যদিকে সব বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন যত কাছে আসে ইডি এবং সিবিআইয়ের তৎপরতা তত বাড়তে থাকে। কিন্তু সেটা কেবলমাত্র বিরোধীদের জন্য। শাসকদলের সবাই নাকি দুধে ধোয়া মহাপুরুষ। স্বয়ংশাসিত অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলি নিজের ইচ্ছায় কাজ করবে, এটাই সাংবিধানিক নির্দেশ। যদি তা না হয় তাহলে দেশের ঐক্য ও সংহতি বাধাপ্রাপ্ত হবে। এখন কিন্তু পরিস্থিতি যা ইডি বা সিবিআই কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছাড়া, খুব সহজ করে বললে প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কোনও কাজ করতে পারে না। পশ্চিম বাংলার কথা পরে আলোচনা হবে। পাঁচটা রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজস্থানের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রের বাড়ি সিবিআই হানা হয়েছে। রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশ দু’টিই বড় রাজ্য। কোনও সমীক্ষাতেই এ রাজ্যদু’টিতে বিজেপি’র জেতার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে বিরোধী দলগুলোকে যাতে খুব কড়কে দেওয়া যায় এবং মানুষের মধ্যে একটা ভুল বার্তা বিরোধীদের সম্পর্কে পাঠানো যায় সেটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। বিরোধীরা বারবার একথা বলে আসছে যে ইডি-সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো যাতে কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে তার জন্য নেতাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলিকে পাঠানো হচ্ছে। বিরোধীদের ভয় দেখাবার জন্য। সংসদের মধ্যে যাঁরা বেশি বিজেপি বিরোধী, যে সমস্ত সাংসদ সরকারকে নানা কূট প্রশ্নে নাস্তানাবুদ করছেন তাঁদের পিছনে সিবিআইকে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, হতে থাকা পাঁচটি নির্বাচনে যাতে বিজেপি ভাল ফলাফল করে। তার চাইতে বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেতা। গতবার তিনশোর বেশি আসন পেয়েছে সংসদে বিজেপি। এতগুলাে আসান পাওয়ার পরেও এবারে হারের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। সারা দেশব্যাপী বেকারি, দারিদ্র, জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে মানুষ বারে বারে রাস্তায় নামছে। হাজাররকম প্রতিশ্রুতি দিয়েও বেকার সমস্যা সমাধান তো দূরের কথা, কোনওরকমভাবে থামতেও পারছে না। মানুষ একটা সুযোগের অপেক্ষা করছে।

আরও পড়ুন-সেদিন আদবানি বলেছিলেন ‘মৃত্যুদণ্ড’

এসব দেখেশুনে বিজেপি নেতারা ভয় পেয়েছে যাতে কোনও সন্দেহ নেই। রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রীর ঘনঘন যাওয়া এবং তাঁর বক্তব্য শুনলে বোঝা যাবে তাঁদের উদ্বেগের মাত্রা কতখানি। আনাজপাতির ভয়াবহ দাম। ইদানীং আবার পেঁয়াজের দাম রেকর্ড করছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের একটা বাঁধা ছক আছে। পুরো দােষটা তাঁরা রাজ্যগুলোর কাঁধে চাপিয়ে দেন এবং নিজেরা সাধু সাজার চেষ্টা করেন। তাঁরা জানেন এসব করে তাঁরা পরিত্রাণ পাবেন না। শেষ অস্ত্র হিসাবে ইডি-সিবিআইকে (ED- CBI) দিয়ে ভয় দেখাতে শুরু করেন। সেই কাজটাই কেন্দ্রীয় সরকার, নরেন্দ্র মোদির সরকার বছরের পর বছর বিরোধীদের জন্য করে যাচ্ছে। পশ্চিম বাংলার কথা কিছুটা বলা প্রয়োজন। নানারকম দুর্নীতির অলীক কাহিনি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-মন্ত্রীদের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে সংস্থাগুলি। মহামান্য আদালতের নয়া আদেশে অনুসন্ধান চলছে। এটা হতেই পারে। কিন্তু বছর ঘুরে গিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ তারা আদালতের কাছে পেশ করতে পারেনি। কোনও কোনও সময় আদালতও বিভ্রান্ত হয়েছেন অনুসন্ধান তাঁরা করতে চান। না, সময় করতে চান।
তৃণমূল কংগ্রেসের উপর এত আক্রোশ কেন? খুব সহজ উত্তরগুলো আর একবার এখানে জানানো ভাল বলে মনে করি। ২০২১ সালে বিজেপির একটা লজ্জাজনক পরাজয় হয়েছে পশ্চিমবাংলায়। তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেই সেটা হয়েছে। সেটা হজম হয়নি। তারপর হয়েছে পুরসভা নির্বাচন, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন। কোথাও বিজেপি সামান্য উল্লেখ করার মতো ফল পায়নি। তার চাইতে বড় কথা, যে ক’জন এমএলএ জিতেছিলেন তাঁরা অনেকজন বিজেপি’র সঙ্গে থাকতে চাইছেন না। এখন বিজেপির বিধায়ক ক’জন তা তারা বলতে পারবে না। এতগুলো অপমানজনক পরাজয় মেনে নেওয়া কষ্টকর হচ্ছে। এই কষ্ট থেকে সামান্য প্রশান্তি পাওয়ার জন্য ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগানো হচ্ছে। রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের নেতাদের বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে সংস্থাগুলি। এদের কাজেরও বলিহারি যাই। কোথাও গিয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে। কোথাও গিয়ে কম্পিউটার খুলে কন্যার স্কুল-কলেজের কাজ করে নিচ্ছে, কোথাও মেয়েদের শাড়ি গুনছে, কোথাও জুতো গুনছে, মশলার শিশি, ঘিয়ের শিশি উল্টে দিচ্ছে। বিধায়ককে জিজ্ঞাসা করছে তাঁর বউ ক’টি?
এমন হাস্যকর হয়ে উঠেছে ইডি/সিবিআই (ED- CBI) সংস্থা দুটি তাতে যে কোনও সুস্থ নাগরিকের মাথা নত হবে। এদের কাজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকসভা নির্বাচনে যাতে বিজেপি জিততে পারে তার ঠিকেদারি নিয়েছে ইডি এবং সিবিআই। বিরোধীদলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া, মিথ্যা মামলা সাজানো, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়াটা প্রধান কাজ হয়েছে ইডি/সিবিআই-এর। এভাবেই বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে লোকসভা নির্বাচনে জিততে চায়। কিন্তু মানুষ ঠিক করে ফেলেছেন তাঁরা কী চান।

Latest article