হেমন্তের একটি নিজস্ব গন্ধ আর বর্ণ রয়েছে। মাঠে মাঠে সোনালি ধানের খেতে, টিয়া পাখির আনাগোনা। তার মাঝেই ভিনদেশি শ্রমিকের প্রিয়ার জন্য মনকেমনের সুরে, উত্তুরে হাওয়ার কাঁপন। ভিতরের অনুভবে বায়বীয় হয়ে উঠি কখনও কখনও।
আরও পড়ুন-শহর জুড়ে সিনেমা
ঋতুর রাজা বসন্ত এবং ঋতুর রানি শরৎ স্বীকৃত হলেও, গোপনে একটি ঋতু মায়াময় রূপের ডালি সাজায়, যা শরৎ এবং বসন্ত ঋতুর মাঝামাঝি প্রকৃতিতে বিরাজ করে। প্রকৃতিতে যে বড় একটি পরিবর্তন, শীত আসতে থাকার সঙ্গে সূচনা হয় তা হেমন্ত। স্বাভাবিকভাবেই হেমন্ত ঋতু নিয়ে কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস রচিত হয়েছে সময়ের চাদরে। হেমন্ত ঋতুর গুণগান উঠে এসেছে বারবার কবির মানসপটে। কার্তিকের অসাধারণ রূপ আর অগ্রহায়ণের নবান্ন, সব মিলিয়ে অসাধারণ রূপ বিরাজ করে প্রকৃতির পাঠশালায়।
আমাদের এই বৈচিত্রের বাংলায় হেমন্তের গান বাজে আকাশে, বাতাসে, মনে ও শরীরে। কবি রবীন্দ্রনাথের অনুভবে, ধরা পড়ে—
কার্তিকের এই ধানের খেতে
ভিজে হাওয়া উঠল মেতে
সবুজ ঢেউ’য়ের পরে।
পরশ লেগে দিশে দিশে
হি হি করে ধানের শিষে
শীতের কাঁপন ধরে।
(বৃষ্টি রৌদ্র— শিশু ভোলানাথ)
আরও পড়ুন-শতবর্ষে সমরেশ বসু
ঋতু বদলের এই বাংলায় বৈচিত্রময় প্রকৃতিই যেন জীবন। বঙ্গাব্দের বর্ষপঞ্জি অনুসারে কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস হেমন্তের। রূপমুগ্ধকর এক নয়নশোভন রূপের ঋতু হেমন্ত। যে ঋতুর সঙ্গে মানুষের হাসি-কান্না, জরা-মৃত্যুর অনুভব জড়িয়ে রয়েছে। প্রকৃতির শাসনে, নিভৃতচারীর অনুভবে, নদীর গতিতে সেই হেমন্তের ছবি পেয়েছে এক নীরবতার ভাষা। এই হেমন্ত ঋতুর রয়েছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। সকালের শিশির-ভেজা সবুজ ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে ওঠে শীতের আগমনি বার্তা। মাঠে মাঠে পাকা সোনালি ধান, কৃষকের ধান ঘরে তোলার গ্রামীণ গোগাড়ির দৃশ্য, কৃষক-কৃষাণীর মুখে মুখে আনন্দ— সবই হেমন্তের রূপের অনুষঙ্গ যেন। ঝিমনো অলস দুপুরবেলা গ্রামের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে আজও চলে যায়, ক্যাঁ-কটো-কটো করে গোগাড়ির সাবেকি কাঠের চাকা। বৈচিত্রময় রূপের সাজে প্রকৃতির খেলাঘরে হেমন্তলক্ষ্মী বিরাজ করে, নিজের নিয়মে। হেমন্ত ঋতুতে চলে শীত-গরমের মাখামাখি। হেমন্তের শুরুর দিকে এক অনুভূতি আর শেষ-হেমন্তে অন্য অনুভূতি যেন বুকের মধ্যে গাঁথা। ভোরের আকাশ ঢেকে হালকা কুয়াশা, শিশিরে ভেজা মাঠ-ঘাট তারপর ক্রমেই ধরণী উত্তপ্ত হতে থাকা আলসে ছোট দুপুর। দূরের পুকুরপাড়ে পানকৌড়ির এদিক-ওদিক। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য লালিমায় বাংলার ঋতুর রানি যেন মরা-সবুজের রঙিন হেমন্ত। তবে ধীরে ধীরে বেলা গড়িয়ে নামে শীতের রাত টুপ করে। আর সেই অনুভবেই রবীন্দ্রনাথ লেখেন :
‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে॥
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো— “দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।”
(হেমন্ত—১৭১ গীতবিতান)
আরও পড়ুন-প্রকাশিত কাব্য সংকলন
