ঘুরে আসুন জিরো ভ্যালি

বাজেট কম। হাতে বেশিদিনের ছুটি নেই। অথচ মনের ডানা উড়ান চাইছে। আপনার পছন্দের ডেস্টিনেশন হতে পারে অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চল জিরো উপত্যকা। এখানকার শীতল পরিবেশ এবং সবুজের সমারোহ দূর করে দেবে শরীর ও মনের ক্লান্তি। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

অরুণাচল প্রদেশের জিরো ভ্যালি (Ziro Valley)। অনেকেই বলেন ভারতের ভিয়েতনাম। লোয়ার সুবানসিরি জেলার একটি ছোট্ট সুন্দর পাহাড়ি অঞ্চল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। আপাটানি কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ-এর জন্য শহরটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উপত্যকাটি বিখ্যাত সবুজ বন, মনোরম ধান চাষ এবং মাছ চাষের জন্য। চারদিকে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য। সবমিলিয়ে জিরো ভ্যালি সত্যিই দেখার মতো একটি জায়গা। উপত্যকায় বেশ কয়েকটি বড় আকর্ষণ রয়েছে। যেমন ট্যালি ভ্যালি বন্যজীবন অভয়ারণ্য, সিদ্ধেশ্বরনাথ মন্দির, তারিন ফিশ ফার্ম, ডলো ম্যান্ডো ট্রেকিং। ঘুরে আসা যায়।
জিরো বিখ্যাত আপটানি উপজাতির আবাসস্থল। এখানকার অন্যতম প্রধান গ্রাম হল হং ভিলালেজ। এই গ্রামের প্রায় সমস্ত বাড়ি বাঁশ দিয়ে তৈরি। প্রতিটি বাড়ির মাঝখানে একটি বিশাল আকারের স্টোভ অর্থাৎ উনুন তৈরি করা আছে। নিজেদের শরীর গরম রাখতেই এই ব্যবস্থা। আরও একটি আকর্ষণীয় জিনিস হল প্যাডি কাম ফিশ চাষ। এই মাছের চারা জলাশয়ে ছাড়া হয় প্রত্যেক বছর মে মাসে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যখন চারাগুলো বড় হয়ে যায়, তখন জলাশয় থেকে তুলে নেওয়া হয়। ধানের চারা বসানো হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। ফসল তোলা হয় অক্টোবর মাসে।

আরও পড়ুন- সেদিন পা ছুঁয়েছিলে আজ হৃদয় জিতলে, বিরাটে মোহিত শচীন

সারা বছর বেড়ানো যায়। তবে বর্ষা পরবর্তী সময়ে বেড়ালেই আনন্দ বেশি। চোখের সামনে শোভা ছড়াবে সবুজ ধানখেত। সেপ্টেম্বর হল বিখ্যাত জিরো মিউজিক ফেস্টিভ্যালের সময়। ভারতের বিখ্যাত বহিরঙ্গন সঙ্গীত উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই জিরো মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। এছাড়াও দ্রি ফেস্টিভ্যাল নিয়েও বহু মানুষ মেতে ওঠেন। যে সমস্ত অধিবাসী আপটানি সংস্কৃতিকে লালন করেন, মূলত তাঁরই এই ফেস্টিভ্যাল পালন করেন। প্রতিবছর জুলাই মাসে। উৎসবের সময় বিশেষ কিছু দেব-দেবীর পুজো করা হয়। দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।

