প্রকাশনাকে শিল্পের স্বীকৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আনুকূল্যে গিল্ডের প্রতিনিধিরা বিজনেস ডেলিগেশনে স্পেন সফরে গিয়েছিলেন। প্রকাশকরা সুযোগ পেয়েছিলেন বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে ক্রিয়েটিভ ইকনমি সেসনে বক্তব্য রাখা ও অংশগ্রহণ করার।
আরও পড়ুন-আইন সভা না অসভ্যতার আখড়া !
২৮ নভেম্বর দ্য পার্ক হোটেলে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। তাঁরা জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ২০২৪-এর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। বইমেলা শুরু হবে ১৮ জানুয়ারি। বিধাননগর বইমেলা প্রাঙ্গণে। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কবি, সাহিত্যিক, গুণিজনেরা। বইমেলায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য গিল্ড কর্তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যান্য দপ্তর এবং বিধাননগর পৌরসংস্থার কাছেও। তাঁরা আরও জানান, ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা কয়েকদিন এগিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। এর প্রধান কারণ, জানুয়ারির শেষ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বোর্ড পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে। ২টি শনিবার এবং ২টি রবিবার ছাড়াও মেলায় পাওয়া যাবে ২৩ এবং ২৬ জানুয়ারি ছুটির দিন। সুবিধা হবে বইপ্রেমীদের। নামী প্রকাশন সংস্থাগুলো তো থাকছেই, পাশাপাশি অংশগ্রহণের জন্য অনেক নতুন প্রকাশক আবেদন করেছেন। অথচ বইমেলা প্রাঙ্গণের পরিসর একই আছে। তবু পরিকল্পনা চলছে, কী করে আরও নতুনদের মেলায় জায়গা দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন-এনিমিজ ইন মাই লাইফ
অনেকেই মনে করেন, শারদ উৎসবের পরে এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় উৎসব, আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। প্রতি বছর দেখা যায় তুমুল উন্মাদনা। এবারের থিম কান্ট্রি ইউনাইটেড কিংডম বা ইউকে। অংশ নেবে আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, পেরু, আর্জেন্টিনা-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। সেইসঙ্গে থাকছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, তামিলনাডু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, বিহার, অসম, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, কেরল, ওড়িশা ইত্যাদি রাজ্যের প্রকাশনাও। যথারীতি থাকবে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন, চিলড্রেনস প্যাভিলিয়ন এবং অন্যান্য আকর্ষণ। ২৬-২৮ জানুয়ারি, তিনদিন অনুষ্ঠিত হবে কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল। অংশ নেবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা।
আরও পড়ুন-বাংলার ঝুলিতে বাঙালির ভাটনগর
বইমেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ ব্রিটিশ কাউন্সিল। ২০২৩-২৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের ভারতে উপস্থিতির ৭৫ বছর। এবারের মতো, ১৯৯৮ এবং ২০১৫ সালে যখন গ্রেট ব্রিটেন থিম ছিল এবং ২০০৯ সালে যখন থিম ছিল স্কটল্যান্ড, তখনও ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতা বইমেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্রিটিশ উপরাষ্ট্রদূত অ্যান্ড্রু ফ্লেমিং এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ডিরেক্টর ড. দেবাঞ্জন চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন-শিশু নক্ষত্রের ভিড়ে
বাজল মেলার ঘণ্টা। কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে। ঘুম ছুটেছে লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক, মুদ্রক, প্রচ্ছদশিল্পী, বাঁধাইকর্মীদের। সময়ের মধ্যে বই প্রস্তুত করতে হবে তো! অপেক্ষায় দিন গুনছেন বইপ্রেমীরা। প্রাণ ভরে নেবেন নতুন বইয়ের গন্ধ। ঘুরে ঘুরে, পাতা নেড়েচেড়ে কিনবেন পছন্দের বই। গত কয়েক বছরের মতো এবারও বইমেলায় কোনও প্রবেশমূল্য থাকছে না।
জানা গেছে, ২০২৩-এর বইমেলায় এসেছিলেন ২৬ লক্ষ বইপ্রেমী। বই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি টাকা। আশা করা যাচ্ছে, গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি মানুষ আসবেন। বাড়বে বই বিক্রির পরিমাণও। কারণ পাঠকের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। বিনোদনের নানা উপাদান থাকা সত্ত্বেও। শহরে সারাবছর অনেক মেলাই হয়। তবে সব মেলার সেরা কলকাতা বইমেলা। জনপ্রিয়তায় এই মেলা বহুগুণ পিছনে ফেলে দিয়েছে বাকি সব মেলাকে। এখানেই বইয়ের জয়।