প্রতিবেদন : আইন দেশের মানুষের ভালর জন্য হওয়া উচিত। আইন কোনওদিন নিপীড়নের মাধ্যম হওয়া উচিত নয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে বিল এনেছে তার তীব্র প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। দেশের মানুষের উপর নিপীড়ন হয়ে উঠবে এই আইন (Criminal Law Bill)। কায়েম হতে পারে পুলিশি রাজ। এই স্বৈরাচারী কালো আইনের মধ্যে যদি কোনও পথ দুর্ঘটনা হয়ে কারও মৃত্যু হয় তাহলে ট্রাক ড্রাইভারদের ১০ বছর জেল ও ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। তার জন্যই দেশ জুড়ে ট্রাক চালকরা পথ অবরোধ করছেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতেও। ট্রাক চালকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ব্যাপক গণ্ডগোল উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে আরও খারাপ হতে পারে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্যাপক গণ্ডগোলের খবর আসছে। ধর্মঘট সামলাতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি চালিয়েছেন যোগীর পুলিশ৷
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দুদিনে ‘ভারতীয় দণ্ডবিধি’ সংশোধন করে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ আইন (Criminal Law Bill) নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সংহতি ১০৪ (২) ধারায় পথ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত নয়া বিধানের সংযোজন করেছে কেন্দ্র৷ সেখানে বলা হয়েছে, গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত চালক নিজে পুলিশকে ফোন করে সেই কথা জানাবে৷ তা না-করে চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে, তার বিরুদ্ধে ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় অভিযোগ দায়ের হবে৷ সেক্ষেত্রে চালকের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে৷ বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে কলকাতাতেও। সিজিআর রোড আটকে রাখেন ট্রাক ও লরি চালকেরা। পরে বন্দর এলাকার রামনগর মোড়, অ্যাসবেস্টস মোড়, হাইড রোড, সিক লেনেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মতলা বা হেস্টিংসের দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকে খিদিরপুর ও ডায়মন্ড হারবার রোডের সংযোগস্থল থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, গার্ডেনরিচের দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকে ঘোরানো হয় ব্রেস ব্রিজ দিয়ে। এর ফলে সকাল থেকে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের বামনগাছিতেও চলে ট্রাক ও লরি চালকদের সমর্থনে প্রতিবাদ। এখানে রাস্তায় নামেন ম্যাটাডোর চালকেরা। সকাল ১০টায় যশোর রোডে বামনগাছি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মিনি ট্রাক ড্রাইভার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। অবিলম্বে কেন্দ্রের কালা আইন বাতিল করতে হবে বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে এক ঘণ্টা পর অবরোধ ওঠে। এই ঘটনায় অফিস টাইমে খাস কলকাতা অবরুদ্ধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। লরি ও ট্রাক চালকেরা বলছেন কেন্দ্রের বর্তমান পরিবহণ নীতির পরিবর্তন না হলে তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে এতটুকু সরবেন না।