মুখোশ খুলে পড়ছে একটু একটু করে। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা স্বকীয়তা গিলে খাওয়ার জন্য মরিয়া মোদি সরকার। এখন আর গুজব নয়। প্রমাণিত সত্য। প্রকাশিত তথ্য।
আরও পড়ুন-গাজা ইস্যুতে নেতানিয়াহুর মনোভাবে ক্ষুব্ধ আমেরিকাও
লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতি এবং কর্তব্যের শর্তাবলি বদলে ফেলতে সক্রিয় হল নরেন্দ্র মোদি সরকার। সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় পাশ করানো হল বিতর্কিত বিল। বিরোধী সাংসদদের তুমুল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সংসদের উচ্চকক্ষে পাশ হওয়া ওই বিতর্কিত বিলে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র। খবর ১২ ডিসেম্বরের। ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনারস’ (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশনস অফ সার্ভিসেস অ্যান্ড টার্মস অফ অফিস) বিল ২০২৩-এ প্রস্তাব রয়েছে যে, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী দ্বারা মনোনীত একজন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটির বৈঠকে গৃহীত নাম যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনিই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। ওই বিতর্কিত বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশের পরে আইনে পরিণত হলে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ প্রশ্নের মুখে পড়বে, এটা সংশয়াতীত সত্য। অথচ রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটেই পাশ হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিল।
আরও পড়ুন-হামলার চেষ্টায় কী শাস্তি হবে?
চলতি বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দেশে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবে একটি কমিটি। এই কমিটির সদস্য হিসাবে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা। সুপ্রিম কোর্টের সেই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই রায় পাশ কাটিয়ে মোদি সরকার প্রস্তাবিত কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নাম ছাঁটাই করে ‘প্রধানমন্ত্রী এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী’র নাম নিয়োগ কমিটিতে ঢোকাতে সক্রিয় হল। এর ফলে বিরোধী দলসমূহের আপত্তি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পছন্দসই আমলাদের নাম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারবে মোদি সরকার। রাষ্ট্রপতি সেই পছন্দে সায় দিলেই সরকারের ঘনিষ্ঠ কোনও আমলা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিতর্কিত বিলটি আইনে পরিণত হলে কমিশন পুরোপুরি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা পুরোপুরি রয়েছে। আপাতভাবে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ভোটের আগে সেটাকে কুক্ষিগত করে ফেলতে পারলে গেরুয়া পক্ষের লাভ সব দিক থেকেই। গেরুয়া পক্ষের বেলায় ‘নীরব’ আর বিরোধী দলগুলির ক্ষেত্রে ‘অতিসক্রিয়’ ইডি সিবিআই-সহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় অচিরেই নির্বাচন কমিশনের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল। লোকসভা ভোটের আগে পরিকল্পিত ভাবে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে কব্জা করতে চাইছে বিজেপি। আর তা করতে গিয়ে অগ্রাহ্য করা হল সুপ্রিম কোর্টকে।
আরও পড়ুন-বিস্ফোরণে মৃত তিন
নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত এই সরকার মানুষ মারতে, মানুষের ন্যায্য পাওনা মেরে দিতে ইতস্তত করছে না। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনায় রাজ্যের পাওনা, ওরা সব আটকে রেখেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থ বলেছেন, “এই সরকার (বিজেপি) যদি থাকে তা হলে সব ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাবে।’’ তাঁর প্রতিটি মন্তব্য একশো শতাংশ সঠিক। জননেত্রী বলেছেন, ‘‘যখন এক দেশ, এক কর হল, তখন ভেবেছিলাম ভাল হবে। এখন সব রাজ্য থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, আর রাজ্যকে কিছু দিচ্ছে না।’’ কেন্দ্রের শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা বাংলায় মিথ্যা বলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই বলেন, ‘‘এসে বলছে, সব ওরা নাকি করে দিয়েছে। আরে, ঝুট বলে কাউয়া কাটে! একটু অপেক্ষা করো, কাক তোমাদেরও ঠোকরাবে।’’ সত্যিই তো, ‘‘ওরা ভোটের আগে অনেক দেব দেব বলবে, ভোট মিটে গেলে কিচ্ছু দেবে না।’’ ‘‘দু মাসের মধ্যে ভোট। এখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আমরা বিনামূল্যে রেশন দেব। আবার যেই হেরে যাবে, গোল্লায় চলে যাবে।! জিতে গেলেও দেবে না।’’
আরও পড়ুন-নিরাপত্তায় গলদ, সংসদে ভিজিটর পাস বন্ধের নির্দেশ
এই মিথ্যেবাদী জমানার হাত থেকে বাঁচতে গড়ুন মানুষের জোট, বাংলায় জোড়া ফুলে পড়ুক সব ভোট।
প্রমাণিত হোক, শেষ কথা বলে জনতা। তাই জনতার আস্থাবিন্দু একটাই, মমতা, মমতা এবং মমতা।