প্রতিবেদন : নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। এবার দেশের নির্বাচন কমিশনার (Election Commissioner) নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল শীর্ষ আদালতেও। কেন্দ্রীয় সরকারের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে প্রধান বিচারপতিকে ছেঁটে ফেলে সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করার সংস্থান রাখা হয়েছে। বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে বিজেপির এই কৌশলে এখন থেকে কমিশনার নিয়োগ কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সরকারের দ্বিতীয় প্রতিনিধি থাকবেন। তিন সদস্যের কমিটিতে বিরোধী দলনেতা থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে সরকারের মতই প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ নতুন আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশনার (Election Commissioner) নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকছেন সরকারের প্রতিনিধিরাই। এই ঘটনায় মোদি সরকারের নির্লজ্জ পক্ষপাতদুষ্ট কৌশল কার্যত বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। এতদিন যে কমিটিতে দেশের প্রধান বিচারপতি থাকতেন এখন থেকে সেখানে থাকবেন সরকারের প্রতিনিধি। ফলে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। গত শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভাকে বিরোধীশূন্য করে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় তড়িঘড়ি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্র। সব মহলের আপত্তি উড়িয়ে লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এবার এই ইস্যুতেই কেন্দ্রকে নোটিশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হল প্রধান বিচারপতিকে, সেই ব্যাখ্যা চাওয়া হল মোদি সরকারের থেকে।
আরও পড়ুন- স্বামীজি বুঝি এই ভারত চেয়েছিলেন!
গত বছর মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে মন্ত্রিসভার হাতে থাকবে না। এদের নিয়োগ করবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং প্রধান বিচারপতির যৌথ কমিটি। এই কমিটির সুপারিশ মেনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরই তড়িঘড়ি যেভাবে সংসদে নতুন বিল পাশ করানো হল তা থেকে কেন্দ্রের মরিয়া মনোভাব স্পষ্ট। নির্লজ্জভাবে শীতকালীন অধিবেশনে পাল্টা বিল এনে শীর্ষ আদালতের রায়কে অকেজো করে দেয় কেন্দ্র। যে বিল পাশ করানো হয় সেখানে বলা হয়, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ করা মন্ত্রিসভার এক সদস্য। অর্থাৎ ৩ সদস্যের কমিটির দুই সদস্যই হবেন সরকারি প্রতিনিধি। নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার পদে বসাতে রাস্তা সংসদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক্ষেত্রে নিজেদের পথ পরিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রের এই নয়া আইনের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুরের করা মামলায় দাবি করা হয়, এই আইন বিচারবিভাগের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করছে। তাই আইনটিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ না দিলেও এই আইনের ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রকে নোটিশ পাঠিয়েছে।