নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি: লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো। দেশ থেকে জনবিরোধী এই সরকারকে উপড়ে ফেলতে হবে। তাই ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মুলা মেনে কাজ শুরু করে দিল জোট নেতৃত্ব। আসনরফা থেকে যৌথ কর্মসূচি, দেশ জুড়ে জনসভা, কোথাও কোনও সমস্যা হলে ফের একসঙ্গে বসে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করা, এরকম একগুচ্ছ ফর্মুলা বাতলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ফর্মুলায় সায় দিলেন বাকিরাও। বিজেপিকে হারাতে আগেই একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দিয়ে লড়ার ফর্মুলা বলেছিলেন নেত্রী। এদিনও সে কথাই তুলে ধরে তিনি স্পষ্ট বলেন, কংগ্রেস ৩০০ আসনে প্রার্থী দিক। ২৪৩ আসনে প্রার্থী দেবে বাকিরা। যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে লড়ুক। কংগ্রেসের শক্তি যেখানে বেশি সেখানে বাকিরা প্রার্থী দেবে না। আবার বাকি বিরোধী দলগুলির যার যেখানে শক্তি সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে না। এই ফর্মুলা মেনে চললে বিজেপিকে হারানো সম্ভব। বাংলার প্রসঙ্গ তুলে নেত্রী বলেন, জোটের স্বার্থে কংগ্রেসকে ২টি আসন ছাড়বে তৃণমূল। আবার মেঘালয়ে কংগ্রেস পেয়েছে ১৫ শতাংশ ভোট, তৃণমূল পেয়েছে ১২ শতাংশ ভোট। ফলে অঙ্ক মেনে সেখানেও তৃণমূলকে ১টা আসন ছাড়ুক কংগ্রেস।
আরও পড়ুন-জোটের মুখ হিসেবে খাড়গের নাম প্রস্তাবের কারণ বিশ্লেষণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নেত্রীর প্রস্তাব, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসনরফা চূড়ান্ত করে যত দ্রুত সম্ভব দেশ জুড়ে যৌথ কর্মসূচিতে নামুক ইন্ডিয়া। একইসঙ্গে সৌজন্য দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে প্রস্তাব রাখেন সব থেকে সিনিয়র ও দলিত মুখ হিসেবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে সামনে রাখা হোক। এই প্রস্তাবে সায় দেন বাকিরাও। এর আগেও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের দ্বিতীয় বৈঠকেই আসনরফার কথা বলেছিলেন। চতুর্থ বৈঠকে কার্যত ডেডলাইন দিয়ে দিল তৃণমূল। দলের সফা কথা, লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস বাকি। এক্ষুনি আসনরফা সেরেই যৌথ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে পড়া উচিত। বিজেপিকে হারাতে হলে জোটকে সংঘবদ্ধ থাকতে হবে এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে জোটের শক্তি বাড়াতে প্রতিটি দলই নিজেদের যত বেশি সম্ভব আসন সংখ্যা জিতে আসবে। এদিন সন্ধ্যায় জোট বৈঠক শেষে সকলের তরফে মল্লিকার্জুন খাড়্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, ২৮টি দল বৈঠকে অংশ নিয়েছিল। প্রত্যেকেই তাদের মতামত রেখেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দ্রুত প্রচারে মাঠে নামবে ইন্ডিয়া জোট। দেশ জুড়ে ১০-১২টি প্রচার সভা হবে। ঐক্যবদ্ধ জোট হিসেবেই আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করব। যদিও এদিন বৈঠক শেষে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও কথা বলেননি। আসনরফা চূড়ান্ত না করা গেলে বিজেপিকে হারানো কঠিন হবে। ফলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে জোটের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার আগে আসনরফা চূড়ান্ত করে ফেলা হোক। এদিন নেত্রী ও অভিষেকের সঙ্গে জোট বৈঠকে গিয়েছিলেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও। হাতে আর বেশি সময় নেই। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করে দেশের জ্বলন্ত ইস্যুগুলিকে সামনে রেখে, বিজেপির জনবিরোধী ও স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে প্রচারে নামতে হবে। দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে বর্তমান ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ধর্মান্ধতা দেশকে কোন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে।