প্রতিবেদন : একদিকে সাংবাদিকতা অন্যদিকে সাহিত্য। দুটির ক্ষেত্র আলাদা। কিন্তু আজকের সময়ে আদৌ কি দুটি পথ আলাদা হতে পারে? সাংবাদিক-লেখক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) বইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে এসে এই প্রশ্ন তুলে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। খবর তৈরি হয় তথ্যের ভিত্তিতে। সেই তথ্য থেকে অন্য ভাবনা নিয়ে যায় সাহিত্যের আঁতুড়ঘরের দিকে। ফলে সাহিত্য ও সাংবাদিকতাকে আদৌ কি আলাদা করা যায়! আলাদা করা উচিত? নাকি দাবি জানায় মেলবন্ধনের। কুণালের লেখায় সম্ভবত তারই ছায়া দেখলেন লেখক-অভিনেতা ব্রাত্য। বইয়ের সুললিত লেখনী এবং পথের বাঁকের কথা বলতে গিয়ে তাঁর বক্তব্য, এই পথ কেবলমাত্র পথ নয়, এ আসলে মন, সময়, হৃদয়, স্মৃতি। সেই স্মৃতির বাঁককেই এক অপূর্ব লেখনীতে উন্মোচিত করেছেন কুণাল ঘোষ।
‘পথের বাঁকে এসে’— এটি কুণাল ঘোষের ৪১তম বই। বৃহস্পতিবার বিকেলে টাকি হাউজ বয়েজ স্কুলের অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ করল এই বইটি। এই স্কুলেরই প্রাক্তনী কুণাল (Kunal Ghosh)। সারা ভারতের এখনও পর্যন্ত তিনিই একমাত্র সাংসদ যিনি নিজে যে স্কুলে পড়েছেন, সেই স্কুলকে সাংসদ তহবিল থেকে এক কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই অনুদানেই গড়ে উঠেছে অডিটোরিয়াম। আর সেখানেই এদিন বিকশিত হল সাহিত্যিক-সাংবাদিক কুণাল ঘোষের নয়া সৃষ্টি। বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, নারী- সমাজকল্যাণ তথা শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘সাংবাদ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস, টাকি হাউজ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার স্বাগতা বসাক, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সমিত রায়, সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা, প্রদীপ শীল, তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী, অয়ন চক্রবর্তী, অলকানন্দ দাশ। দর্শকাসনেও ছিলেন বিশিষ্টজনেরা। বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলতে উঠে প্রথমেই প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, নিজের এমপি ল্যাডের টাকা থেকে দফায় দফায় টাকি হাউজ স্কুলকে সর্বোচ্চ অনুদান দিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায় উঠে আসে বিদেশি সাহিত্যিক থেকে বাংলার বিশিষ্ট সাংবাদিক-সাহিত্যিকের নাম। মনে করিয়ে দেন, কীভাবে সাংবাদিক কুণাল ঘোষকে বলা মানস ভুঁইয়ার রানি শিরোমণি সম্পর্কিত নোট ১৭ বছর পরে তাঁকে ‘রানি সাহেবা’ লেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। তাঁর কথায় বারবার উঠে আসে কুণাল ঘোষের কামব্যাকের দৃষ্টান্ত। সাংবাদিক কুণাল ঘোষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে নস্টালজিক মন্ত্রী শশী পাঁজা। প্রয়াত রাজনীতিবিদ অজিত পাঁজার পুত্রবধূ বলেন, আমার শ্বশুরমশাই একবার বলেছিলেন, কুণাল তুমি কলম চালাও না তলোয়ার! যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন কুণাল তাতে কাম ব্যাক করা খুব কঠিন। কিন্তু তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন সেটা একটা আলাদা অধ্যায়। সৃঞ্জয় বসুর কথায়, কুণালদার থেকে কীভাবে লড়াই করে ফিরে আসা যায় সেটা শিখতে হয়।
আরও পড়ুন- বিরোধীদের বাইরে রেখে সব আপত্তি উড়িয়ে লোকসভায় বিল পাশ
বইটির প্রকাশক পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিধাহীন অনুভূতি, এই বই পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝেই ভিজে উঠেছে চোখ। বন্ধুর বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিক অনিন্দ্য জানার মন্তব্য, কুণাল কলকাতার রাজনীতিতে ‘দাদা’। তাঁর প্রত্যাবর্তন দেখে আমি শিখি। কুণালের লেখনীর তাৎপর্য শোনালেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্তও। অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির আচার্য সমিত রায় বলেন, যে কেউ সমস্যায় পড়লে সবসময় পাশে থাকেন কুণাল ঘোষ।
বক্তাদের বলার মধ্যেই উঠে মাইক হাতে নেন কুণাল ঘোষ। জানান, তাঁর খারাপ সময়ে যে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ তাঁর পাশে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সমিত রায়। ছিলেন আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী, অভিজিৎ ঘোষ-সহ হাতেগোনা কয়েকজন। সাহিত্যিক-সাংবাদিক জানালেন, রোজ বেশকিছু তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁদের থেকেই জীবনীশক্তি পান। তাঁর কাছে সমস্যা নিয়ে ছুটে আসেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তিনি যে সবার আস্থাভাজন সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লন্ডনে কাটানো অত্যন্ত সরস মুহূর্তের কথা এদিন উল্লেখ করেন কুণাল ঘোষ। তাঁর কথা শুনে যখন অডিটোরিয়াম হাসিতে ফেটে পড়ছে, তখনই তিনি মাইক তুলে দেন সাংবাদিক-সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। সবমিলিয়ে এদিন দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিলে কুণাল ঘোষের বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান।