প্রতিবেদন : ইজরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত গাজা (Gaza war)। প্রতি ১০ মিনিটে সেখানে একজন করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এমনই মর্মান্তিক তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানাম ঘেব্রেইসাস। এই তথ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে অসহায় গাজাবাসীর দুর্বিষহ জীবনের করুণ দিনলিপি। এদিকে দুই দেশের ভয়াবহ যুদ্ধের সমাধান খুঁজতে শুক্রবারই ভারত ও আমেরিকার মধ্যে পঞ্চম দফার ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক হয় দিল্লিতে। রাজধানীতে আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় অংশ নেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় উঠে আসে প্যালেস্টাইন সমস্যা ও আরব-ইহুদি দ্বন্দ্বের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথাও। বিদেশসচিব বিনয়মোহন কোয়াত্রা জানান, ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত মেটাতে দ্বি-রাষ্ট্র (ইজরায়েল ও স্বাধীন প্যালেস্টাইন দুই দেশ) তত্ত্বেই জোর দিয়েছে দিল্লি। অন্যদিকে, যৌথ বিবৃতিতে ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে দুই দেশ। হামাসের হাতে পণবন্দিদের মুক্তির দাবিও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, গাজা ভূখণ্ডে আন্তর্জাতিক আইন মেনে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপরও জোর দিয়েছে ওয়াশিংটন ও দিল্লি।
এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গাজার শিশুরা। যুদ্ধের ভয়াবহ দিক তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ঘেব্রেইসাস রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, গাজায় (Gaza war) গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একজন শিশু নিহত হচ্ছে। গাজার কোনও জায়গাই নিরাপদ নয় এবং কেউই নিরাপদে নেই। গাজার ৩৬টি হাসপাতালের অর্ধেক এবং ওই এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলির দুই-তৃতীয়াংশই এখন আর কাজ করছে না। আর যেসব হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এখনও সক্রিয়, সেগুলির সক্ষমতাও প্রায় শেষ হতে চলেছে। গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে। গাজার হাসপাতালের করিডর পর্যন্ত মৃত, আহত, অসুস্থ ব্যক্তিদের ভিড়ে ভরা। মর্গ উপচে পড়ছে। অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছেন।
তবে গাজা যতই ‘নরকে’ পরিণত হোক না কেন, যুদ্ধ থামাতে রাজি নয় ইজরায়েল। বারবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তবে আন্তর্জাতিক চাপে এবার কিছুটা সুর নরম করে ইজরায়েল জানিয়েছে, উত্তর গাজায় রোজ ঘণ্টা চারেকের জন্য অভিযান বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছে ডিফেন্স ফোর্স। ওইসময়ের মধ্যে গাজাবাসীরা ‘মানবাধিকার করিডর’ দিয়ে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেমন যেতে পারবেন, তেমনই বন্দিদের মুক্তির জন্যও ওই সময়টুকু ব্যবহার করা যাবে। একইসঙ্গে অবশ্য ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী জানান, হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই যেমন চলছে, চলবে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে গাজার বাসিন্দারা চলে যেতে পারেন, তাই শুধুমাত্র তাঁদের কথা ভেবে কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। যদিও চার ঘণ্টার এই সময়সীমাকে যুদ্ধবিরতি ভাবলে ভুল হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইজরায়েল কোনওভাবেই গাজা দখল বা নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাবে না।
আরও পড়ুন- আইসল্যান্ডে ১৪ ঘণ্টায় ৮০০ ভূমিকম্প! জরুরি অবস্থা জারি