চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: কলকাতা ও ইডেন গার্ডেন্সের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা (Australia vs South Africa) ক্রিকেটের সুখস্মৃতির ইতিহাস স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। ইডেনে এলেই প্রোটিয়া ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত হন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস মনে পড়লে। সেই ইডেনে কি কালান্তক সেমিফাইনালের স্মৃতি মুছে নতুন ইতিহাস লিখতে পারবেন টেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি’ককরা? ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই সেই দুঃস্বপ্নের সেমিফাইনালের দগদগে স্মৃতি আজও তাড়া করে প্রোটিয়াদের। তাছাড়া চারবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। ইডেনে চোকার্স তকমা মুছে ইতিহাস বদলানোর চ্যালেঞ্জ যেমন থাকবে, তেমনই ২৪ বছর আগের সেমিফাইনালে অবাক হারের বদলা নেওয়ার সুযোগও থাকছে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে।
শুধু বাভুমা, কাগিসো রাবাডাদের কাছেই নয়, ইডেনে বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনাল অস্ট্রেলীয়দের কাছেও জবাব দেওয়ার মঞ্চ। কয়েকমাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকা (Australia vs South Africa) সফরে গিয়ে ওয়ান ডে সিরিজ হারে অস্ট্রেলিয়া। চলতি বিশ্বকাপে লিগ পর্বের ম্যাচেও বাভুমাদের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছেন প্যাট কামিন্সরা। ইডেন সেমিফাইনালে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে ষষ্ঠবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে আমেদাবাদ যেতে চায় অজি ব্রিগেড। বদলার গন্ধই যেন ভেসে বেড়াচ্ছে দু’দলের দ্বৈরথ ঘিরে।
৯৯ বিশ্বকাপের সময় এই অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অনেকেরই হয়তো জন্ম হয়নি। কামিন্স, বাভুমারা বলছেন, অতীত মাথায় রেখে কেউ এত বড় ম্যাচে নামবে না। তবে ‘বিশেষ’ ম্যাচ দুই দলের কাছেই। তবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল বা এই ধরনের বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বেশি থাকাটাই ইডেনের দ্বৈরথে এগিয়ে রাখবে অস্ট্রেলিয়াকে। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা কখনও বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেনি। ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক কামিন্স বললেন, ‘‘ইতিহাস এই ধরনের বড় ম্যাচে প্রভাব ফেলে না। তবে আমাদের দলের অনেকেরই এই ধরনের পরিস্থিতিতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে সেটাই সব কিছু নয়।’’
সেমিফাইনালের আগের দিন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দলই ঐচ্ছিক অনুশীলন রেখেছিল। দুপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার জনা ছয়েক ক্রিকেটার ইডেনমুখো হয়েছিলেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রস্তুতির পাট চুকিয়ে হোটেলে ফেরেন তাঁরা। মূল ব্যাটার বা বোলাররা হোটেলেই ছিলেন। ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দেখতে টিভিতে চোখ রেখেছিলেন ডি’কক, আইদেন মার্করামরা। অস্ট্রেলিয়া দল সন্ধ্যায় প্র্যাকটিস রাখলেও তাদেরও জনা কয়েক ক্রিকেটার এসে অল্প সময়ের জন্য নেটে কাটিয়ে যান।
ভারতের বিরুদ্ধে ইডেনে জোড়া স্পিনার খেলিয়েছিল। প্রোটিয়া অধিনায়ক ইঙ্গিত দিলেন, ইডেনের ন্যাড়া উইকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভ স্মিথদের বিরুদ্ধেও কেশব মহারাজের সঙ্গী স্পিনার হিসেবে খেলানো হতে পারে আর এক বাঁ-হাতি তাবরেজ শামসিকে। তবে স্বয়ং অধিনায়ক বাভুমার খেলা নিয়েই সংশয় কাটেনি। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সারিয়ে পুরো ফিট নন। ম্যাচের আগের দিনও ইডেনের পিচের উপরে নকিং করে গেলেন। কিন্তু জানালেন, তিনি একশো শতাংশ ফিট নন। তবু চেষ্টা করছেন খেলার। অস্ট্রেলিয়া ভরসা রাখছে বিশ্বকাপে ২১ উইকেট নেওয়া লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার উপরই। সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলের স্পিন তো থাকছেই। দল নিয়ে ধোঁয়াশা রাখলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়কও। মার্কাস স্টোয়নিস ও মার্নাস লাবুশেনের মধ্যে একজন খেলবেন। ভারত-নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালের পিচ বিতর্ক নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই বুধবার ইডেনে গিয়ে উইকেট দেখে যান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। স্পিন সহায়ক হলেও রানের উইকেট, জানিয়ে যান মহারাজ।
আরও পড়ুন- বিরাট পঞ্চাশ, শামিতে ফাইনাল