আমাদের কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এই ঋতুতেই প্রধান ফসল ধান ঘরে ওঠে। সারা বছরের মহাজনের কাছ থেকে ধার নেওয়া পাওনা পরিশোধের সুযোগ হয় ফসল ঘরে ওঠার পরেই। গ্রামে গ্রামে ধর্মগোলা, কোথাও-বা বারি নেওয়ার রীতি। তবে শিষ-কুড়ানো ধানের ছোট ছোট বাজার বসে, গ্রামের মোড়ে মোড়ে। সেই বাজারের বেশির ভাগ বিকিকিনি ধানের পরিবর্তে। আর খাবারদাবারও পাওয়া যায় সেখানে। সারা বছরের মুখের অন্নের জোগানও আসে এই সময় মাঠ থেকে। হেমন্ত তাই সুখ-সমৃদ্ধির কাল। তাই মুখের হাসিটা অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই থাকে, বাংলার গ্রামীণ কার্তিকের নবান্নের দেশের মানুষের কাছে। অন্নপূর্ণা মা আসেন গ্রামে গ্রামে। সঙ্গে বাবা ভোলানাথ ভিক্ষুকের বেশে। নবান্নকে ঘিরে যাত্রা, নাটক হয় অনেক গ্রামে।
আরও পড়ুন-ফের বাম আমলে নিয়োগে বড়সড় অনিয়ম, হোমিওপ্যাথি কলেজেও জাল ডাক্তার
হেমন্ত এলেই পাল্টে যায় বাংলার প্রকৃতি আর মানুষ। গ্রামের পরিবেশে আনন্দ বিরাজ করে। গ্রাম্য মেলা, ঘরে ঘরে পিঠে-পায়েস বানানোর আয়োজন, ঢেঁকির শব্দ— সব মিলিয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতিকে বরণ করে নেওয়া হয় হেমন্তের কোলে। এই ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল আর গাঁদা। সকালের খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যায় গাছিদেরও। এই সময় তোলা শুরু হয় নতুন আলু। গ্রামের বাইরে আখের শাল বসে। নতুন গুড়ের গন্ধে মাতে ভুবন।
হায় হেমন্ত লক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা—
হিমেল ঘন ঘোমটাখানি ধূমল রঙে আঁকা।
এটি রবীন্দ্রনাথের গীতবিতানের হেমন্তের ২য় গান। গানটিতে কবিগুরু হেমন্তকে নারী রূপে কল্পনা করেছিলেন। এই একটি শব্দ হেমন্তলক্ষ্মী, সেই শব্দটাতে তার পূর্ণ রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আবেগ আর নবান্নের ঘ্রাণে হেমন্তের নতুন অন্বেষণ। এই আবেগ-মাখা রোম্যান্টিকতা, নস্টালজিয়া শুধু কবিগুরুর গানেই সম্ভব। যা তাঁর খুব কম গানেই রয়েছে জড়িয়ে। হেমন্তের তৃতীয় গানে আমরা পাই প্রেম-বিরহের কানাকানি।
‘হেমন্তে কোন্ বসন্তেরই বাণী পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি॥
বকুল ডালের আগায় জ্যোৎস্না যেন ফুলের স্বপন লাগায়।
কোন্ গোপন কানাকানি পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি॥’
গীতবিতানের হেমন্তের তৃতীয় গান এটি। এটি মিশ্র রাগের গান। এই গানে কবিগুরু বেহাগ ও খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
আরও পড়ুন-জাপান নিয়ে বই
হেমন্তের কুয়াশা ঢাকা পূর্ণিমার রাত্রিটি কবিকে যেন পৌঁছে দিল আসন্ন বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে সুদূর দিগন্তে। এই বিশেষ পূর্ণিমা রাত যেন মুহূর্তেই মুছে দিল হেমন্তের সব মালিন্য।
শরতের শেষে হেমন্তের আগমনে সকরুণ প্রণয় প্রতীক্ষার বেদনা ফুটে ওঠে প্রকৃতির কুলঙ্গিতে। কুহেলিবিহীন, ভূষণবিহীন নীরব হেমন্তের নিষ্প্রভ, নির্ভূষণ আর মলিন রূপে ফুটে উঠে প্রকৃতির রূপটি।
এই ঋতু বঙ্গসন্তানদের অন্নের জোগান দেয় আজও। লক্ষ্মীর আগমন ঘটে আজও, এই ঋতুকে ঘিরেই। তাই তো কবিগুরুর সৃষ্টিতে হেমন্ত লক্ষ্মীস্বরূপিণী আর অন্নপূর্ণা। স্বল্পসংখ্যক গান নিয়েই তিনি হেমন্তবন্দনা করেছেন।
