দেবতা আর অসুরদের ঘোর যুদ্ধ চলছে তখন। দেবতারা কিছুতেই পারছেন না অসুরকুলকে পরাস্ত করতে। স্বর্গ বে-দখল হয়ে যাবে এইভাবে দেবতারা অসুরদের কাছে পরাজিত হলে। ভাঁজ পড়ল প্রজাপতি ব্রহ্মার কপালে। তাঁকে এখন দেবকুলের প্রয়োজন। তিনি দেবকুলকে ব্রহ্মশক্তি প্রদান করলেন। সেবারের মতো তাই অসুররা হেরে গেল ব্রহ্মশক্তির কাছে। অসুরদের থেকে বহু আকাঙ্ক্ষিত জয় বলে কথা, দেবতারা আনন্দে আত্মহারা হলেন। ধীরে ধীরে তাঁদের মনে জমা হতে থাকল দম্ভ, অহংকার। তাঁরা ভুলে গেলেন যে নিজের শক্তিতে নয়, তাঁরা জিতেছেন ব্রহ্মার শক্তির কারসাজিতে৷ দেবতারা রীতিমতো স্বেচ্ছাচার শুরু করলেন অসুর তাড়াবার দম্ভে। এদিকে দেবী লক্ষ্মীর ভাল লাগে না তাঁর নিজ কুলের এই দম্ভ। এই অহংকারকে না মেটালে দেবতাকুল ধ্বংস হবে ভেবে দেবী লক্ষ্মী এক সাধারণ মেয়ের রূপ ধরলেন। দোহারা শ্যামল এক সাধারণ কুমারী মেয়ে হয়ে তিনি একদিন হাজির হলেন দেবতাদের সভায়। দেবতারা কেউ বিস্মিত, কেউ বিরক্ত।
দেবী লক্ষ্মী তখন জানালেন তিনি এই সভায় এসেছেন দেবতাদের শক্তির পরীক্ষা নিতে। দেবতারা তো হেসেই আকুল। মেয়েটার মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না নাকি? অমর অজর দেবতাদের শক্তির পরীক্ষা নিতে এসেছে এই এক অতি সাদাসিধে মানবী? দেবতারা বললেন, তা কী পরীক্ষা আপনি নেবেন? আপনার ক্ষমতা কতটুকু আমাদের পরীক্ষা নিতে এসেছেন? জানেন আমরা কী করতে পারি? মেয়েটি বলল, আপনারা কী করতে পারেন তাই দেখতে এলাম। এই যে দেখুন আমার হাতে একটি ছোট তৃণ। এই তৃণটি আপনাদের সিংহাসনের সামনে আমি রাখলাম। আপনাদের ক্ষমতা থাকে যদি সরান এই তৃণটিকে। পুড়িয়ে, উড়িয়ে, সরিয়ে যেভাবে হোক তৃণটিকে নষ্ট করে দেখান তাহলে বুঝব আপনাদের কত ক্ষমতা।
দেবতারা ভাবলেন ওটা বুঝি একটি সামান্য হালকা ঘাসের চারা। সহজেই সরিয়ে ফেলবেন। তাঁরা তো আর তখন জানেন না যে ছদ্মবেশে দেবী লক্ষ্মী স্বয়ং ওই তৃণটি এনে রেখেছেন তাঁদের সিংহাসনের সামনে। দেবতারা তৃণটিকে হাতে সরাতে গেলেন, পারলেন না, পবনদেবকে ডেকে উড়িয়ে দিতে গেলেন, পারলেন না, বরুণদেবকে ডেকে প্রবল জলস্রোত ডেকে এনে তৃণটিকে ভাসিয়ে দিতে চাইলেন৷ কত জল বয়ে গেল কিন্তু তৃণটি তার জায়গা ছেড়ে নড়ল না। ডাক পড়ল অগ্নিদেবের। তখন দেবতাদের আত্মাভিমানে আঘাত লেগেছে। অগ্নিদেব এসে সর্বশক্তিতে তৃণটি পুড়িয়ে ফেলতে চাইলেন৷ আগুনে জ্বলল অনেক কিছু। কিন্তু ঘাসের চারাটি জমিতেই থাকল। পোড়ানো গেল না৷ উপড়ে ফেলা গেল না তাকে।
দেবতারা এবার মনে মনে ঘাবড়ে গেলেন৷ দেবরাজ ইন্দ্র বুঝলেন তৃণটিকে সরানো যাবে না এভাবে। এই সাদাসিধে মেয়েটির এমন কোনও জোর আছে যেটা দেবতারা বুঝতে পারছেন না। ইন্দ্র তখন বিনীতভাবে মেয়েটির আসল পরিচয় আর মেয়েটি কী চায় জানতে চাইলেন। মেয়েটি তখন দেবরাজ ইন্দ্রকে জানালেন যে তিনি দেবতাদের বোঝাতে এসেছিলেন যে দেব ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা কতখানি। এই বলে তিনি নিজের লক্ষ্মীরূপের পরিচয় দিলেন৷ উপনিষদ অনুসারে সাদাসিধে বেশের সেই ছদ্মবেশী লক্ষ্মীদেবীই আদতে দেবী জগদ্ধাত্রী।
জগদ্ধাত্রী (Jagadhatri Idol) সেই প্রতিবাদী লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে যে মেয়ে মোটেই মুখ বুজে সব মেনে নেয় না। বাংলায় জগদ্ধাত্রী (Jagadhatri Idol) যেভাবে পূজিত তেমন আর বড় একটা কোথাও নন। বাংলার মেয়েরাও তো দেখতে শান্ত, সাদাসিধে কিন্তু তাদের মধ্যে আছে ঘাসের চারার মতো জীবনীশক্তি। পশ্চিমবঙ্গ এখন এই লক্ষ্মীর শক্তিতে ভেতর থেকে মজবুত। উৎসবের সময় এখন কিন্তু কোথাও যানজট নেই। চিকিৎসা পরিষেবা খোলা সবসময়। সমস্ত এমারজেন্সি সার্ভিস দিনরাত মজুত থাকছে। একটাও অপ্রীতিকর অগ্নিকাণ্ড, একটাও ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা এতবড় উৎসবে ঘটল না। লক্ষ লক্ষ মানুষ আনন্দে মেতে উঠলাম কারওর কোনও ক্ষতি হতে দেওয়া হল না। মানুষের পরিষেবায় খোলা হল অসংখ্য কন্ট্রোল রুম। রাস্তার প্রতিটি কোণে পুলিশ মোতায়েন রইল৷ এমনকী অবলা পশুপাখির হাসপাতাল বারো ঘণ্টার জন্যে খুলে রাখার নির্দেশ এল শাসকের পক্ষ থেকে। যেন মনে হল এইতো দেবী মহালক্ষ্মী, বাঙালি মেয়ের রূপ ধরে পশ্চিমবঙ্গের কোণে কোণে আলো হয়ে রয়েছেন।
সারা রাজ্যে, দেশে এখন উৎসবের সময়৷ এখন চাইব প্রকৃত জগদ্ধাত্রীর শক্তি যেন ছেয়ে থাকে সমাজকে।
আরও পড়ুন- বেঙ্গল রেডি ফর বিজনেস: আসুন বিনিয়োগ করুন, BGBS-এর মঞ্চ থেকে আহ্বান সঞ্জীব গোয়েঙ্কার