সেঞ্চুরিয়ন: লজ্জার হার! ইনিংস ও ৩২ রানে। একটা জিনিস এতে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩১ বছরের অধরা সিরিজ এবারও অধরাই থেকে যাচ্ছে। দ্বিতীয় টেস্ট জিতে ভারত (India- South Africa) বড়জোর ১-১ করতে পারে, সিরিজ জেতার কোনও সুযোগ থাকল না।
রোহিত শর্মারা দক্ষিণ আফ্রিকায় (India- South Africa) পা দেওয়ার আগে থেকে হাওয়ায় উড়ছিল একটা শব্দ। লাস্ট ফ্রন্টিয়ার! বাংলা করলে হয় শেষ সীমান্ত। ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এই, সর্বত্র জয় করেও ৩১ বছরে এই বাধাটুকু টপকাতে পারেনি ভারতীয় দল। অনেক ঢক্কা-নিনাদ শোনা গিয়েছিল এবার। এটাই নাকি আফ্রিকান সাফারিতে সেরা সুযোগ। যাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের মুখ লুকোতে হল। ১৬৩ রানে পিছিয়ে থেকে ৩৪.১ ওভারে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩১ রানে গুটিয়ে গেল ভারত। প্রথম টেস্ট শেষ হল তিনদিনেরও কম সময়ে।
রোহিত আশ্বাস দিয়েছিলেন, এতদিনের অপেক্ষা শেষে এবার জিতে ফিরতে চান। কিন্তু তিনদিনে একটা দলকেই সব বিভাগে টেক্কা দিতে দেখা গেল। সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা। যে উইকেটে রাবাডা, বার্গাররা যথেচ্ছ সুইং করালেন, গায়ের উপর বল তুললেন, সেখানে বুমরাকে বাদ দিলে কোনও জবাব ছিল না দ্রাবিড়দের। ব্যাটিংয়েও ডিন এলগারের মতো রক্ষণ ও আগ্রাসনের নিখুঁত মিশেল দেখা যায়নি কারও ব্যাটে। এত রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা দলের কাছে যে ক্রিকেট আশা করা গিয়েছিল, তাতে জল ঢাললেন রোহিত (০), যশস্বী (৫), শুভমন (২৬), শ্রেয়সরা (০)। ১৭ ওভারের মধ্যে ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন চরম অস্বস্তিতে।
রাবাডার আউট সুইংয়ে বোল্ড হয়েছেন রোহিত। যশস্বী বার্গারের লাফানো বলে গ্লাভস বাঁচাতে পারেননি। শুভমন ভাল শুরু করেচিলেন। কিন্তু সেট হয়েও উইকেট দিয়ে আসার প্রবণতা তাঁকে ধরে রেখেছে। বাকি থাকলেন শ্রেয়স। তিনিও জানসেনকে উইকেট দিয়ে এলেন। এই যখন অবস্থা, তখন বিরাট আর রাহুলের উপর চাপ ছিল দলকে টেনে তোলার। বিরাট ততক্ষণে ওয়েল সেট। চাপের মুখেও দুর্দান্ত সব শট নিয়েছেন। কিন্তু একদিকে তিনি যখন দুর্গ আগলে রেখেছেন, তখন উল্টোদিকে উইকেট গেল রাহুল (৪), অশ্বিন (০) ও শার্দূলের (২)। শেষ ব্যাটার বিরাট আউট হয়েছেন ৭৬ রানে। চাপের মখে তিনি একাই যা লড়লেন।
আরও পড়ুন- টেট পরীক্ষার্থীদের জন্য নেই, গীতাপাঠকারীদের জন্য আছে
দেড়শোর বেশি রানে এগিয়ে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন তাদের প্রথম ইনিংস ৪০৮ রানে শেষ করল, টেস্টের রাশ অনেকটাই তাদের হাতে। সুপারস্পোর্ট পার্কের উইকেটে রাবাডা, বার্গাররা ভারতের প্রথম ইনিংসে যেভাবে বল করেছেন, তাতে এরকম ভাবাটাই স্বাভাবিক ছিল। এমন উইকেট ও মেঘলা আকাশের কম্বিনেশন রোহিত-বিরাটদের প্রথম দফায় চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। তবু যে ভারত ২৪৫ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল সেটা কে এল রাহুলের জন্য।
এদিন প্রথম ব্যাটার হিসাবে ডিন এলগার যখন ফিরে গেলেন, বোর্ডে রান ৩৬০-৬। মার্কো জেনসেনের (৮৪ নট আউট) সঙ্গে এই জুটিতে এলগার জুড়েছেন ১০৪ রান। তিনি নিজে ১৮৫ রানে আউট হয়ে গেলেন শার্দূল ঠাকুরের বলে কে এল রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। মনে হচ্ছিল ৩৬ বছর বয়সি এই বাঁ হাতি ওপেনার টেস্টে তাঁর দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন। কিন্ত শার্দূলের ধাক্কা সামলাতে পারেননি। এলগারের ২৮৭ বলের ইনিংসে ২৮টি বাউন্ডারি রয়েছে। ১৯ ওভারে ১০১ রানে শার্দূলের এই একটিই উইকেট।
এলগার ফিরে যাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন জানসেন। তাঁর ১৪৭ বলের ইনিংসে রয়েছে ১১টি চার ও ১টি ছক্কা। তিনি নির্বাচকদের নিরাশ করেননি। কিন্তু হতাশ করেছেন ভারতীয় সিমাররা। অনুকূল পরিবেশে বোলাররা সেই চাপ তৈরি করতে পারেননি, যা রাবাডারা পেরেছেন। বুমরা তাও ৬৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ৯১ রানে ২ উইকেট সিরাজের। একটি করে উইকেট নেন শার্দূল, প্রসিধ ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
চোটের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা ব্যাট করতে নামেননি। কিন্তু তিনি এজন্য ফ্যানেদের তোপের মুখে পড়েছেন। ১৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি হয়নি জানসেনের। তিনি অপরাজিত খেকে যান ৮৪ রানে। ফ্যানেদের বক্তব্য, একসময় ভাঙা আঙুল নিয়ে গ্রেম স্মিথ যদি নামতে পারেন, তাহলে বাভুমা নন কেন? এদিকে, ম্যাচে ফিরতে হলে সকালের দু’ঘণ্টায় তাড়াতাড়ি উইকেট নিতে হত ভারতকে। কিন্তু সেটা যে শুধু হয়নি তাই নয়, এই সেশনে ১৩৬ রান তুলে নিয়ে এলগার ও জানসেন ভারতকে আরও বিপদে ফেলে দেন। আফ্রিকান স্ট্র্যাটেজি ছিল বুমরাকে দেখে খেলো আর বাকিদের মারো। শেষদিকে জেরাল্ড কোয়েতজি ১৮ বলে ১৯ রান করে গিয়েছেন। তাঁকে ফিরিয়েছেন অশ্বিন।