সেঞ্চুরিয়ন: ছত্রিশেই কেন? প্রশ্নটা এবার উঠতে পারে। ডিন এলগার সিরিজের আগে জানিয়েছিলেন, আর নয়। সিরিজ শেষে বুটজোড়া তুলে রাখবেন। বুধবার সুপারস্পোর্ট পার্কে অসাধারণ সেঞ্চুরিতে সেই কথাটাই আবার ফিরিয়ে আনলেন তিনি, যা খেলার মাঠে খুব চলে। সেটা এই যে, বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। ফর্ম থাকলে এই বয়সের চোখরাঙানিকে পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই!
অন্য এক মহাদেশে এমনই এক বিদায়ী সিরিজে সেঞ্চুরিতে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। এখানে এলগার। আলো কমের জন্য যখন খেলা বন্ধ হয়ে গেল, গোটা মাঠের হাততালি সঙ্গে নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন বাঁ হাতি ওপেনার। ১৪০ নট আউট। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ২৫৬-৫। পাঁচ উইকেট হাতে নিয়ে ১১ রানের লিড। তাঁর সঙ্গী মার্কো জেনসেন নট আউট ৩ রানে।
সিরাজ যখন মার্করামকে ফেরালেন, দক্ষিণ আফ্রিকা (India- South Africa) ছিল ১১-১। ঠিক এরকমই একটা ছবি মনে মনে কল্পনা করে রেখেছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। আর সেটা স্বাভাবিক। সুপারস্পোর্ট পার্কের উইকেট প্রথমদিন যে ভেলকি দেখিয়েছে তাতে আফ্রিকানদেরও ভুগতে হবে ধরে নিয়েছিলেন সবাই। ফলে সিরাজের বল মার্করামের ব্যাট ছুঁয়ে রাহুলের হাতে যাওয়ার পর সবাই এবার নড়েচড়ে বসলেন। ভারতের টপ অর্ডার যেমন টপাটপ ভেঙে পড়েছিল, সেরকমই কিছু ঘটতে চলেছে মনে হয়েছিল!
আসলে সেরকম কিছু হয়নি। না হওয়ার কারণ ডিন এলগার। যিনি বরাবর ভারতের বিরুদ্ধে চওড়া প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। নবাগত টনি ডি জর্জিকে (২৮) পাশে নিয়ে ৯৩ রান জুড়েছেন এলগার। কিন্তু আর ৭ রান ওঠার ফাঁকে ফিরে যান কিগান পিটারসেন (২)। বুমরা পরপর দুটি উইকেট তুলে নেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার রান দাঁড়াল ১১৩-৩।
আরও পড়ুন- ক্রীড়ামন্ত্রকের দ্বারস্থ টেনিস ফেডারেশন
মুশকিল হচ্ছে এই উইকেটে রাবাডা ও বার্গার যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছেন, সিরাজ, প্রসিধরা সেটা পারেননি। সিরাজ প্রথম ধাক্কা দেওয়ার পর থেকে আর তেমন কিছু করতে পারেননি। প্রসিধ শুরুতে মার খেলেও পরে নিজেকে সামলে নেন। কিন্তু তাতে কাজের কিছু হয়নি। সেটা হয়নি এলগারের সঙ্গে নতুন মুখ ডেভিড বেডিংহ্যামের ১৩১ রানের পার্টনারশিপের জন্য। আক্রমণাত্মক এলগারের পাশে বেডিংহ্যাম শুরুতে গুটিয়ে থাকলেও পরে তিনিও উইকেটের চারপাশে দেদার শট নিলেন। শেষপর্যন্ত সিরাজের বলে তিনি বোল্ড হয়ে যান ৫৬ রানে।
প্রথমদিন বিরাট ও শ্রেয়সের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর একা লড়ে যান কে এল রাহুল। বুধবারও সিরাজকে (৫) সঙ্গে নিয়ে তিনি যোগ করলেন ৪৭ রান। সিরাজ খুব বেশি রান না করলেও ২২ বল কাটিয়ে গিয়েছেন। এতে রাহুলের সুবিধা হল এটাই যে, তিনি নিজের সেঞ্চুরি (১০১) যেমন তুলে নিতে পেরেছেন, তেমনই ভারতের রানকেও ২৪৫ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। ইনিংসের শেষ ব্যাটার হিসাবে বাঁ হাতি বার্গারকে উইকেট দিয়ে গেলেন রাহুল। ১৩৭ বলের ইনিংসে ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কা রয়েছে রাহুলের।
বৃষ্টিতে বুধবার খেলা শুরু হয় দেরিতে। মেঘলা আকাশ ও কনকনে ঠান্ডায় আগের দিনের দুই নট আউট ব্যাটার রাহুল ও সিরাজ যখন ব্যাট হাতে বাইশ গজে নেমেছিলেন, ভারতের রান ছিল ২০৮-৮। সকালে কঠিন পরিস্থিতিতে এই দু’জন ভারতীয় ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান। রাহুলের এই ইনিংস ছিল ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ফল। তিনি চাপের মুখে যেমন উইকেট আগলে রেখেছিলেন, তেমনই মারের বল পেলে সেই সুযোগ নষ্ট করেননি। রবি শাস্ত্রীর মতো অনেকেই মনে করছেন রাহুলের এটা সেরা টেস্ট সেঞ্চুরি।
দু’বছর আগে এই সেঞ্চুরিয়নে সেঞ্চুরি করেছিলেন রাহুল। সেই ম্যাচে ভারত জিতেছিল। সেই একই জিনিস এবারও ঘটবে কি না তা অবশ্য সময় বলবে। তবে ৯৫ থেকে ছক্কায় সেঞ্চুরিতে পৌঁছনোর পর রাহুল কিন্তু এই ইনিংসকে আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। বার্গারকে বড় শট মারতে গিয়ে তিনি বোল্ড হয়ে যান ১০১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার (India- South Africa) বোলারদের মধ্যে রাবাডা আগেরদিন পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। এদিন তিনি আর কোনও উইকেট পাননি। বার্গার ৫০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে গেলেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন জেনসেন ও কোয়েতজে।