অভিজিৎ ঘোষ: জয়নগরে তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল প্রধান সইফুদ্দিন লস্করকে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করেছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ মূল দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। স্বীকার করেছে সুপারি নিয়ে খুনের কথা। বাকিদের খোঁজ চলছে। এর মাঝেই জয়নগরের বামনগাছি গ্রামের বেশ কিছু মানুষ ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়েছিলেন। পুলিশের আশ্বাসে তাঁরা ঘরে ফিরছিলেন মঙ্গলবার দুপুরে।
আরও পড়ুন-প্রয়াত সাহারা গ্রুপের স্রষ্টা সুব্রত রায়
সেই সময়েই রাজনৈতিক নাটক শুরু করল ৩৪ বছর ধরে সন্ত্রাস এবং হার্মাদদের জন্মদাতা সিপিএম। বামনগাছির জনা ১০-১৫ গ্রামবাসী, যাঁরা গ্রামে ফিরছিলেন তাঁদেরকে হাইজ্যাক করল এলাকার সিপিএম নেতারা। এরপর মিডিয়া ডেকে এনে নাটক মঞ্চস্থ করা শুরু হল। প্রথমে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। তাদের দাবি, যেতে দিতে হবে বামনগাছি গ্রামে। প্রথমে তর্ক, তারপর গালাগালি এবং পুলিশের উপর হামলা। পুলিশ কিন্তু এতটুকু প্ররোচিত হয়নি। একটি লাঠিও চলেনি। একজনকেও ন্যূনতম ঠেলে ফেলে দেওয়াও হয়নি। শুধু যাত্রাপথ আটকানো হয়েছিল। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় এবং শমীক লাহিড়ী ছিলেন ঘটনাস্থলে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
তিন নেতাকেই মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন ভোটে। একবার নয়, বারবার। দলুয়াখাকি গ্রামের মানুষকে শিখণ্ডী করে সিপিএম ক্রমাগত প্ররোচনা দিয়ে গেল। রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে হুমকি এবং উত্তেজিত এলাকায় প্রবেশ করার অন্যায় আবদার। স্থানীয় পুলিশের কর্তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, গ্রামের মানুষকে প্রবেশ করতে দিতে কোনও সমস্যা নেই। প্রয়োজনে তাঁরাই নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁদেরকে সামনে রেখে যাঁরা ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁদেরকে যেতে দেওয়া হবে না। কেন? পুরোপুরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ বামনগাছিতে দাঁড়িয়েই পুলিশ স্পষ্ট করে দিয়েছে, যাঁরা ঘরে ফিরতে চান তাঁদের মোটেই আটকানো হয়নি।
আরও পড়ুন-এক লাখের সুপারি, স্বীকার করল ধৃত
রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে এবং এলাকার পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করতেই সিপিএম গ্রামের মানুষকে সামনে রেখে পুরনো খেলায় নেমেছে। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় পুলিশ সিপিএমের সব ধরনের প্ররোচনা, অশ্রাব্য ভাষা এবং শারীরিক হেনস্থাকে উপেক্ষা করে পরিস্থিতি সামলেছে।
ঠিক এই সময়েই এক শ্রেণির মিডিয়াও উত্তেজনা তৈরি করতে সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। অবাককাণ্ড হল, যে তৃণমূল অঞ্চল প্রধানকে খুন করা হল সেই পরিবারের কথা একবারও টিভির পর্দায় দেখা যায়নি। তৃণমূল প্রধানের পরিবার, পরিজন, এলাকা নিয়ে গুটি কয়েক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি দীর্ঘ এবং দীর্ঘ সময় ধরে দেখানো হল গ্রামবাসীরা নাকি গ্রামে ঢুকতে পারছেন না। কিন্তু পুলিশ যে তাদের আটকায়নি, আটকেছে সিপিএমের হেরো এবং চক্রান্তকারী নেতাদের তার কথা কে বলবে? গ্রামের মহিলারা চুপচাপ ছিলেন। তাদের উত্তেজিত করতে সাংবাদিক সারাক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। নিজেরাই ঠেলাঠেলি করার পর হাতে কাচের চুরি ভেঙেছে, সেটাও বারবার বলা হল, দেখানো হল। কাচের চুরি তো দেওয়ালে লেগেও ভেঙে যায়। সেই চুরি ভাঙা দেখাতে হবে? মাত্রাজ্ঞান সীমা ছাড়িয়ে যাবে? ন্যূনতম নৈতিকতা থাকবে না?
মহিলাদের সাংবাদিক বলছেন, আপনাদের তো মারা হয়েছে। কারা মেরেছে? পুলিশ তো? চুরি ভেঙে গিয়েছে তো? আপনারা বিধ্বস্ত তো? ক্যামেরার সামনে বারবার এপ্রশ্ন শুনে গ্রামের মহিলারাও মুখ খুলেছেন। সেই সুযোগ সিপিএম কাজে লাগাতে মরিয়া ছিল। অর্থাৎ উত্তেজনা বাড়াও আর উত্তেজনা ছড়াও। ফয়দা তোলো। সংবাদমাধ্যম নিশ্চিতভাবে সব খবর দেখাবে। সবরকমের মতবাদ তুলে ধরবে। কিন্তু মঙ্গলবার জয়নগরের বামনগাছিতে সিপিএমের রিজেক্টেড নেতা এবং এক শ্রেণির মিডিয়া দীর্ঘক্ষণ ধরে উত্তেজনা বাড়াতে যে উসকানি দিয়ে গেল তা নিশ্চিতভাবে ন্যক্কারজনক। যেভাবে খুনের ঘটনাকে বাইপাস করে গ্রামে কারা ঢুকতে পারছে বা পারছে না সেটাকেই মূল প্রতিপাদ্য করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে নিরপেক্ষতাকে লজ্জা দিয়েছে।