ডানা মেলছে শীত। সময়টা বেশ উপভোগ্য। অনেকেরই মনের ডানা উড়ান চাইছে। ব্যাগপত্তর গুছিয়ে কেউ যেতে চাইছেন দূরে কোথাও। কেউ কাছেপিঠে। বহু মানুষের পছন্দের ডেস্টিনেশন পাহাড়। বিশেষত দার্জিলিং, কালিম্পং। আর কিছুদিন পর মুড়ে যাবে বরফের চাদরে। তখন অন্যরকম সাজ। তবে এখনই বা কম কীসে। এই সময়ে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আদর্শ জায়গা হতে পারে কালিম্পং।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীতে ফিরল রবীন্দ্র নামফলক
কালিম্পংয়ে ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। এর অবস্থান এমন একটা জায়গায়, যার একদিকে ভুটান সীমান্ত, আরেক দিকে সিল্ক রুট। দেখা যায় পাহাড়ের সঙ্গে জঙ্গলের সহাবস্থান। কালিম্পংয়ের একটি অফবিট পর্যটন কেন্দ্র দুকা ভ্যালি। মেঘ এখানে গাভীর মতো চরে। তাকালেই চোখের আরাম। তবু খুব বেশি মানুষ নাম শোনেননি। কারণ দুকা ভ্যালি কালিম্পংয়ের স্বল্পখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। সিল্করুট থেকে খুব দূরে নয়। লাভার কাছেই। যাঁরা লাভা-রিশপ-লোলেগাঁও ট্রিপ করেন তাঁরা সাধারণত ন্যাওড়াভ্যালি ন্যাশনাল ফরেস্টে যান। কিন্তু দুকা ভ্যালিতে অনেকেই যান না। জেনে যান না এমনটা নয়, বেশিরভাগ মানুষ না জেনেই যান না। লাভা থেকে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায় দুকা ভ্যালি। বিশেষত লাভা থেকে পেডং যাওয়ার পথে তন্দ্রাবং অঞ্চলে অবস্থিত মইরঁগাঁও হয়ে যাওয়া যায়। কালো পিচের মসৃণ রাস্তা। যেতে যেতে রাস্তায় পাবেন দুকা জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতটি এককথায় অসাধারণ। সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জলরাশির নেমে আসার মধ্যে একটা ছন্দ রয়েছে। অনেকটা নৃত্যরতা নারীর সঙ্গে তুলনীয়। এক মনে তাকিয়ে থাকলে মনের মধ্যে আশ্চর্য এক ভাললাগার জন্ম হয়। বর্ষার পরে দুকা ফলসের চঞ্চলতা বহুগুণ বেড়ে যায়। রাস্তার দু পাশে দেখা যায় নাম-না-জানা কত সব গাছ। গাছে গাছে নানা রঙের ফুল। ডালে ডালে পাখি।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের চক্রা.ন্তে ক্ষু.ব্ধ মুখ্যমন্ত্রী, রাহুলের ফোন নেত্রীকে, খুব শীঘ্রই ইন্ডিয়ার বৈঠক
দুকায় রয়েছে লেপচা জাতির ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন। অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে ঘুরে দেখা উচিত। তবেই ভালভাবে জানা যাবে, চেনা যাবে ওই জনজাতিকে। তাদের সংস্কৃতিকে।
চারদিক থেকে নৈসর্গিক দৃশ্য ঘিরে ধরেছে উপত্যকাটিকে। ভিড়ভাট্টা কম। তাই কুয়াশামাখা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নীরবতা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্বরে ডেকে ওঠে পাখি। কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে অরণ্য, পাহাড়।
ভোরের আলো ফোটার পর উপত্যকায় হাঁটতে বেরনো যায়। ঘড়ি মেপে নয়, আপনমনে হাঁটা। যেখানে নেই বাধ্যবাধকতার বালাই।
আরও পড়ুন-৫৫ হাজার শূন্যপদ, রাজ্য নিয়োগে তৈরি
ঝুম চাষ হল পাহাড়ি এলাকায় প্রচলিত এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি। মূলত জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে চাষ করা হয়। সেই জায়গায় জমির ঊর্বরতা কমে গেলে আগের জায়গা থেকে কৃষি জমি স্থানান্তরিত করে অন্যত্র আবার কৃষি জমি গড়ে ওঠে। পাহাড়ের গায়ে ঢালু এলাকায় করা হয় এই চাষ। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল ফলানো হয়। এই চাষ পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন। এই ধরনের কৃষিপদ্ধতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। দুকা ভ্যালি গেলে ঝুম চাষ না দেখলে বেড়ানো অসম্পূর্ণ। সবুজের পর সবুজ। অপূর্ব দৃশ্য।
এখান থেকে রিশপ, লাভা, ললেগাঁও দেখা যায়। দেখা যায় সিকিমও। চাইলে ঘুরে আসা যায়। অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা। যেখানে নিরিবিলিতে কাটিয়ে দেওয়া যায় একটি দুটি দিন।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীকে কু.কথা, ক.ড়া জবাব তৃণমূলের
দার্জিলিং অথবা কালিম্পং শহরের কথা আলাদা, কিন্তু বেশিরভাগ পাহাড়ি জায়গাতেই রাতেরবেলা ঘরে বসেই কাটাতে হয়। যদিও রাতের পাহাড়ের একটা আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। শোনা যায় নীরবতার ভাষা। দূরের লাভা-রিশপের আলো ঝিকমিক করে জ্বলতে থাকে। আবার সিকিমের দিকের একাধিক পাহাড়ি গ্রামও দেখা যায়। মনে হয়, যেন কৃষ্ণ আকাশের বুকে তারাদল ফুটে আছে। পাহাড়ি নিঝুম পরিবেশে শোনা যায় ঝিঁঝিঁপোকার ডাক। সবমিলিয়ে হালকা শীতের দিনে দুকা ভ্যালি মনকে নিয়ে যেতে পারে এক অন্য জগতে। দেরি না করে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে চটপট বেরিয়ে পড়ুন।
আরও পড়ুন-২৪ ডিসেম্বর নির্বিঘ্নে টেট শেষ করতে তৎপর প্রশাসন
কীভাবে যাবেন?
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কালিম্পং আলগারা হয়ে দুকা ভ্যালি যাওয়া যায়। আবার নিউ মাল জংশন থেকে লাভা, মাইরুং গাঁও হয়ে দুকা ভ্যালি যাওয়া যায়। রাস্তার দু-পাশের দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। কোথাও পাহাড় তো কোথাও চা-বাগান। আবার কোথাও জঙ্গল। তারপরে ধাপে ধাপে পাহাড়ে ওঠা। মাঝে কালিম্পং শহরে হল্ট করে মোমো খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
কোথায় থাকবেন?
দুকা ভ্যালিরতে হোমস্টে আছে। তবে সংখ্যায় খুব কম। কারণ পর্যটকের সংখ্যা এখানে খুব বেশি হয় না। সারাবছর হাতেগোনা লোকজন আসেন। সময় কাটিয়ে যান। খাওয়াদাওয়া নিয়ে চিন্তা নেই। থাকার পাশাপাশি আছে সেটার ব্যবস্থাও। দুকা ভ্যালি থেকে বেশ কিছুটা দূরে গেলে হোটেল পাওয়া যাবে। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।