জিরো ভ্যালিতে (Ziro Valley) অসংখ্য প্রজাতির বহুবর্ণ প্রজাপ্রতি দেখতে পাওয়া যায়। প্রজাপতিদের রংবাহার দেখে মুগ্ধ হয়ে উপত্যকাবাসীরা প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে একটি প্রজাপতি উৎসবের আয়োজন করেন। এছাড়াও রয়েছে মায়োকো ফেস্টিভ্যাল। উপত্যকার উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন যে এই উৎসব আন্তরিকতার সঙ্গে উদযাপন করলে পারিবারিক ভালবাসার বন্ধন দৃঢ় হয়। ফসলের ফলন ভাল হয়। সুখসমৃদ্ধি লাভ হয়। নভেম্বর থেকে এই উপত্যকা অন্যরকম সাজে সেজে ওঠে। ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে।
পুরো উপত্যকা জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র ছোট-বড় পাহাড়। ফলে যাঁরা ট্রেকিং করতে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য জিরো ভ্যালি একেবারে উপযুক্ত জায়গা। পাইন বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়বে পাহাড়ের ঢালে সূর্যের আলোর খেলা। গাছের মাথায় পড়ে ঝিলমিলিয়ে ওঠে রোদ্দুর। এখানকার জীববৈচিত্রও অসাধারণ। পাখি এবং প্রজাপতির পাশাপাশি অজস্র গাছপালা রয়েছে। যেমন বাঁশ, ফার, রডোডেনড্রন, ফার্ন।
ডোলো মান্ডো পাহাড় হল জিরো ভ্যালির সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। নীলচে সবুজ পাইন গাছের জঙ্গলের জন্য বিখ্যাত মিডে। ট্যালি ভ্যালিতে রয়েছে একটি অভয়ারণ্য। সেখানেও নানা প্রজাতির জীবজন্তু এবং প্রজাপতি দেখা যায়। অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছা থাকলে কিলে পাখোতে ট্রেক করতেই হবে। এখানে ক্যাম্পিংয়েরও সুবন্দোবস্ত রয়েছে।

জিরো ভ্যালিতে (Ziro Valley) অন্তত ২৬টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। ফলে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখার সুযোগ রয়েছে। মূল বাসিন্দারা হলেন আদিবাসী আপাতানি সম্প্রদায়ের মানুষজন। মূলত হং, বামিন এবং হিজা গ্রামেই তাঁদের বাস। এই সম্প্রদায়ের মহিলারা ঐতিহ্য মেনে এখনও মুখ জুড়ে উল্কি আঁকান। এছাড়া নাকে পরে থাকেন বেতের নাকছাবি। সম্প্রদায়ের মূল জীবিকা হল ধান চাষ। তাই গ্রামগুলিতে সুবিস্তীর্ণ ধানখেত দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ মিলবে। ধানখেতের মধ্যেই ছোট ছোট জায়গা করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছও চাষ করা হয়ে থাকে। গ্রামগুলিতে ঘোরার জন্য পর্যটকদের অনেকেই বাইক ব্যবহার করেন। অফবিট জায়গা যাঁরা পছন্দ করেন, অরুণাচল প্রদেশের জিরো ভ্যালি গ্রামটি তাঁদের ভাল লাগবেই। শীত হোক বা গ্রীষ্ম, এখানকার আবহাওয়া সবসময়ই শীতল।

কীভাবে যাবেন?
আকাশপথে যেতে চাইলে অসমের লীলাবাড়ি বিমানবন্দরে নামা সবচেয়ে সুবিধাজনক। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছে যেতে পারবেন জিরো ভ্যালি। এছাড়া অসমের জোড়হাট এবং তেজপুর বিমানবন্দর থেকেও গাড়ি পাওয়া যায়। সড়কপথে অসমের গুয়াহাটি থেকে জিরো ভ্যালি যাওয়ার জন্য সরাসরি বাস রয়েছে। ইটানগর থেকেও সড়কপথে যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে জিরো ভ্যালির সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন হল নাহারালাগুন। গুয়াহাটি থেকে ট্রেনে এই স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে ভাড়ার গাড়িতে সহজেই জিরো ভ্যালিতে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

কোথায় থাকবেন?
এখানে থাকার জায়গার অভাব নেই। একাধিক হোটেল, রিসর্ট রয়েছে। ক্যাম্পেও থাকার ব্যবস্থা আছে। আস্তে আস্তে হোমস্টেও তৈরি হচ্ছে। আগে থেকে বুক করে যাওয়া ভাল। শুধু দেশের নয়, বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক ভিড় করেন।

Latest article