ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তাঁদের রাজ্য সরকারি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ফলে রাজ্যের ৩০ হাজারের বেশি পঞ্চায়েত কর্মী (Panchayat Workers) ক্যাসলেস বীমার সুযোগ পাবেন।
চলতি বছরের শেষ রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন পদ সৃষ্টি, নিয়োগ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতি ও বদলি সংক্রান্ত নতুন নীতিতেও অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যের জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানান, এতদিন জেলা পরিষদের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং অধস্তন ও ইঞ্জিনিয়াররা একই জেলায় একই পদে কাজ করতেন। এবার নীতি বদল করে তাঁদের অন্য জেলায় বদলি করার সংস্থান করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁদের কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন করা হবে। মূলত পঞ্চায়েত স্তরে কাজকর্মে আরও স্বচ্ছতা আনতেই এই নীতি বদল। মানস ভুঁইয়া বলেন, কোনো কর্মী বা আধিকারিক দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকলে নানা সমস্যা তৈরি হয়। নীতি বদলের ফলে কাজে স্বচ্ছতার পাশাপাশি গতিও আসবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্য আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক। জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক সিদ্ধান্তে আজ পঞ্চায়েতর ত্রিস্তরীয় কর্মচারী (Panchayat Workers) ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পরিবার ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনা সত্বেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত ইতিহাস রচনা করল। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞচিত্তে জানাই শতকোটি প্রণাম।
আরও পড়ুন- গঙ্গাসাগরে ভিআইপিদের প্রবেশ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বিধানসভায় চা শ্রমিকদের আবাসন প্রকল্প চা সুন্দরীর নিয়মে বদল আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সিদ্ধান্তেও সিলমোহর দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে চা সুন্দরী প্রকল্পে এবার থেকে আর রাজ্য সরকার বাড়ি তৈরি করে দেবেনা। তার বদলে প্রাপকদের জমির পাট্টা দেওয়া হবে। সে সঙ্গে তাঁদের ধাপে ধাপে বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তবে যেসব বাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে তা শেষ করেই উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
বছরের শেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাধিক নতুন নিয়োগের সিদ্ধান্তও অনুমোদন করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মানোন্নয়নে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ৪০ টি নতুন শয্যা তৈরির সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানস বাবু জানান, রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের রূপ দিতে চায়। তাই সেখানে ক্রিটিক্যাল কেয়ারের উপযুক্ত কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি দার্জিলিং পেড্রিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের অধীন সিক নিওন্যাটাল কেয়ার ইউনিটে ২৬ টি পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ টি চিকিৎসক, ২০ টি স্টাফ নার্স ও একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এর পদ সৃষ্টিতে অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। এর ফলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। অন্যদিকে ভূমি দফতরে কর্মী ঘাটতি সামাল দিতে ৪২৭ টি ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। ব্লক স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত চুক্তির ভিত্তিতে এই কর্মীদের নিয়োগ করা হবে। শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নতুন নাম দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন থেকে তাঁরা সৎকার কর্মী হিসাবে পরিচিত হবেন। কলকাতা পুরসভার অধীন বিভিন্ন শ্মশানে এরকম ৯ জন সৎকার কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।