এই রূপের টানেই কি না তিমির হননের কবি, আমাদের রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ একবার নয় বারবার তাঁর কবিতায় হেমন্তকাল এনেছেন। কখনও কার্তিকের নবান্নের দেশে তার ফিরে আসার আকুতি, তা তো আর এমনি এমনি হয়নি। এই রূপের মায়া এমনি করেই জেগেছে বুকের ভিতর। কবি তাঁর ‘একটি নক্ষত্র আসে’ কবিতায় লিখেছেন— ‘একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চলে/ ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে/ সে আসবে মনে হয়;— আমার দুয়ার অন্ধকারে।’ হেমন্তে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের বহু ব্যবহার দেখা যায় নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায়। বারবার হেমন্ত এসেছে শব্দের ছবিতে, মায়াতে। হেমন্তের মাঠ-ঘাট, সন্ধ্যা, কুয়াশা, শিশির ভেজা ভোর— সব তাকে দারুণ ভাবে টেনেছে। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে/ এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয়—/ হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ এই কবিতাংশে কবি যেভাবেই ফিরে আসতে চান তা কিন্তু আসতে চেয়েছেন হেমন্তের নবান্নে আর অগ্রহায়ণের কাছে। এই যে শীতে আমরা জড়োসড়ো হয়ে যাই, অবসন্ন হয়ে পড়ি, তার আগমনি বার্তা শোনায় হেমন্ত। জীবনানন্দের কবিতায় হেমন্তকালের উপস্থিতিতে মনে হয় এই ঋতুই তাঁকে বেশি টেনেছে। যেখানে ঋতুরাজ বসন্ত আর শরতের বর্ণনাও এতবার এতভাবে আসেনি তাঁর কাছে। জীবনানন্দ দাশের ‘একদিন এই কুয়াশার মাঠে’ কবিতায় শীতের বর্ণনা থাকলেও এর কয়েকটি লাইনে হেমন্তের বর্ণনা পাওয়া যায় গভীর ভাবে। তিনি সেখানে লিখেছেন ‘আশ্চর্য আর বিস্ময়ে আমি চেয়ে রব কিছু কাল/ অন্ধকার বিছানার কোলে/ আর সে সোনালি চিল ডানা মেলে দূর থেকে/ আজও কি মাঠের কুয়াশায় ভেসে আসে?/ সেই ন্যাড়া অম্বনে’র পানে/ আজও চলে যায় সন্ধ্যা সোনার মতো হলে/ ধানের নরম শিষে মেঠো ইঁদুরের চোখ/ নক্ষত্রের দিকে আজও চায়?’ এখানে ‘সন্ধ্যা সোনার মতো হলে’ এবং ‘ধানের নরম শিষে’ শব্দগুলো হেমন্তের বর্ণনার ইঙ্গিত করে। যা দেখা যায় তা হল ধানের হলদে রং যা মিশে যায় সন্ধ্যার সঙ্গে। উঠোন ভর্তি থাকে ধানের ছড়ায়। এই কার্তিক মাসেই সেই দৃশ্যের দেখা মেলে বাঙালিদের ঘরে ঘরে। জীবনানন্দ দাশের কবিতায়ও উল্লেখ রয়েছে ধানের ছড়ার কথা। তিনি তার ‘কুড়ি বছর পরে’ কবিতায় লিখেছেন— ‘আবার বছর কুড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা যদি হয়/ আবার বছর কুড়ি পরে—/ হয়তো ধানের ছড়ার পাশে/ কার্তিকের মাসে/ তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে/ তখন হলুদ নদী/ নরম নরম শর কাশ হোগলায়-মাঠের ভেতর।’
আরও পড়ুন-দাবি আদায়ে গায়ে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, জেরায় সাগরের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি
আমাদের ফসল উৎপাদন আর ঋতু-নির্ভর ফল, ঋতু বদলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ভিন্ন বৈচিত্রে হাজির হয় আমাদের বাংলায়। প্রকৃতির বৈচিত্রের সঙ্গে আমাদের মনেও বৈচিত্র আসে। শরতের সাদা মেঘের ভেলা এখনও ভাসতে দেখা যায়। বিশেষ করে কার্তিকের আকাশে। প্রকৃতির এই নতুন সাজ বাংলার মানুষের কাছে খুব চেনা। শত বছরের পরিচিত দৃশ্য। তবে বাংলার রূপের নাম হেমন্ত। আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিক এলেই নবান্নের ধুম পড়ে যায়। প্রকৃতির জঠরে রঙের উজান বয়। এর পরেই যেহেতু শীতকাল। তাই এই মাস থেকেই শীতের আগমনি বার্তা বোঝা যায়। হেমন্তের রাতে নক্ষত্ররা ঝরে পড়ে। অসংখ্যা তারায় ভরে থাকে আকাশ।
জীবনানন্দ দাশ তাই সেই হেমন্তেই ঝরে যেতে চেয়েছেন। এক অদ্ভুত মায়া-ভরা রাত এই হেমন্তে নামে আজও। তিনি তাঁর ‘নির্জন স্বাক্ষর’ কবিতায় লিখেছেন— ‘তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে/ আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!/ যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝড়ে/ পথের পাতার মতো তুমিও তখন/ আমার বুকের পরে শুয়ে রবে?।’ কবি এখানে হেমন্তের ঝড় বলতে প্রকৃতির রুদ্র রূপকে বুঝিয়েছেন। না বুকের ভেতর ভেঙে যাওয়ার ঝড়কে বুঝিয়েছেন তা ঠিক স্পষ্ট নয়। এই সময় মাঝে মাঝে প্রকৃতিতে ঝড়ও হয়।
আরও পড়ুন-কৃষকবন্ধু-র অনুকরণে হস্তশিল্পীদের জন্যও নয়া প্রকল্প
আবার তিনি ‘যদি আমি ঝরে যাই একদিন’ কবিতায় বলেছেন, ‘যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়/ যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে ক্ষেতে স্থান চোখ বুজে/ যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাঁপার নীড়ে ঠোঁট আছে গুঁজে।’ এখানে কার্তিকের সন্ধ্যা ভেদ করে নীল আকাশ জুড়ে কুয়াশায় কবি ঝরে যাওয়ার কথা বলেছেন। ধানে ভরা খেত তো আছেই। খেজুর রস, হালকা শীতের মেজাজ, ঘাসের ডগায় শিশিরের অস্তিত্ব, সকালের মিষ্টি রোদ— সবকিছুই যেন প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে আসে আমাদের মাঝে। হেমন্ত এক অপরূপ রূপের ঋতু। যে ঋতুর সঙ্গে মানুষের আনন্দের যোগসূত্র রয়েছে, সেই আদি কাল থেকে।
সারা বছরের মুখের অন্নের জোগানও আসে এই সময়। হেমন্ত তাই সুখ-সমৃদ্ধির কাল। হেমন্তের দুই মাস কার্তিক আর অগ্রহায়ণ রূপে আলাদা। শরৎ ও শীত দুইয়েরই দেখা মেলে হেমন্তে। সম্ভবত হেমন্তকে খুব একটা আলাদা করার প্রয়োজন হয় না! সম্ভবত সেই পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখেই কবি তাঁর ‘এই জল ভালোলাগে’ কবিতায় অঘ্রাণের স্তুতি করেছেন। তিনি লিখেছেন—
‘আমার দেহের পরে আমার চোখের পরে ধানের আবেশে/ ঝরে পড়ে;— যখন অঘ্রাণ রাতে ভরা ক্ষেত হয়েছে হলুদ।’
আরও পড়ুন-আরব সাগরে জাহাজ হাই.জ্যাক, উদ্ধারে ভারতীয় নৌবাহিনী
অঘ্রান-প্রান্তরে তিনি খুঁজেছেন অন্যকিছু। তিনি ‘অঘ্রাণ প্রান্তরে’ কবিতায় লিখেছেন, ‘শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া;— অঘ্রাণ এসেছে/ আজ পৃথিবীর বনে/ সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে/ হেমন্ত এসেছে তবু; বললে সে, ঘাসের ওপরে/ সব বিছানো পাতার।’ আবার তিনি ‘অবসরের গান’-এ লিখেছেন, ‘যেই রোদ একবার এসে শুধু চলে যায়/ তাহার ঠোঁটের চুমো ধ’রে/ আহ্লাদেও অবসাদে ভরে আসে আমার শরীর/ চারিদিকে ছায়া-রোদ-ক্ষুদ-কুঁড়া-কার্তিকের ভিড়।’ কার্তিক-অঘ্রানের প্রতি কবির যে আলাদা মায়া ছিল সেকথা বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের মন জুড়েও হেমন্তের ভাললাগাটুকু বিষাদের হলুদে মাখা।