সংবাদদাতা, শান্তিনিকেতন : বিভিন্ন অজুহাতে পরিচর্যাহীনভাবে বন্ধ রেখে ঐতিহ্যবাহী কালো বাড়ির দৈন্যদশা তাঁর আমলে বাড়িয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, এই অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহলে। কলাভবনের কাছ থেকে বাড়ির দায়িত্বভার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য বলে কেড়ে নেওয়া হয় কালো বাড়ি। ছাত্রদের বের করে দিয়ে করা হয় তালাবন্ধ।
আরও পড়ুন-সক্ষম-সুদীপের দাপটে জয় বাংলার
সর্বেক্ষণ বিভাগের অনুমতি ছাড়া একে ব্যবহার করা যাবে না। অ্যাসবেস্টসের ছাদ ভেঙে পড়েছে। এক বছর ধরে সেখানে ত্রিপল লাগানো। ছাদ সারানো হয়নি। তার ফলে বৃষ্টিতে মাটির দেওয়ালের ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম কতদিন টিকবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কলাভবনের এক অধ্যাপক। ১৯৩৫ সালের আগে এই কালো বাড়ির সৃষ্টি। তিরিশের দশকে নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেজ, ভুবনডাঙার গৌর মিস্ত্রি ও ছাত্ররা মিলে ছাত্রাবাসকে রিলিফ, মুর্যালে সাজিয়ে নান্দনিক চেহারা দেন। মাটিতে দু’ফুট গর্ত করে মাটিতে গোবর, পাটের কুচি ও আলকাতরা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে তা দিয়ে রিলিফ প্যানেল বানান প্রবাদপ্রতিম শিল্পীরা।
আরও পড়ুন-পেরুর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ ভেনেজুয়েলার
কেরলের মাত্তঞ্চেরী প্যালেসের শিবপার্বতী বিবাহের ভাস্কর্য, হরপ্পার সিল থেকে ষাঁড়ের মূর্তি, এশিরীয় সিংহমূর্তি, মহাবলিপুরমের মন্দিরের কাজ, ভারহূতের বৌদ্ধস্তূপ থেকে যক্ষীমূর্তি, মিশরীয় নারীমূর্তির অসাধারণ মুদ্রা ইত্যাদি অমূল্য সৃষ্টিতে উজ্জ্বল কালো বাড়িটির মাটির ছাদ ১৯৩৬-’৩৭ সালে ধসে পড়ে। করোগেটেড ছাদ দেওয়া হয়। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকর্মের প্রতি প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিন্দুমাত্র কৃপাদৃষ্টি বা মমতা ছিল না। তাহলে হয়ত এমন ক্ষতি হত না বলে অনেকে মনে করেন।
আরও পড়ুন-রান তাড়া করতেই চেয়েছিলাম : ওয়ার্নার
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক সম্পাদিত ‘কালো বাড়ি’ গ্রন্থে অতীতের কালো বাড়ির ছবির সঙ্গে মেলালে বর্তমান কালো বাড়ির দৈন্যদশা স্পষ্ট চোখে পড়বে। বোঝা যাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে মহান সব শিল্পকর্মের। অথচ বিনা অনুমতিতে নিয়ম ভেঙে মাটিনির্মিত এই কালো বাড়ির জন্য গুরুদেব নন্দলাল বসুকে ভৎর্সনা করতে এসে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, কালো বাড়ি আশ্রমের সম্পদ।